বিনয়কুমার সরকার।
কোথায় টোকিয়ো, আর কোথায় চাকুলিয়া! সাত বছর ধরে এই ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজে কাজ করছি। সমুদ্রে সমুদ্রে ঘুরেছি। কিন্তু এই অবস্থায় পড়িনি। এখন আমার অবস্থা ‘দেবতার গ্রাস’ কবিতার রাখালের মতো— কাঁদিতেছে রাখালের গৃহগত প্রাণ। যত দ্রুত সম্ভব টোকিয়ো থেকে চাকুলিয়ায় নিজের বাড়িতে ফিরতে চাই।
চার দিন ধরে জাহাজে কার্যত বন্দি হয়ে আছি। এই ক’দিন জাহাজ টোকিয়োর কাছের এই বন্দরে দাঁড়িয়ে ছিল। শনিবার আবার সমুদ্রের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হল। কবে এখান থেকে বার হতে পারব, দেশে ফিরতে পারব, আমাদের কারও মধ্যে করোনা সংক্রমণ হল— সব বিষয়েই সকলে সম্পূর্ণ অন্ধকারে। শুধু আমি একা নই, জাহাজে আরও ৬ জন বাঙালি রয়েছেন। সব মিলিয়ে ভারতীয় ক্রুয়ের সংখ্যা ১৬০। সকলেই উদ্বিগ্ন। সকলেই চাইছেন দেশে ফিরতে। যাত্রী রয়েছেন ২৬০০ জন। এর মধ্যে ১৭০০ জন জাপানি। যাত্রীদের বেশিরভাগই বয়স্ক এবং মহিলা। জাহাজের ভিতরের কী পরিস্থিতি, বলে বোঝাতে পারব না।
গত ২০ জানুয়ারি জাপানের ইয়োকোহামা থেকে জাহাজটিতে রওনা দিই। সেখান থেকে হংকংয়ের এক যাত্রী উঠেছিলেন। ওই যাত্রী করোনাভাইরাস আক্রান্ত ছিলেন বলে সন্দেহ। কিন্তু সেই সময় করোনাভাইরাস এতটা প্রভাব বিস্তার করেনি। ২৮ জানুয়ারি আবার হংকং থেকে ভিয়েতনামের উদ্দেশে রওনা দিই। মাঝরাস্তায় খবর এল, করোনাভাইরাসের জীবাণু মিলেছে এক যাত্রীর দেহে।
আরও পড়ুন: সংক্রমণ ঠেকাতে রাস্তায় রোবট
২ ফেব্রুয়ারিতে জাপান সরকারের নির্দেশে টোকিয়োয় ফেরানো হয় জাহাজ। তার পর ৫ ফেব্রয়ারি থেকে টোকিয়োর পাশে একটি বন্দরে জাহাজটি আটকে রাখা হয়। যাত্রীদের টানা পরীক্ষানিরীক্ষা চলে। তাতে ৬১ জনের করোনা সংক্রমণ মিলেছে। আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বাকিদেরও জাহাজ থেকে নামতে দেওয়া হয়নি।
অস্বীকার করব না, জাপান সরকার রোগ ঠেকাতে জাহাজের মধ্যে সব রকম ব্যবস্থাই রেখেছে। বাড়তি চিকিৎসক দিয়েছে। দিয়েছে মাস্ক-সহ যাবতীয় জরুরি যন্ত্রপাতি এবং ওষধপত্র। তবু আশঙ্কার সংক্রমণও তীব্র। এ দিকে বাড়ি থেকে বারবার ফোন আসছে। বাড়িতে বাবা, মা, স্ত্রী— সকলেই চিন্তিত। আমার দেশে ফেরার কথা ১৭ ফেব্রুয়ারি। টিকিট কাটাও। কিন্তু ফিরতে পারব কি?
(অনুলিখন: মেহেদি হেদায়েতুল্লা)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy