ধর্ষণের চেষ্টায় অভিযুক্ত ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দলীয় স্তরে তদন্ত শুরু করল জেলা নেতৃত্ব। তবে অভিযুক্তরা এখনও অধরাই।
শুক্রবার কলকাতা থেকে কোচবিহারে ফিরে শীতলখুচির পঞ্চারহাটের ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। এর পরেই তিনি দলের শীতলখুচি ব্লক সভাপতি আবেদ আলি মিয়াঁকে ঘটনা খতিয়ে দেখে লিখিত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “ব্লক নেতৃত্বকে লিখিত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলেছি। ওই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর দলীয় স্তরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হলদিবাড়ির ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনার ক্ষেত্রেও আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এই ধরণের ঘটনা আমরা বরদাস্ত করব না।”
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সওয়াল করেছেন শীতলখুচির তৃণমূল বিধায়ক হিতেন বর্মনও। তিনি পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “অনেক ঘটনার ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করছি, পুলিশ দাবি করছে অভিযোগ করলেই কেউ দোষী নন। তদন্ত করার পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হবে। সেক্ষেত্রে অভিযুক্তরা সুযোগ পেয়ে যান। তারা আরও অপরাধমূলক ঘটনা ঘটানোর সাহস পান। পঞ্চারহাটে যে অভিযোগ উঠেছে তা গুরুতর। আমি চাই পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিক।” পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা সকলেই পলাতক। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। আশা করছি দ্রুত গ্রেফতার হবে।”
মাস ছয়েক আগে পঞ্চারহাটের এক বধূ অভিযোগ করেন, একা পেয়ে প্রকাশ বর্মন নামে এক প্রতিবেশী তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে পুলিশে অভিযোগ জানান। প্রকাশ ছোট শালবাড়ি অঞ্চল তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি উত্তমবাবুর ভাই। অভিযোগ, সে কারণেই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেনি। গত মঙ্গলবার মাথাভাঙায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় যাওয়ার জন্য পঞ্চারহাটে তৃণমূল কর্মীরা জড়ো হন। সেখানে প্রকাশও ছিল। পুলিশের টহলদারি ভ্যান সেখানে গেলে অভিযোগকারিণী প্রকাশকে দেখিয়ে দেন। পুলিশ প্রকাশকে গ্রেফতার করলে উত্তমবাবুর নেতৃত্বে তৃণমুল কর্মীরা পুলিশের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। প্রকাশকে ছিনিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি পুলিশ কর্মীদের মারধর এবং জিপ ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় পুলিশ ঊত্তমবাবু সহ তৃণমূলের একাধিক কর্মীর নামে মামলা রুজু করে। যদিও তাঁদের কাউকেই এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। ওই ঘটনার পরে বুধবার ফের ওই তৃণমূল কর্মীরা অভিযোগকারিণী এবং তাঁর স্বামীকে মারধর করে বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব।
যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেছে, এমন অভিযোগ ওঠার পর ওই নেতা-কর্মীদের পাশে দলের কেউই নেই। দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথবাবু ওই ব্যাপারে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। পুলিশ দাবি করেছে, তাঁরা অভিযুক্তদের গ্রেফতারের কোনও চেষ্টাই বাকি রাখেননি। শীতলখুচি থানা থেকে ওই এলাকায় যেতে প্রায় দেড় ঘণ্টা দূরত্বের রাস্তা পার করতে হয়। পুলিশ যাওয়ার আগেই অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এলাকার বাসিন্দারাও জানিয়েছেন, গত দুদিন অভিযুক্তদের এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। তৃণমূলের শীতলখুচি ব্লক সভাপতি আবেদ আলি মিয়াঁ বলেন, “জেলা নেতৃত্বের নির্দেশ মতো লিখিত রিপোর্ট জমা দেব। দলীয় স্তরে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”