প্রিয়াঙ্কা রায়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
শিক্ষক দিবস পালনের সময়ে এসএফআই পরিচালিত ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সদস্যদের উপরে হামলার অভিযোগ উঠল টিএমসিপি-র দিকে। শুক্রবার সকালে শিলিগুড়ির ডাবগ্রামের মহিলা কলেজে এই হামলায় কলেজের সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা রায়ের নাক ফেটে গিয়েছে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে অবশ্য তাঁকে ছেড়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ দিনের ঘটনার জেরে ভেস্তে যায় অনুষ্ঠান।
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকালে এসএফআই পরিচালিত কলেজের ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে পাঁচ নম্বর ঘরে শিক্ষক দিবস পালনের আয়োজন করা হয়েছিল। অভিযোগ, সেখানে হঠাৎই ঢুকে পড়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা অনুষ্ঠান বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হলে দু’পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এর মধ্যেই কোয়েল অধিকারী নামে দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী প্রিয়াঙ্কাকে ঘুঁষি মারেন বলে অভিযোগ। তাতে তাঁর নাক ফেটে রক্ত বের হতে শুরু করে। আহত প্রিয়াঙ্কা বলেন, “আমাকে গালিগালাজ করে কোয়েল। বাধা দিলে নাকে ঘুঁষি মারে।” যদিও যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই কোয়েলের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছেন বলে দাবি করেন তৃণমূলের ছাত্রীরা।
এসএফআইয়ের তরফে মারধরের অভিযোগ তুলে শিলিগুড়ি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে গোটা বিষয়টির জন্য দায়ী করা হয়েছে অধ্যক্ষাকেই। অধ্যক্ষা রুমা ভৌমিক সেনগুপ্ত অবশ্য জানান, শিক্ষক দিবসে অনুষ্ঠান করতে লিখিত অনুমতি নেয়নি কোনও পক্ষই। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। কী হয়েছে, তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ছাত্র সংসদের আয়োজনে কলেজের সমস্ত ছাত্রীদের ডাকা হয়েছিল। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সদস্যারা নিজেদের দলীয় ব্যানারে অনুষ্ঠানের দাবি জানান। কিন্তু ছাত্র সংসদের আয়োজনে অনুষ্ঠানে কোনও ব্যানার ব্যবহারে আপত্তি জানানো হয় ছাত্রীদের পক্ষ থেকে। ফলে তাঁরা এদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়নি। ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক অস্মিতা বিশ্বাস বলেন, “আমরা এদিন সাড়ে আটটার দিকে কলেজে গিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করছিলাম। সাড়ে দশটা নাগাদ তৃণমূলের ছাত্রীরা এসে অনুষ্ঠান বন্ধের দাবি জানায়। আমরা বাধা দিলে আমাদের উপরে চড়াও হন। আমাদের কয়েকজন কম বেশি আহত হয়েছেন। প্রিয়াঙ্কা গুরুতর আহত হয়েছেন।”
যদিও মারধরের ঘটনা অস্বীকার করে টিএমসিপি-র কলেজ ইউনিটের সম্পাদিকা রুবি মল্লিক বলেন, “বিবাদ বাধিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষা। তিনি একই কক্ষে ছাত্র সংসদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যদের অনুষ্ঠান করার অনুমতি দিয়েছেন। ফলে এদিন আমরা কলেজে গিয়ে সেখানে অনুষ্ঠান করার দাবি জানাই। তাঁরা আমাদের উল্টো মারধর করে।” তবে লিখিত কোনও অনুমতি তাঁরা নেয়নি বলে স্বীকার করেছেন। ওই ছাত্রীকেও তাঁরা মারেননি বলেও দাবি করেছেন সদ্য এসএফআই থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া ইন্দ্রাণী সরকার।
প্রসঙ্গত, কয়েক দিন আগেই এসএফআই থেকে টিএমসিপিতে যোগ দেন ইন্দ্রাণী। ঘটনাচক্রে ইন্দ্রাণী ওই কলেজে এসএফআই এর ডাকাবুকো সদস্যা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কলেজের শ্রেণি প্রতিনিধিও নির্বাচিত হয়েছেন। সেই সময়ে ভোটের আগে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময়ে ইন্দ্রাণীকে ঘিরে কয়েকজন টিএমসিপি কর্মীর বেধড়ক মারধরের ঘটনায় গোটা রাজ্যেই হইচই পড়েছিল। তখনই তিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি নির্ণয় রায়ের বিরুদ্ধে তাঁকে ভয় দেখিয়ে দলে টানার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত মাসখানেক আগে শঙ্কুদেব পণ্ডা শিলিগুড়িতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিলে ইন্দ্রাণী তাঁর উপস্থিতিতে টিএমসিপিতে যোগ দেন। গত ছাত্রী সংসদ ভোটে তাঁকে মারধরে যাঁরা অভিযুক্ত ছিলেন, তাঁদের একজনের পাশে দাঁড়িয়ে এদিন ইন্দ্রাণী বলেন, “টিএমসিপি মারধরের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। এসএফআইয়ের সদস্যারা নিজেরা ধস্তাধস্তির সময়ে চোট লেগে থাকতে পারে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy