ফেসবুক-কাণ্ডে তৃণমূল শিক্ষা সেলের সদস্য কাজল গোস্বামীকে মারধরের ঘটনার দায় তাঁর নয় বলে দাবি করলেন রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী। বৃহস্পতিবার মালদহের জেলা ক্রীড়া সংস্থার ময়দানে একটি খেলার অনুষ্ঠানে যোগ গিয়ে ওই দাবি করেন।
তাঁর কথায়, “আমি ট্রেনে করে কোথাও যাচ্ছি। সেই সময়ে ট্রেনে কোনও ঘটনা ঘটলে তার দায় কী আমার হবে? ওই ঘটনা কি আমার নির্দেশে হয়েছে? এর বেশি আমি কিছু বলব না।” তবে কাজলবাবুর পরিজনের দাবি, তাঁর সামনে যে ওই মারধরের ঘটনা ঘটেছে সেটাও এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্বীকার করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী।
তা হলে নিগৃহীত কাজলবাবু কেন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে গালিগালাজ, হুমকি দেওয়া ও মারধরের অভিযোগ তুলেছেন? যদি কাজলবাবুর অভিযোগ মিথ্যে হয় তা হলে তিনি কী পাল্টা অভিযোগ করবেন? জবাবে মন্ত্রী বলেন, “সেটা সময়ই বলবে।’’
ইংরেজবাজার পুরসভার ১০ নম্বর ওর্য়াডের কালিতলার বাসিন্দা তথা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক কাজলবাবু ও তাঁর পরিবারের লোকেরা আতঙ্কে ঘরছাড়া রয়েছেন। এদিনও তিনি ইংরেজবাজার শহরের একটি বাড়িতে সপরিবারের আত্মগোপন করে রয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার শরীর খুব অসুস্থ। মাথায় ও শরীরের নানা জায়গায় যন্ত্রণা রয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছি না। কারণ, কৃষ্ণেন্দুবাবুর লোকজন আচমকা হামলা করতে পারে। অসুস্থহওয়া সত্ত্বেও বাড়িতে রয়েছি। পুলিশের কাছেও যেতে পারিনি। আমার অপরাধ কি? রাজ্যের মন্ত্রীর উপস্থিতিতে তাঁর লোকজন আমাকে মারল কেন বুঝতে পারছি না।
কাজলবাবুর স্ত্রী ভেঙে পড়েছেন। তিনি বলেন, “ওঁকে দেখে আমারই কষ্ট হচ্ছে। হাসপাতালে নিতে পারছি না। পুলিশে অভিযোগ করতে পারছি না। প্রাণভয়ে নিজের ঘরদোর ছেড়ে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।”
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ মালদহ টাউন স্টেশনে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনকে ছাড়তে যান কাজলবাবু। গৌড় এক্সপ্রেসে সভাপতিকে ট্রেনে উঠিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তাঁর সঙ্গে দেখা হয় কৃষ্ণেন্দুবাবুর। মন্ত্রী তাঁকে ডেকে পাঠান। কাজলবাবুর দাবি, “মন্ত্রী আমাকে ডেকে ফেসবুকে তাঁর নামে কি লিখেছি তা নিয়ে জানতে চেয়ে গালি দেন। আমি জানাই, এক বন্ধু একটি সংবাদপত্রের খবরের অংশ ট্যাগ করেছেন। অভিযোগ, তাঁর এলাকার একজনের ‘এতটা সাহস’ কী ভাবে হল সেই প্রশ্নেই স্টেশনে ক্ষোভ প্রকাশ করে গালি দেন মন্ত্রী। কাজলবাবুর অভিযোগ, “আমি বোঝানোর চেষ্টা করি সংবাদটি কেউ আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘ট্যাগ’ করেছে। ছবি যে কেউ ট্যাগ করতে পারে। কিন্তু, উনি মারধরের হুমকি দেন। তখনই মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা ৮-১০ জন আমাকে ঘিরে বেধড়ক মারে। রাস্তায় ফেলেও পেটায় তারা। তার পরে আমাকে স্থানীয়েরা হাসপাতালে নিয়ে যান। এর পরেই আমার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকেদের হুমকি দেয় যে অভিযোগ করলে বাড়ি ছাড়া করবে। আমি স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে আতঙ্কে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। ভয়ে থানায় যেতে পারছি না। আমি পুরো ঘটনাটি মোয়াজ্জেম হোসেনকে জানিয়েছি।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি বলেন, “ঘটনাটি নিয়ে দলের কর্মীরা আমার কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। আমি ঘটনাটি রাজ্য নেতাদের জানিয়েছি। তাঁরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
এবিপিটি-এ জেলা সম্পাদক তুষার রায় বলেন, “এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। মত প্রকাশের অধিকার সকলেরই আছে।” তৃণমূলের শিক্ষা সেলের জেলা সভাপতি স্বপন মন্ডল। তিনি বলেন, “এমন ঘটনা কখনও কাম্য নয়। আমরা ধিক্কার জানাচ্ছি। আমি ঘটনার কথা রাজ্য নেতৃত্বদের জানিয়েছি। তারা দেখার তারা কি সিদ্ধান্ত নেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy