Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
দুর্নীতি-কাণ্ডে রেজিস্ট্রার

শিলিগুড়ি ফিরেই পরপর বৈঠকে উপাচার্য

‘বাধা-বিঘ্ন’ কেটে গিয়েছে। এ বার ‘স্বচ্ছ প্রশাসন’-এর দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে আর্থিক দুর্নীতিতে দোষী সাব্যস্ত রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকারের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে জোরকদমে আসরে নেমে পড়লেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, কলকাতায় কাজে গেলেও মঙ্গলবারই দুপুরের বিমানে ফিরেছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ। এবং ফিরেই কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকার। ফাইল চিত্র।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকার। ফাইল চিত্র।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:২৮
Share: Save:

‘বাধা-বিঘ্ন’ কেটে গিয়েছে। এ বার ‘স্বচ্ছ প্রশাসন’-এর দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে আর্থিক দুর্নীতিতে দোষী সাব্যস্ত রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকারের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে জোরকদমে আসরে নেমে পড়লেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, কলকাতায় কাজে গেলেও মঙ্গলবারই দুপুরের বিমানে ফিরেছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ। এবং ফিরেই কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন তিনি। কারণ, সরকারি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই উপাচার্যের কাছে বার্তা পৌঁছে গিয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়কে দুর্নীতি মুক্ত করতে কেউ যেন বাধা না হয়। উপাচার্য অবশ্য বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ দিনের ঘটনাপ্রবাহ বলছে, উপাচার্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কর্মসমিতির বৈঠক মসৃণ ভাবে সম্পূর্ণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিভাগের অফিসারদের ডেকে বৈঠক করেন। সেখানে অর্থ বিভাগের অফিসাররা ছিলেন। এর পরেই কর্মসমিতির প্রভাবশালী সদস্য তথা উত্তরবঙ্গ অধ্যক্ষ পরিষদের সম্পাদক দেবকুমার মুখোপাধ্যায়কে দেখা যায় উপাচার্য়ের ঘরে ঢুকতে। দীর্ঘ সময় দুজনের বৈঠক হয়। সে সময়ে একাধিক অফিসারকে কয়েক দফায় ডেকে পাঠানো হয়। ওই সময় ‘টেলি কনফারেন্স’-এর মাধ্যমে কর্মসমিতির একাধিক সদস্যকে আগামী ২১ জানুয়ারির বৈঠকের বাড়তি তাৎপর্য ও গুরুত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়। যদিও দেবকুমারবাবু বলেছেন, ‘‘একটা কাজে গিয়েছিলাম। তখন উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করলে অনেক কথাই হয়েছে। তার সবটা বলা সম্ভব নয়।’’

কর্মসমিতির একাধিক সদস্য একান্তে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, আগামী বৈঠকে বিভাগীয় তদন্তে দোষী সাব্যস্ত রেজিস্ট্রারের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কর্মসমিতির এক সদস্য এ-ও অভিযোগ করেন, নানা মহলের চাপে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি হচ্ছিল। এমনকী, শাসক ও বিরোধী দল বামেদের একাংশ নানা সময়ে প্রভাবশালীদের কাছে তদ্বির করায় পুরো বিষয়টি ঝুলে যাচ্ছিল বলেও কর্মসমিতির প্রাক্তন ও বর্তমান কয়েক জন সদস্য অভিযোগ করেন। কর্মসমিতির এক প্রাক্তন সদস্য জানান, অতীতে দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে পুলিশ চার্জশিট দিতে গড়িমসি করেছিল দীর্ঘদিন। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে বিষয়টি জানতে পেরে উদ্যোগী হয়ে পুলিশকে সাত দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে বাধ্য করেছিলেন। কর্মসমিতির একাধিক প্রাক্তন সদস্য জানান, আগামী কর্মসমিতির বৈঠকের দিন মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়িতেই থাকবেন— এ কথা জানার পরে এ বার আর কেউ প্রক্রিয়াটি ভেস্তে দিতে সাহস পাবে না।

বস্তুত, বাম আমলে, ২০০৮ সালে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, অনেকেই এ বার তার হেস্তনেস্ত চাইছেন। অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বিভাগের প্রায় দেড় কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে। অভিযোগের তির যায় তৎকালীন নিয়ামক দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে। যিনি পরে রেজিস্ট্রার হন। বিভাগীয় তদন্তে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। দিলীপবাবু বর্তমানে সাসপেন্ড হয়ে রয়েছেন। যদিও তিনি গোড়া থেকে বরাবরই নিজেকে পুরোপুরি নির্দোষ বলে দাবি করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE