কলেজের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল টিএমসিপির দুই নেতার বিরুদ্ধে। গত সোমবার বিকেলে জলপাইগুড়ির আনন্দচন্দ্র (এসি) কলেজে ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার বিকেলে নিগৃহীতা ছাত্রী জলপাইগুড়ির কোতোয়ালি থানার মহিলা সেলে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করেছেন। নিগৃহীতা ছাত্রী নিজেও টিএমসিপির সমর্থক বলে দাবি করেছেন। অভিযুক্ত একজন টিএমসিপির দখলে থাকা কলেজের ছাত্র সংসদের সহ সভাপতি এবং অন্যজন ছাত্র সংসদের শ্রেণি প্রতিনিধি। থানায় অভিযোগ দায়ের হলেও, নিগৃহীতা ছাত্রী তাদের কিছু জানায়নি বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন।
গত সোমবার থেকেই এসি কলেজে ৫ দিনের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ অনুষ্ঠান দেখে এক বান্ধবীর সঙ্গে ফেরার সময়ে ছাত্র সংসদের সহ সভাপতি শুভজিত্ রায় এবং সিআর সৌরভ সরকার মদ্যপ অবস্থায় ছাত্রীকে অন্ধকারে ডেকে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। এর আগেও শুভজিত্ তাঁকে একাধিকবার প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছেন। ছাত্রীর দাবি, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলে ভর্তির সুযোগ মিলবে না বলে আশঙ্কায় সহ সভাপতির সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখতে রাখতে তিনি বাধ্য হন। সম্প্রতি তিনি যোগাযোগ রাখবেন না বলে জানিয়ে দিলে নিয়মিত তাঁকে ফোনে হুমকি দেওয়া শুরু হয় বলে অভিযোগ। সোমবার অন্ধকারে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁর হাত ধরে টানাটানি করা হয় বলে অভিযোগ করে নিগৃহীতা ছাত্রীটি এ দিন বলেন, “কোনমতে ওখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে রয়েছি। রাতে ঘুম আসছে না। কী করব ভেবে উঠতে পারছিলাম না। তাই অধ্যক্ষকে কিছু জানাইনি। বাড়িতেও কিছু বলিনি। পুলিশকে জানালাম। দেখি কী হয়।”
জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার মহিলা সেলের ওসি কে এল শেরপা বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।” কলেজের অধ্যক্ষ ধীরাজ বসাক বলেন, “ছাত্রীটি আমাকে কেন জানাল না বুঝতে পারছি না। ফোনেও জানানো যেত।”
যদিও অভিযুক্ত টিএমসিপি নেতাদের দাবি, নিগৃহীতা ছাত্রীর সঙ্গে তাঁদের ভাল সম্পর্ক থাকলেও, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে চক্রান্ত করে এমন অভিযোগ তোলা হচ্ছে। শুভজিত্ এবং সৌরভ দু’জনেই পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “সামনে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হওয়ার কথা। বর্তমান ছাত্র সংসদের সাফল্য দেখে আতঙ্কিত হয়ে বদনাম করার জন্য বাইরে থেকে ছাত্রীকে উস্কে পুলিশের কাছে মিথ্যা অভিযোগ জানানো হয়েছে।” যদিও কে বা কারা উস্কানি দিয়েছে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু না বলে শুভজিত্ বলেন, “কেন ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করব। ও আমার ভাল বন্ধু।”
তদন্ত দাবি করে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি করেছে এসএফআই। সংগঠনের রাজ্য কমিটির সদস্য প্রদীপ দে বলেন, “ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার কলেজ অধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। পুলিশের কাছেও অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হবে।” চাপে পড়ে ঘটনার তদন্ত নিয়ে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদ। ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ সরকার বলেন, “ছাত্রীটিও আমাদের সমর্থক। ঘটনাটি শুনে অবাক হয়েছি। খোঁজ নিয়ে জেনেছি শ্লীলতাহানির চেষ্টার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। তবু সবদিক খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।” কমিটির রিপোর্টের আগেই সাধারণ সম্পাদক বিবৃতি দিয়ে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে বলে দাবি করায় তদন্ত কমিটি গঠনের যৌক্তিকতা ননিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী সংগঠনগুলি। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অভিজিত্ সিংহ বলেন, “সাংগঠনিক স্তরে ঘটনার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy