Advertisement
E-Paper

১২৫ নয়, রাজ্যে বাজির শব্দমাত্রা ৯০ ডেসিবেল-ই

১২৫ নয়, বরং এ রাজ্যে বাজির শব্দমাত্রা ৯০ ডেসিবেল বলেই জানিয়ে দিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। সোমবারই এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরেও। জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলার জেরে এ রাজ্যে বাজির শব্দমাত্রা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৫ ২১:০২

১২৫ নয়, বরং এ রাজ্যে বাজির শব্দমাত্রা ৯০ ডেসিবেল বলেই জানিয়ে দিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। সোমবারই এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরেও। জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলার জেরে এ রাজ্যে বাজির শব্দমাত্রা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। শব্দবাজি আটক করা হবে কি না, তা নিয়ে বিভ্রান্তি ছিল পুলিশের অন্দরেও।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দাবি, এ দিনের বিজ্ঞপ্তির জেরে সেই বিভ্রান্তি দূর হয়েছে। তার ফলে এ দিন সন্ধ্যা থেকেই ৯০ ডেসিবেলের বেশি শব্দমাত্রার বাজি আটক করতে পারবে পুলিশ। বিজ্ঞপ্তির প্রাপ্তিস্বীকার করে লালবাজার জানিয়েছে, এ দিনই ৩০০ কিলোগ্রাম নিষিদ্ধ বাজি-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পর্ষদের এই বিজ্ঞপ্তির জেরে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বাজি ব্যবসায়ীদের সংগঠন। সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায় জানিয়েছেন, এই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে মঙ্গলবার জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা দায়ের করবেন তাঁরা। বাজির শব্দমাত্রা নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে (ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল) মামলা করেছিল মারোয়াড়িদের একটি সংগঠন। সঙ্গে ছিলেন বাজি ব্যবসায়ীরাও। সেই মামলায় আদালত বলেছিল, সারা দেশে বাজির শব্দমাত্রা ১২৫ ডেসিবেল হওয়া সত্ত্বেও এ রাজ্যে কেন ৯০ ডেসিবেল হবে, তা বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট দিয়ে জানাতে হবে।

পর্ষদ সূত্রের খবর, বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট তৈরি করতে বহু দিন সময় লাগবে। তার ফলে এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় পর্ষদ। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট পর্ষদকে জাতীয় পরিবেশ আদালতেই পুনর্বিবেচনার আর্জি জানাতে বলে। ২৯ অক্টোবর কলকাতার জাতীয় পরিবেশ আদালত সেই পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করে। পর্ষদ কর্তাদের ব্যাখ্যা, পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করলেও শব্দমাত্রা নির্ধারণের ক্ষেত্রে পর্ষদকে স্বাধীনতা দিয়েছিল পরিবেশ আদালত। তার ভিত্তিতেই এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।

কী বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে?

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক শীর্ষকর্তা জানান, · বাজির শব্দমাত্রা ৯০ ডেসিবেল। · হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মতো ‘সাইলেন্স জোনে’ কোনও বাজি ফাটানো যাবে না। · রাত দশটা থেকে ভোর ৬টা, ৯০ ডেসিবেলের কম, এমন শব্দবাজিও ফাটানো যাবে না।— এই তিনটি বিষয়ই বিজ্ঞপ্তিতে পরিষ্কার করে জানানো হয়েছে।

পর্ষদ সূত্রের খবর, শুক্রবার, অর্থাৎ ৩০ অক্টোবর পরিবেশ আদালতের রায়ের লিখিত কপি পর্ষদে পৌঁছয়। যে পরিবেশ আইনে (দ্য এয়ার (প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অব পলিউশন অ্যাক্ট), ১৯৮১) এই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে, তার জন্য কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সঙ্গে আলোচনা করা জরুরি ছিল। শনি ও রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় পর্ষদকর্তা ও আইনজীবীরা আইনগত দিকটি খতিয়ে দেখেন। সোমবার সকালে রাজ্য পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র কেন্দ্রীয় কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পর্ষদের এক জন চিফ ইঞ্জিনিয়ার দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার পরেই বিকেলে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এ ব্যাপারে পর্ষদের তৈরি করা বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশও হাতিয়ার করা হয়েছে বলে পর্ষদ সূত্রের খবর।

বাজি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পর্ষদের এই সিদ্ধান্ত আইনগত ভাবে ঠিক নয়। আদালত বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট চাইলেও বৈঠকের বিবরণী (মিনিটস) জমা দেওয়া হয়েছে। যদিও পরিবেশ-আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘দ্য এয়ার অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রয়েছে। রাজ্যের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সংগঠনের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি জারি করা যায়। রাজ্য দূষণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইনি অফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘পর্ষদের এই অধিকারের কথা তো আদালতের নির্দেশেও বলা হয়েছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, বাজির শব্দমাত্রা ৯০ ডেসিবেল হবে কেন, তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন করছেন। কিন্তু ১২৫ ডেসিবেলই বা হবে কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে না কেন?

পরিবেশ-আইন বিশেষজ্ঞ গীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ও পর্ষদের বিজ্ঞপ্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলছেন, এ রাজ্যে শব্দবিধি লাগু করার সময়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘ডেসিবেল মাত্রা নব্বুইয়ের নীচে করা হবে না কেন?’’ শব্দদূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করা গীতানাথবাবুর কথায়, এত দিন ধরে রাজ্যে ৯০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা জারি ছিল। সেটা বদল হবে কেন? আমাদের কান তো ৯০ ডেসিবেলে মানানসই হয়ে গিয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হবে দাবি করে প্রবীণ আইনজীবীর মন্তব্য, ‘‘৯০ ডেসিবেলের বেশি মাত্রার বাজি মানবাধিকারের লঙ্ঘন।’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের মতে, রাজ্য নিজ অধিকারবলে ঠিক কাজ করেছে। তবে এর সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে নতুন করে গবেষণা-রিপোর্ট তৈরি করা হলে এই লড়াই আরও জোরদার হবে।

এবং এই বাজি প্রসঙ্গেই উঠে এসেছে বেআইনি বাজি কারখানার বিতর্ক। যা নিয়েও আদালতে মামলা চলছে। গীতানাথবাবু বলছেন, বাজি তৈরি করতে গেলে বিস্ফোরক আইনে লাইসেন্স নিতে হয়। এ রাজ্যে সেটা হাতেগোনা কয়েকটি সংস্থার রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এ রাজ্যে তৈরি হওয়া শব্দবাজি হোক বা আতসবাজি, বেশির ভাগই বেআইনি। বিশ্বজিৎবাবুর মন্তব্য, ‘‘বেআইনি বাজি নিয়েও তো আদালতের নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু পুলিশ তো কাউকেই ধরে না!’’ পরিবেশকর্মীদের মতে, বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করতে গেলে এ রাজ্যে ঠগ বাছতে গা উজাড় হয়ে যাবে। এক পরিবেশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী, বাজির প্যাকেটে নির্মাতার নাম লেখা থাকার কথা। দোকানে গিয়ে দেখবেন, কটা প্যাকেটে সেটা থাকে!’’

এ ব্যাপারে পুলিশকর্তারা সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। শহরে বিজয়গড় কলেজের মাঠে নতুন বাজি বাজার-সহ মোট পাঁচটি বাজি বাজারের কথা জানিয়ে লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তার মন্তব্য, ‘‘বাজির প্যাকেটে নির্মাতার নাম ছাপানোর অনুরোধ করা হয়েছে।’’

Crackers Sound limit Decibel scale West Bengal State 90 not 125
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy