শিলিগুড়ির সেন্ট্রাল কলোনির পুজোয় ভিড়।
তিন দিন আগেও কয়েক পশলা বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া বয়েছে উত্তরের আকাশে। দক্ষিণবঙ্গ থেকেও বৃষ্টির খবর মিলেছে। এই অবস্থায় আকাশ ঝলমলে পরিষ্কার থাকায় মঙ্গলবার, ষষ্ঠীর সন্ধ্যা থেকে মানুষের ঢল নেমে পড়ল রাস্তায়। শিলিগুড়ি থেকে বালুরঘাট, মালদহ থেকে কোচবিহার সর্বত্রই একই ছবি ধরা পড়েছেন।
এদিন আর সময় নষ্ট করতে চাননি শিলিগুড়িবাসী। আগামী চারদিকের আবহাওয়ার আশঙ্কাকে দূরে সরিয়ে রেখে সন্ধ্যা হতেই মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরেছেন মানুষ। রথখোলা স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠ থেকে রবীন্দ্র সঙ্ঘ, সুভাষপল্লির সঙ্ঘশ্রী, হায়দরপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল দেখার মতো। রাত ১০টায় দেশবন্ধুপাড়ার দাদাভাই স্পোর্টিং ক্লাব, সুব্রত সঙ্ঘ, বিদ্যাসাগর ক্লাব, তরুণ তীর্থ, শক্তি সোপান ও ইয়ং মেন অ্যাসোসিয়েশনের মণ্ডপে ভিড় ছিল। গাড়ি, বাইক, রিকশা করেও বাসিন্দারা মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরেন। গভীর রাত অবধি ভিড় ছিল শক্তিগড়ের উজ্জ্বল সঙ্ঘ, পাঠাগার ক্লাব, মিলনপল্লির রেনেসাঁ ক্লাব, মিলনপল্লি সবর্জনীনের পুজোয়।
শহরের অপরপ্রান্তের চম্পাসারির জাতীয় শক্তি সঙ্ঘ ও পাঠাগার, স্বস্তিকা যুবক সঙ্ঘের পুজোও এদিন দেখে নেন বহু শহরবাসী। জাতীয় তরুণ সঙ্ঘ, অগ্রগামী সঙ্ঘ, উপকার অ্যাথলেটিক, সারদা সেবক সঙ্ঘ, অরবিন্দ যুবক সঙ্ঘ, অরবিন্দ ইন্টার ইউনিয়ন, সূর্যনগর ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন, অরবিন্দ স্পোর্টিং ক্লাব, দক্ষিণ ভারতনগর অ্যাথলেটিক ক্লাব বা অগ্রণী সঙ্ঘের মণ্ডপেও ভিড় হয়। পুজোর দেখার সঙ্গে সঙ্গে এদিনও রাত অবধি বহু বাসিন্দারা পুজোর বাজারও করেন। বড় রাস্তাগুলির দুই ধারে এদিন থেকে ফুটপাতের খাবারের দোকানের স্টলও চোখে পড়েছে। শহরের একটু বাইরে ফুলবাড়ি, তিনবাত্তি, শান্তিনগর, নকশালবাড়ি অগ্রদূত সঙ্ঘ, মাটিগাড়ার মায়াদেবী ক্লাবগুলির পুজোতেও গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দারা ভিড় করে ঠাকুর দেখেন।
সপ্তমী থেকে শিলিগুড়ি পুলিশ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কর্মসূচি নিলেও ষষ্ঠীর সন্ধ্যা থেকে ট্রাফিক পুলিশের কর্মীদের রাস্তায় নেমে ভিড় সামলাতে হিমসিম খেতে হয়েছে। একই ছবি জলপাইগুড়ির। শহরের ডিবিসি রোড, দিনবাজার এলাকায় মানুষের ঢল ছিল সন্ধ্যা থেকেই। প্রতিটি রাস্তাতেই যানজট তৈরি হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল দিশারি ক্লাব, সমাজপাড়া, তরুণ দল, আরজি পার্টি, পাণ্ডাপাড়া পুজোর মণ্ডপে। শহরতলির পুজোগুলোর মধ্যে পাতকাটা এলাকার সমস্ত মণ্ডপে ভিড় উপচে পড়েছে। ময়নাগুড়ি ধূপগুড়িতেও ষষ্ঠীর দিকেই পুজো দেখার আগ্রহ ছিল মানুষের মধ্যে।
এদিন সন্ধ্যা থেকেই দক্ষিণ দিনাজপুরেও দর্শনার্থীদের ঢল ছিল। বালুরঘাটের অভিযাত্রী, কচিকলা, উত্তমাশা, সৃজনী, আর্যসমিতি, চৌরঙ্গি, প্রগতি, কবিতীর্থ, বিংশ শতাব্দী, যুব সঙ্ঘ, খেয়ালি ক্লাবের থেকে গঙ্গারামপুরের চিত্তরঞ্জন স্পোর্টিং, ইয়ুথ ক্লাব, কালীতলা, হালদারপাড়া সর্বজনীন পুজো মন্ডপে ভিড় সামলাতে নাজেহাল হয় পুলিশ। হিলির বিপ্লবী, যজ্ঞতলা ও সীমান্ত শিখা ক্লাবের মন্ডপেও ছিল ভিড়।
কোচবিহারের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা বাসিন্দাদের অনেকেই এদিন যানবাহন নিয়ে যাতায়াতের ‘ছাড়ে’র সুযোগ নেন। সন্ধ্যার পর শহর ও লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারাও সপরিবারে পুজো দেখেন। কোচবিহার শহরের বড়দেবী পুজোকে ঘিরে বাসিন্দাদের বাড়তি উৎসাহ ছিল। কল্যাণ সঙ্ঘ, শান্তিকুটীর ক্লাব ও ব্যায়ামাগার, ভেনাস স্কোয়ার, এসিডিসি, দুর্গাবাড়ি, চালতাতলা, লীলা স্মৃতি ভবানী মন্দির, ভারত ক্লাব ও ব্যায়ামাগার, পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়ার পুজো ঘিরেও প্রায় এক ছবি দেখা গিয়েছে। নিষিদ্ধপল্লি পুজোতেও বহু দর্শনার্থী প্রতিমা দর্শনে যান।
জলপাইগুড়িতে আলোর চাঁদোয়ার নীচ দিয়ে মণ্ডপমুখী প্রতিমা।
দিনহাটার মহামায়াপাটের প্রতিমা, সাহেবগঞ্জ রোড নাট্য সংস্থার আলোর তাজমহল ও পাটকাঠি, কাঠের গুড়োর কারুকাজ শোভিত চামুন্ডেশ্বরী মন্দিরের আদলে মন্ডপসজ্জা, থানাপাড়া, ডাকবাংলো পাড়া, শহিদ কর্নার প্রভৃতি মন্ডপে বেশি ভিড় ছিল। তুফানগঞ্জ, মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জে একই ছবি। এদিন মহিলা পরিচালিত শহরের শিক্ষকপল্লি পুজো কমিটি, নাটাবাড়ির হাসপাতাল চৌপথী পুজো কমিটির মন্ডপের উদ্বোধন করেন রাজ্যের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
আলিপুরদুয়ারের রাস্তায় উপচে পড়ল জনজোয়ার এদিন সন্ধ্যা থেকেই। হোয়াইট হাউস, আলিপুরদুয়ার দুর্গা বাড়ি সর্বত্র ভিড় জমান খুদে থেকে বয়স্করা। সন্ধ্যায় আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশের তরফে প্রকাশ করা হয় পুজোর গাইড ম্যাপ। রায়গঞ্জে রাতের দিকে মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় বাড়তে থাকে। রাত সাড়ে আটটার পর থেকে অমর সুব্রত, শাস্ত্রী সঙ্ঘ, সুদর্শনপুর, বিদ্রোহী ক্লাব, ভারত সেবক সঙ্ঘে ভিড় উপচে পড়ে। ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। অনেকই এদিনও পুজোর শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা সারতে বাজারে যান।
মালদহের শান্তিভারতী পরিষদের বজরংবলীর মন্দির থেকে শুরু করে অনীক সঙ্ঘের দিল্লির সংসদ ভবনের আদলে মন্ডপ ষষ্ঠীর দিনই বাসিন্দাদের মন কাড়ে। বিবেকানন্দ ক্রীড়া চক্র, প্রবালপল্লির শিবাজী সঙ্ঘের চাঁদ সওদাগরেরে সপ্তডিঙি দেখতে দশর্নার্থীদের ভিড় সামাল দিতে পুলিশের হিমসিম খেতে হয়েছে। বিকেল চারটে থেকে রাত একটা পযর্ন্ত মালদহ শহরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে পুলিশকে।
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক ও সন্দীপ পাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy