Advertisement
E-Paper

রসিকতার পেঁয়াজি-ফোনে আড়তদারের চোখে জল

মারকাটারি দামের আঁচ লাগা পেঁয়াজের ঝাঁঝে এমনিতেই এখন টেকা দায়। হেঁসেলে হেঁসেলে হাহাকার। এমতাবস্থায় পেঁয়াজ নিয়ে রসিকতাও যে কতটা ঝাঁঝালো হতে পারে, হাড়ে হাড়ে তা টের পাচ্ছেন অনীক বর্মন। সৌজন্য: সোশ্যাল মিডিয়া।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৫ ০২:৪৬

মারকাটারি দামের আঁচ লাগা পেঁয়াজের ঝাঁঝে এমনিতেই এখন টেকা দায়। হেঁসেলে হেঁসেলে হাহাকার। এমতাবস্থায় পেঁয়াজ নিয়ে রসিকতাও যে কতটা ঝাঁঝালো হতে পারে, হাড়ে হাড়ে তা টের পাচ্ছেন অনীক বর্মন। সৌজন্য: সোশ্যাল মিডিয়া।

অনীকবাবু পেঁয়াজের আড়তদার। মাস দেড়েক আগে সংবাদপত্রে নিজের দেওয়া একটি বিজ্ঞাপনই এই মুহূর্তে তাঁর জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। পরিচিতি ও ফোন নম্বর সংবলিত বিজ্ঞাপনটির বয়ান সামান্য পাল্টে কেউ সেটি সোশ্যাল মিডিয়ায় চালান করে দিয়েছে। এবং চলতি পেঁয়াজকেন্দ্রিক রঙ্গ-রসিকতার স্রোতে সওয়ার হয়ে তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে হোয়্যাটসঅ্যাপে, ফেসবুকে।

পরিণামে মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত শতাধিক ‘রসিকের’ ফোন পেয়েছেন অনীকবাবু। অচেনা কণ্ঠে ঠাট্টা-তামাশা শুনতে গিয়ে নাওয়া-খাওয়া ভুলেছেন। বিরক্তির মেজাজ ক্রমশ ক্রোধে, শেষমেশ হতাশায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। নিস্তার পেতে পুলিশে যাওয়ার চিন্তাও মাথায় ঘুরছে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের ওই বাসিন্দার।

কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার সূত্র ধরে এ ভাবে কারও ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করা কি ঠিক? আইনের চোখে অপরাধ নয়?

অনীকবাবুর ভোগান্তি-বৃত্তান্ত শুনে সমাজের নানা মহলে প্রশ্নটা মাথা চাড়া দিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় রঙ্গ-ব্যঙ্গের উপরে রাষ্ট্রের ‘খবরদারি’ বা ‘দমন-নীতি’র বিরুদ্ধে নানা সময়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। একই যুক্তিতে মাত্রাছাড়া রসিকতায় কারও ব্যক্তিজীবন বিপর্যস্ত করাটাও যে নিন্দনীয়, তা-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন অনেকে। সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘সাইবার আইনের ৪৩ নম্বর ধারা মোতাবেক এ ভাবে কারও ব্যক্তিগত জীবনে হানাদারি বিলক্ষণ অপরাধ।’’ মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে একটি রঙ্গ-চিত্র ই-মেলে ফরোয়ার্ড করে
গ্রেফতার হয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অম্বিকেশ মহাপাত্র। ‘কার্টুন-কাণ্ড’ খ্যাত সেই অম্বিকেশবাবুও বুধবার বলেন, ‘‘কাউকে এ ভাবে সরাসরি ফোন করে বিরক্ত করাটাকে কিছুতেই সমর্থন করা যায় না।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ভুক্তভোগীর অভিযোগ পেলে তারা ব্যবস্থা নিতে তৈরি।

ঘটনাটি ঠিক কী? গত ক’দিন ধরে পেঁয়াজের দর যত চড়ছে, পেঁয়াজ সংক্রান্ত নানা মজাদার ছবি ও লেখায় উপচে উঠছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ। কোথাও দেখা যাচ্ছে, সোনার আংটির মাথায় পেঁয়াজ বসানো। স্বামী আহ্লাদ করে স্ত্রীর গলায় পেঁয়াজের হার পরাচ্ছেন— সোশ্যাল মিডিয়ার ভাণ্ডারে এমন ভিডিও-ও মজুত। এ সবেরই মাঝে মঙ্গলবার উঠে আসে একটি ছোট ‘বৈবাহিক’ বিজ্ঞাপনের ছবি। যেখানে বিজ্ঞাপনদাতা জানাচ্ছেন, তাঁর পেঁয়াজের আড়ত রয়েছে। ছেলের জন্য পাত্রী চাই। তলায় মোবাইল নম্বর।

এই নম্বরটিই অনীকবাবুর। সত্যিই উনি এমন বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন নাকি?

অনীকবাবুর দাবি, দিয়েছিলেন। দেড় মাস আগে। তবে ছেলের জন্য পাত্রী চেয়ে নয়, মেয়ের জন্য পাত্র চেয়ে। এর মধ্যে পাড়াতেই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।

তবে বিজ্ঞাপন থেকে গিয়েছে। ‘মেয়ে’কে ছেলে আর ‘পাত্র’কে পাত্রী করে সেটি পোস্ট হওয়া ইস্তক শুরু হয়েছে ফোনের বন্যা। বুধবার বিকেলে ফোনে প্রায় হাহাকার করেন অনীকবাবু— ‘‘অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছি মশাই। একে তো পেঁয়াজ নিয়ে ব্যবসার ঝামেলা। তার উপরে সকাল থেকে শুধু ফোন আর ফোন! কোনও কাজ করতে পারছি না।’’ ফোনে কী বলা হচ্ছে?

কেউ ওঁকে বলেছেন, মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু এই বাজারে পেঁয়াজের আড়তদারের ঘরেই বিয়ে দিতে চান। কারও আবদার, মেয়েকে নিয়ে ধন্য করুন। কারণ, আপনার পেঁয়াজের আড়ত রয়েছে, যা কিনা টাঁকশালের চেয়েও দামি। কেউ কেউ শুধু খিকখিক হাসছেন। ‘‘বুঝতে পারছি, ওঁরা মজা করছেন। কিন্তু আমার যে প্রাণাম্ত। ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।’’— ফোনে সত্যিই কাঁদো কাঁদো শোনায় অনীক বর্মনের গলা।

কী প্রতিকার হতে পারে? রাজ্য পুলিশের আইজি (আইন-শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মার বক্তব্য, অনীকবাবু থানায় অভিযোগ জানালে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত হবে। বিজ্ঞাপনের বয়ান পাল্টে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়েছে কে, তার হদিস পাওয়ার চেষ্টা
হবে। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, সে ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা দুষ্কর। তবে ওই পোস্টের সূত্রে অনীকবাবুকে ফোনে কেউ বিরক্ত করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

sunando ghosh north dinajpur onion stockist onion dealer onion dealer awkward situation social media bully social media onion mockery onion mockery onion social media anik burman kaliaganj kaliaganj onion dealer
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy