Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সংগঠনের নেতাদের বদলি নিয়ে তর্ক এনবিএসটিসি-তে

বাম আমলে সাধারণত এনবিএসটিসি-র নানা সংগঠনের নেতাদের বদলি করা হতো না। সেটাই ছিল প্রথা। তৃণমূল জমানায় সেই প্রথাকে পাকাপোক্ত করতে সরকারি সিলমোহর দিলেন সংস্থার চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। মঙ্গলবার এনবিএসটিসি-র বোর্ড মিটিঙের পরে উত্তরকন্যায় সাংবাদিক বৈঠকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “এনবিএসটিসি-র এতদিন কোনও সুষ্ঠু বদলি নীতি ছিল না। যা এদিন থেকে চালু হল। সংস্থার একই বিভাগে ৩ বছর কাজ করলে অন্য বিভাগে বদলি করা হতে পারে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি ও কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:২১
Share: Save:

বাম আমলে সাধারণত এনবিএসটিসি-র নানা সংগঠনের নেতাদের বদলি করা হতো না। সেটাই ছিল প্রথা। তৃণমূল জমানায় সেই প্রথাকে পাকাপোক্ত করতে সরকারি সিলমোহর দিলেন সংস্থার চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। মঙ্গলবার এনবিএসটিসি-র বোর্ড মিটিঙের পরে উত্তরকন্যায় সাংবাদিক বৈঠকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “এনবিএসটিসি-র এতদিন কোনও সুষ্ঠু বদলি নীতি ছিল না। যা এদিন থেকে চালু হল। সংস্থার একই বিভাগে ৩ বছর কাজ করলে অন্য বিভাগে বদলি করা হতে পারে। কোনও ডিপো কিংবা অফিসে টানা ৫ বছর কাজ করলে অন্যত্র বদলি করা হতে পারে। তবে কর্মী সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কোনও ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় স্তরের সভাপতি, সম্পাদক এবং কোষাধ্যক্ষকে বদলি করা হবে না।”

এই ঘোষণার পরে এনবিএসটিসি-র অন্দরেই বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে নানা মহলে দানা বেঁধেছে বিতর্কও। সংস্থার অফিসার এবং বোর্ড সদস্যের একাংশ জানিয়েছেন, এনবিএসটিসি রাজ্য সরকারের পরিবহণ দফতরের অধীনস্থ একটি সংগঠন। সেখানে সরকারি নিয়ম মেনে বদলি নীতি এমনিতেই কার্যকরী রয়েছে। কর্মী সংগঠনের নেতাদের বদলি হবে না বলায় কর্মীদের একটি বড় অংশের মধ্যেই অসন্তোষ দেখা দিতে পারে বলে তাঁরা আশঙ্কা করছেন। উপরন্তু, বাম আমলে এনবিএসটিসি-র ইউনিয়নের পদে থাকা নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠলেও অলিখিত প্রথা থাকায় তাঁদের বদলি করা হয়নি। এখন তৃণমূল জমানাতেও ওই নেতারা একই সুবিধা যাতে পান তা নিশ্চিত করা হল কেন সেই প্রশ্নেই সংস্থার অন্দরে বিভ্রান্তি রয়েছে।

পরিবহণ দফতরের কর্তারা বলছেন, এমন কোনও প্রস্তাব এখনও হাতে আসেনি। তবে এলে তাতে উৎসাহ দেওয়া হবে না। রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানান, বাম আমলে এই নিয়ম ছিল। কিন্তু এই সরকার রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাদের জন্য এমন নিয়মের পক্ষপাতী নয়। কাজেই এনবিএসটিসি চাইলেও পরিবহণ দফতর এখনই তাতে সবুজ সঙ্কেত দেবে বলে মনে হয় না।

প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যর বক্তব্য, “আমাদের আমলে সংগঠনের নেতাদের বদলি করা যাবে না, এমন কোনও সরকারি নিয়ম ছিল না। তবে যে হেতু তাঁরা সংগঠন চালান, সে কথা ভেবে নৈতিকতার দিক থেকে তাঁদের অন্যত্র বদলি করা হত না।”

সিটু-র এনবিএসটিসি এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক জগতজ্যোতি দত্ত এবং ইনটাকের এনবিএসটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি সুজিত সরকার আলাদা ভাবে হলেও প্রায় একই সুরে জানিয়েছেন, নব্বইয়ের দশক থেকেই নিগমে সুষ্ঠু বদলি নীতি ছিল। তাতে কিছু বাড়তি সংযোজন হয়েছে মাত্র। দু’জনেরই বক্তব্য, “আগেও স্বীকৃত সংগঠনগুলির কেন্দ্রীয় কমিটির পদাধিকারীদের ছাড় দেওয়া হত। আমরাই ওই বিষয়টি যুক্ত করার দাবি করেছিলাম। বাম আমলে পুরানো সেই রীতি এবার মানা হল।” এনবিএসটিসি-র শ্রমিক তৃণমূল কর্মচারি অ্যান্ড ড্রাইভার্স ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি আবদুর রহমান অবশ্য মনে করেন, সুষ্ঠু নীতি হওয়ায় যথেচ্ছ বদলির প্রবণতা কমবে।

আর্থিক সমস্যায় ধুঁকতে থাকা এনবিএসটিকে ‘চাঙ্গা’ করতে এদিনের বোর্ড মিটিঙে পুজোর আগেই কন্ডাক্টর, চালক এবং মেকানিক মিলিয়ে ১৩৮৮ জনকে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা ঘোষণা করা করা হয়েছে। কর্মীদের পুজোয় ৩ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এ ছাড়াও এদিনের বোর্ড সভায় গত ২৫ বছরের সংস্থার অডিট রিপোর্ট পেশ করা হয়। সেখানে নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে বলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। সোমবার এনবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান সংস্থার অনলাইন বুকিং দ্রুত হবে বলে জানিয়েছিলেন। এদিন তিনি বলেন, “এত তাড়াতাড়ি হবে না। ৩ থেকে ৬ মাস সময় লাগবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE