Advertisement
E-Paper

যেন কেউ কাউকে ছেড়ে যেতে চায় না

পোড়া তুসের আড়ালে চেনাই যাচ্ছে না তাকে। তখনও ঝলসানো কচি হাতে জাপ্টে রয়েছে ছাগল ছানাটিকে। বছর আটেকের গোলাম মোস্তাফাকে রবিবার এ ভাবেই খুঁজে পেল তার বাড়ির লোক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০১:৫২
গোলাম মোস্তাফা

গোলাম মোস্তাফা

পোড়া তুসের আড়ালে চেনাই যাচ্ছে না তাকে। তখনও ঝলসানো কচি হাতে জাপ্টে রয়েছে ছাগল ছানাটিকে। বছর আটেকের গোলাম মোস্তাফাকে রবিবার এ ভাবেই খুঁজে পেল তার বাড়ির লোক।

ছাগলটার গায়ের রং ছিল লাল। ‘লালু’ তার বড্ড প্রিয়। লালুটাও ছিল গোলামের বড় ন্যাওটা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দু’জনেই লেপ্টে থাকত গায়ে। গ্রামের বিলকিস বিবি বলছেন, ‘‘দেখ, কেমন জড়ামড়ি করেই চলে গেল দু’জনে!’’

ঘটনার ২৪ ঘন্টা পরেও অগ্নিকাণ্ডের কথা বলতে গিয়েও ডুকরে কেঁদে ওঠেন গোলামের পিসি উজলেমা বিবি। বলেন, ‘‘সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লালু ছাড়া কিছুই বুঝত না। সকালে খেতে দেওয়া থেকে রাতে শুতে যাওয়া পর্যন্ত লালু ছিল তার সঙ্গী। এমনকী রাতে শুতে যাওয়ার আগেও লালুকে ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে তবেই বিছানায় যেত।’’

যদিও রবিবার ঝড়ের সময়ে গ্রামের দক্ষিণ দিকের বাগানে আম কুড়োতে গিয়েছিল আট বছরের ছেলেটি। তুমুল ঝড়ের মধ্যে পড়ে পাওয়া দুটো কাঁচা আম দু’হাতে ধরে হাঁফাতে হাঁফাতে বাড়িতে ছুটে এসে ঢোকে। তাই দেখে মা ফরিদা বিবি ঝড়ের মধ্যে বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করেন। মা ঘরের মধ্যে চুপ করে বসে থাকার কথা বললেও লালুকে খুঁজতে বেরিয়ে গিয়েছিল সে। তার কিছুক্ষণ পরেই আগুন গিলে্ খায় গোলাম ও লালুকে।

গোলাম ও আবু সাঈদ দুই ভাই। বাবা শামিম শেখে মাস দুয়েক আগে রাজমিস্ত্রীর কাজ নিয়ে চেন্নাইয়ে গিয়েছেন। ছেলের মারা যাওয়ার খবর পেয়ে সোমবার রাতে হোসেনপুরে এসে পৌঁছান তিনি। মা ছোট ছেলেকে বুকে আঁকড়ে বসে রয়েছেন। ফরিদা বিবি জানান, বাগান থেকে এসে বাড়িতে ঢুকতেই ঘরের মধ্যে ছুপ করে বসে থাকতে বলি। তখন বাইরে তুমুল ঝড়। কিন্তু লালুর খোঁজ করতেই বাড়ি থেকে ছুটে পালিয়ে যায়। আর ফিরল না গো!’’ লালুকে খুঁজতে পাশের বাড়িতেও ঝুকে যেতে দেখা গিয়েছিল গোলামকে। চারপাশে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। কেউ আর মনে রাখেনি তাদের কথা। পরে দমকল কর্মীরা জল ঢেলে আগুন নেভানোর সময়ে আগুনের ছাই সরে যেতেই দেখা যায় রান্নাঘরের মধ্যে মাটির দেওয়ালে পড়ে থাকতে দেখা যায় মৃত গোলামকে। ডান হাত জড়িয়ে আছে লালুর গলা। মুখে আঁচল চেপে ফরিদা বলছেন, ‘‘এমন করে জাপ্টে ছিল যেন কেউ কাউকে ছাড়তে চায় না, শুধু আমাকেই ছেড়ে গেল!’’ পোড়া সুলতানপুরে জুড়ে সেই ছবিটাই যেন মাছির মতো ভনভন করছে!

sultanpur fire died
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy