Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হু হু বাড়ছে জনসংখ্যা, অভাব পরিকল্পনারই

ট্রাফিক নিয়ম যাতে শহরের বাসিন্দারা মেনে চলতে বাধ্য হন, তার জন্য কোনও ব্যবস্থাই নেই জলপাইগুড়ি শহরে।এমনই অভিযোগ সমাজকর্মী সুব্রত সরকারের। তাঁর বক্তব্য, “কোনও শহরের জনবহুল এলাকায় যানবাহনের গতি নির্দিষ্ট করা থাকে।

ফুটপাথ নেই। রাস্তাতেই রাখা গাড়ি। ছবি: সন্দীপ পাল।

ফুটপাথ নেই। রাস্তাতেই রাখা গাড়ি। ছবি: সন্দীপ পাল।

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৯
Share: Save:

ট্রাফিক নিয়ম যাতে শহরের বাসিন্দারা মেনে চলতে বাধ্য হন, তার জন্য কোনও ব্যবস্থাই নেই জলপাইগুড়ি শহরে।এমনই অভিযোগ সমাজকর্মী সুব্রত সরকারের। তাঁর বক্তব্য, “কোনও শহরের জনবহুল এলাকায় যানবাহনের গতি নির্দিষ্ট করা থাকে। সেটা মানতে বাধ্য করানো হয়। জলপাইগুড়িতে ওই সব নিয়ম যেন নেই। মানারও দায়-দায়িত্ব কারও নেই। তাই যানজট, দুর্ঘটনা নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

হাঁটাচলার জন্য ফুটপাতও মেলে না। পরিস্থিতি দেখে বাম ছাত্র নেতা প্রদীপ দে বলেন, “প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো জেলা সদর শহরে ফুটপাত, সাইকেল চলাচলের নির্দিষ্ট জায়গা থাকা উচিত ছিল। সেটা নেই কেন, এটা গবেষণার বিষয় হতে পারে।”

শহরের অসুখটা ঠিক কোথায়? কেন এত যানজট?

আনন্দচন্দ্র কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান সুদীপ চক্রবর্তী প্রায় নিশ্চিত, দেড়শো বছরের পুরনো জলপাইগুড়ি শহরে চলাফেরা ক্রমশ আরও কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে। সুদীপবাবু জানান, গত ৩০ বছরে শহরে জনসংখ্যা এবং যানবাহনের চাপ বাড়লেও পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। শহরে ফাঁকা জায়গা উধাও হয়েছে। শহরের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় ভিড় কেন্দ্রীভূত হয়েছে।

পুরসভা এলাকার ৪, ৭, ৯, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২২, ২৩ এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে জনসংখ্যার চাপ উদ্বেগজনক। শহরের দিনবাজার, মার্চেন্ট রোড, ডিবিসি রোড, কদমতলা, বাবুপাড়া, উকিলপাড়া, সমাজপাড়া, নতুনপাড়া এলাকায় ভিড় বাড়ছে। শহরের প্রধান রাস্তাগুলি আর যানবাহনের চাপ নিতে পারছে না। ওয়ার্ডের রাস্তাতেও যানবাহনের চাপ বাড়ছে। গবেষকের বক্তব্য, “এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। কারণ পরিকল্পনার অভাব।”

একমত জলপাইগুড়ি নাগরিক মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক তথা আইনজীবী তপন ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, “জনসংখ্যার চাপে শহর অপরিকল্পিত ভাবে বেড়েছে। ওই কারণে নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য কমেছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে বিকল্প কিছু পরিকল্পনা গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।”

কতটা বেড়েছে জনসংখ্যার চাপ?

জলপাইগুড়ি জেলা সদর তৈরি হয় ১৮৬৯ সালের ১ জানুয়ারি। ওই সময়ে ৬ হাজার ২৮১ জন বাসিন্দা ছিল। জেলা সদর গঠনের অনেক পরে ১৮৮৫ সালে পাঁচটি ওয়ার্ড নিয়ে পুরসভা গঠন করা হয়। সেখানে ৭ হাজার ৯৩৬ মানুষের বসবাস ছিল। ১৯৯৫ সালে ফের ওয়ার্ড বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২৫টিতে। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, শহরে জনসংখ্যা ১ লক্ষ ৭ হাজার ৩৫১ জন।

আমেদাবাদের সেন্টার ফর এনভায়রমেন্ট এডুকেশন এবং জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের ২০০১ সালের এক সমীক্ষা বলছে, জলপাইগুড়ি শহরের জনঘনত্ব উদ্বেগজনক ভাবে বেড়েছে। ১৯৮১ সালে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৬ হাজার ২০০ জন বসবাস করতেন। ১৯৯১ সালে সেটা বেড়ে হয় ৭ হাজার জন। ২০০১ সালে তা প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৭ হাজার ৭২৩ জনে। নতুন সমীক্ষার কাজ না হলেও গবেষকদের একাংশ মনে করছেন, বর্তমানে শহরের বেশির ভাগ এলাকায় প্রতি বর্গ কিলোমিটারে অন্তত ২০ হাজার মানুষ বসবাস করছেন।

জনঘনত্ব বৃদ্ধির ফলে শহর ঠিক কতটা পাল্টেছে?

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE