এখনও পুলিশ কমিশনারেট নিয়ে প্রশ্ন
‘আমার শহর’ বিভাগটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী বলে মনে হচ্ছে। কারণ, উত্তর পূর্ব ভারতের মধ্যে অবস্থানগত ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ যে কটি শহর রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল শিলিগুড়ি। যা কি না আমাদের প্রাণের শহর। নানা সময়ে শহরের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের ব্যাপারে লেখা পড়ছি ওই বিভাগে। অনেক সময়ে নেতা-কর্তা-আমলাদের নজরে পড়ার সুবাদে সমস্যার সমাধানও হচ্ছে। অনেক সময়ে হচ্ছে না। সে জন্যই কিছু বিষয়ের কথা উল্লেখ করতে চিঠি লিখছি।
প্রথমত, শিলিগুড়িতে পুলিশ কমিশনারেট গঠন করার পরে প্রায় ৪ বছর হতে চললেও তা সামগ্রিক চেহারা পায়নি। বিধি অনুযায়ী, কোনও এলাকা পুলিশ কমিশনারেট হলে সেখানে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত হওয়া বাধ্যতামূলক। যেমন, কলকাতায় রয়েছে। শিলিগুড়িতেও তা হওয়ার কথা। যতদূর জানি, সে জন্য উচ্চ আদালতের তরফে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করা হয়। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও তা নিয়ে নানা সময়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। অথচ অজানা কারণে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী, যতদিন না মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-এর আদালত না হচ্ছে, ততদিন ভক্তিনগর ও লাগোয়া এলাকার মামলা নিকর্টবর্তী আদালতে স্থানান্তর হওয়া দরকার। সেটাও হয়নি।
ফলে, পুলিশ কমিশনারেটের আওতায় থেকেও ভক্তিনগর থানা এলাকার বাসিন্দাদের মামলার জন্য জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে যাতায়াত করতে হচ্ছে। শালুগাড়া, ডাবগ্রাম, আশিঘর, ঘোড়া মোড়, ফুলবাড়ির মতো বাইপাস সন্নিহিত এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে শিলিগুড়িতে আদালতে যাতায়াত অনেক সহজ। সেই সঙ্গে খরচও সামান্য। কিন্তু, জলপাইগুড়িতে যাতায়াত সময় সাপেক্ষ ও বেশি খরচ হয়ে থাকে। শিলিগুড়ি লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা ইতিমদ্যেই দলে দলে সই-সাবুদ করে দ্রুত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত তৈরি করাতে হবে। তা না হওয়া অবদি শিলিগুড়ির আদালতে যাতে ভক্তিনগর থানা এলাকার মামলা স্থানান্তরিত হয় সেই ব্যবস্থা রাজ্য সরকারকে করাতে হবে। আশা করব, বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের স্বার্থে শিলিগুড়ির শাসক দলের জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি নিয়ে ভেবে সুচিন্তিত পদক্ষেপ করবেন।
দ্বিতীয়ত, শহরের উপকণ্ঠে ডাম্পিং গ্রাউন্ড সরানো নিয়ে প্রতিশ্রুতির বন্যা বন্ধ করা দরকার। বছরের পর বছর ধরে আমরা শুনচি, ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ড সরানো হবে। বাম আমলেও হয়নি। তৃণমূলের সময়েও তা হল কোথায়? দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের সমস্যার সমাধান না হলে আখেরে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে জবাবদিহি করতে হবে নেতা-কর্তাদের অনেককেই।
তৃতীয়ত, শিলিগুড়ির ‘লাইফ-লাইন’ মহানন্দাকে বাঁচাতে হবে। অতীতে মহানন্দাকে বাঁচানোর নামে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে বাসিন্দারা শুনেছেন। কিন্তু, মহানন্দার চেহারা পাল্টায়নি। মহানন্দার দূষণ রোধের কাজ যাঁরা করিয়েছেন কিংবা করেছেন বলে শোনা যায়, তাঁদের একাংশের সম্পদের বহর বেড়েছে বলেও অভিযোগ ওড়ে শহরের বাতাসে। কয়েকটি মামলাও হয়েছে শুনেছি। কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছেন বলে জানা যায়। নদীর দূষণ রোধের টাকা আত্মসাৎ হয়েছে কি হয়নি সেটা আদালত বিচার করবে। শহরবাসী হিসেবে আমাদের প্রশ্ন, মহানন্দার দূষণ রোধ করার ক্ষমতা কী এখনকার নেতা-মন্ত্রীদেরও নেই? যদি থাকে তা হলে যত দ্রুত সম্ভব মহানন্দায় প্রাতঃকৃত্য করা বন্ধ করতে নদীর ধীরে একাধিক সাইনবোর্ড টাঙানো হোক। জরিমানা চালু হোক। একদিনে কাজের কাজ হয়তো হবে না। কিন্তু, বোর্ড টাঙালে, জরিমানা চালু হলে ধীরে ধীরে বন্ধ হবে। নদীখাত বাড়াতে ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা হোক। একটাই অনুরোধ, নদী দূষণ রোধের নামে, মাটি কাটার নামে ফের যেন কোটি কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ না ওঠে সে দিকে নেতা-কর্তা-আমলাদের খেয়াল রাখতে হবে।
রতন বণিক, আইনজীবী, হাকিমপাড়া, শিলিগুড়ি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy