Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সুতোর দাম বেড়েছে, ধুঁকছে তাঁতশিল্প

দু’দশক ধরে শহরের অর্থনীতির হালহকিকত বদলেছে অনেকটাই। আগে তুফানগঞ্জের তাঁতশিল্প ছিল নাম করা। তার উপরেই অনেকটা নির্ভরশীল ছিল অর্থনীতি। কিন্তু এখন সেখানকার চাষিরা নদিয়ার ফুলিয়ামুখী হয়ে উঠছেন।

তাঁতের উপরেই এক সময়ে নির্ভর করত শহর। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

তাঁতের উপরেই এক সময়ে নির্ভর করত শহর। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

অরিন্দম সাহা
তুফানগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৭
Share: Save:

দু’দশক ধরে শহরের অর্থনীতির হালহকিকত বদলেছে অনেকটাই। আগে তুফানগঞ্জের তাঁতশিল্প ছিল নাম করা। তার উপরেই অনেকটা নির্ভরশীল ছিল অর্থনীতি। কিন্তু এখন সেখানকার চাষিরা নদিয়ার ফুলিয়ামুখী হয়ে উঠছেন।

আর ছিল ফুলকপির চাষ। শীতের মরসুমে শুধু তুফানগঞ্জ থেকে রোজ গড়ে ৫০০ টন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টোম্যাটো অসম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ডের মত রাজ্যে যেত। এখন তা গড়ে দৈনিক ৫০ টনেরও কম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব্জির বাজারে এখন মন্দার ছায়া।

এত দিনেও গড়ে ওঠেনি কোনও শিল্প তালুক। অথচ কৃষিভিত্তিক শিল্পের সম্ভাবনায় কোনও কমতি ছিল না। তুফানগঞ্জ মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক গৌতম সরকার বলেন, “দু’দশক আগেও অসমের মত একাধিক রাজ্যে এখানকার ফুলকপির ব্যাপক চাহিদা ছিল প্রচুর। অন্য সব্জিও রফতানি হতো। এখন সেদিন নেই। তাঁত শিল্পের কারবারও নানা সমস্যায় ধুঁকছে। কিন্তু এ সব নিয়ে পরিকল্পনা কোথায়?”

তুফানগঞ্জ পুরসভা এলাকা মূলত মফস্বল শহর। অন্দরান-ফুলবাড়ি, নাককাটিগছ, চিলাখানা, ধলপলের মত কৃষি প্রধান গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ঘেরা ওই পুরসভার অর্থনীতি স্বাভাবিকভাবেই ছিল কৃষি নির্ভর। তবে ফুলকপি চাষের খ্যাতির জন্য একসময় তুফানগঞ্জ আলাদাভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

রায়ডাক চরের হাটে অসম, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশের মত ভিন্রাজ্য থেকে আসা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা শীতের মরসুম জুড়ে ঘাঁটি গেড়ে থাকতেন। গ্রাম থেকে আসা ফুলকপি কাগজ মুড়ে বাঁশের ঝুড়িতে ভরা হোত।

দিনভর কয়েকশ শ্রমিক হাজিরার ভিত্তিতে ওই কাজ করতেন। এলাকা থাকত জমজমাট। কিন্তু পরিবহণ খরচ বেড়ে যাওয়ায় মূলত অসমে ফুলকপি চাষের ঝোঁক শুরু হয়। তুফানগঞ্জের কৃষিমজুরদের বাড়তি মজুরির বিনিময়ে সেখানে নিয়ে গিয়ে ফুলকপি চাষাবাদ শুরু হয়। ফলে, কয়েক বছরের মধ্যে ফলন উপাদন ভাল জায়গায় পৌঁছয়। যার প্রভাব পড়তে শুরু করে তুফানগঞ্জের বাজারে। চাহিদা কমে যাওয়ায় এখানকার কৃষকরা বিপাকে পড়েন। শীতের মরসুম জুড়ে চরের হাটের জৌলুস ফিকে হতে থাকে। চলতি বছরের শুরুতে কিছুটা দাম পেলেও শেষে জলের দরে ফুলকপি বিক্রি হয়। তুফানগঞ্জ বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর কথায়, “আগের তুলনায় টাকার দাম পড়েছে। কিন্তু শীতের মরসুমে জামাকাপড়, খাবারের দোকান থেকে শৌখিন সামগ্রী কেনার সেই চেনা হিড়িক নেই। ফুলকপির কারবারে মন্দা না হলে হয়ত এমনটা হতো না। বছরের অন্য সময়টা মার খাচ্ছি তাঁতশিল্পের দুর্দশায়।”

ব্যবসায়ীরাই জানাচ্ছেন, তুফানগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকা তো বটেই লাগোয়া গ্রামজুড়ে একসময় অসংখ্য তাঁতের কারখানা ছিল। শাড়ি, গামছা, উত্তরীয়-সহ তাঁতের তৈরি নানা সামগ্রী অসমের মত ভিন্রাজ্যে ব্যাপক চাহিদা ছিল। প্রতি সপ্তাহে পাইকাররা যাতায়াত করতেন। পুজো থেকে বিহু উৎসবের আগে ওই চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যেত। পাল্লা দিয়ে বাড়ত তাঁত কারিগরদের ব্যস্ততা। তাঁত কারখানার খটখট শব্দ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় দৈনন্দিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সেভাবে তাঁত কারবারকে উৎসাহ দিতে পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। কারখানার ঝাঁপে তালা ঝুলিয়ে তাই কারিগরদের বড় অংশ এলাকা ছেড়ে ফুলিয়াবাসী।

তুফানগঞ্জের বাসিন্দা সিপিএম নেতা তমসের আলির বলেন, “তৃণমূল জমানায় সুতো, রঙের দাম বেড়েছে। সিন্থেটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। ফলে তাঁতের সর্বনাশ হয়েছে। সব্জি সংরক্ষণ পরিকাঠামো গড়ে তুলতে উদ্যোগী হননি। যার খেসারত দিচ্ছে তুফানগঞ্জের অর্থনীতি। পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “বাম আমলে তুফানগঞ্জের উন্নয়নে ওই দুইয়ের ব্যাপারে ন্যূনতম গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। সরকার বদলের পর অনেক পরিকল্পনা হয়েছে। ফুলকপি শুকনো করে রফতানির প্রকল্প গড়ার চেষ্টা হচ্ছে। সব্জি সংরক্ষণের হিমঘর তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে। তাঁতের কারিগররা আগের থেকে এখন অনেক কম সংখ্যায় ফুলিয়ায় আছেন।” (শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

arindam saha amar shahor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE