Advertisement
E-Paper

রেজাউলের সেই বাড়িতেই ৩৫টি আইইডি

তফাতটা মাত্র কয়েক ঘণ্টার উপস্থিতিতেই বুঝিয়ে দিলেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে বাদশাহি রোডে রেজাউল শেখের বাড়ি থেকে অন্তত ৩৫টি আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) উদ্ধার করল ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি)। সেই সঙ্গে ওই বাড়ি থেকে আরও কিছু রাসায়নিক ও পাইপ উদ্ধার করেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীটির ‘ন্যাশনাল বম্ব ডেটা সেন্টার’ (এনবিডিসি)-এর সদস্যরা। আপাত ভাবে যা সকেট বোমা বলেই মনে করা হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০৪:০৫
বর্ধমানের বাদশাহি রোডের বাড়ি থেকে বিস্ফোরক বের করে আনছে এনএসজি। বৃহস্পতিবার। ছবি: উদিত সিংহ।

বর্ধমানের বাদশাহি রোডের বাড়ি থেকে বিস্ফোরক বের করে আনছে এনএসজি। বৃহস্পতিবার। ছবি: উদিত সিংহ।

তফাতটা মাত্র কয়েক ঘণ্টার উপস্থিতিতেই বুঝিয়ে দিলেন তাঁরা।

বৃহস্পতিবার বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে বাদশাহি রোডে রেজাউল শেখের বাড়ি থেকে অন্তত ৩৫টি আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) উদ্ধার করল ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড (এনএসজি)। সেই সঙ্গে ওই বাড়ি থেকে আরও কিছু রাসায়নিক ও পাইপ উদ্ধার করেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীটির ‘ন্যাশনাল বম্ব ডেটা সেন্টার’ (এনবিডিসি)-এর সদস্যরা। আপাত ভাবে যা সকেট বোমা বলেই মনে করা হচ্ছে।

অথচ এই বাড়িতেই দিন কয়েক আগে তল্লাশি চালিয়ে খালি হাতে ফিরে এসেছিল রাজ্য পুলিশ ও সিআইডি। গত ৭ অক্টোবর তল্লাশির পরে পুলিশের তরফেই বাড়িটির সদর দরজায় বড় তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ দিন সেই তালা খুলে প্রথমে ঢোকে এনআইএ-র দল। তারা ডেকে নেয় এনএসজি-র দলটিকে। এনএসজি এসে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করে ওই আইইডি।

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, আগের দিন কী রকম তল্লাশি চালিয়েছিল পুলিশ ও সিআইডি? কেউ কেউ মনে করছেন, খাগড়াগড় কাণ্ডকে রাজ্যের তদন্তকারীরা প্রথমে কতটা হাল্কা ভাবে নিয়েছিলেন, এ দিনের ঘটনাই তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। এঁদের মতে, ঘটনার অন্যতম সন্দেহভাজন ইউসুফ-সহ কয়েক জন যে বিস্ফোরণের দু’দিন পরেও মঙ্গলকোটের শিমুলিয়ার মাদ্রাসায় লুকিয়ে ছিল, এই ঢিলেঢালা মনোভাবের জন্যই পুলিশ সে খবর পায়নি। যখন তারা ওই মাদ্রাসায় যায়, তত ক্ষণে ইউসুফরা সরে পড়েছে। তখন মাদ্রাসায় তালা ঝুলিয়ে দায়িত্ব সেরেছিলেন তদন্তকারীরা। কিন্তু সেখানে যে বহু নথি রয়ে গিয়েছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হয়নি। গত রবিবার এনআইএ-র দল গিয়ে সেই সব নথি উদ্ধার করে। সঙ্গে মেলে বেশ কিছু রাসায়নিক, ধারালো অস্ত্র, গুলি।

বাদশাহি রোডে রেজাউলের বাড়ির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার ছ’দিন পরে পুলিশ জানতে পেরেছে রেজাউলের কথা। জানা যায়, খাগড়াগড় বিস্ফোরণে নিহত জামাত সদস্য শাকিল ও তার দলবলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল রেজাউলের। তখন পুলিশ ওই বাড়িতে যায়। কিন্তু ইউসুফের মতো তত ক্ষণে রেজাউলও পালিয়েছে। ওই বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পরে তা সিল করে দেয় পুলিশ। সেই বাড়ি থেকেই এ দিন এতগুলি আইইডি উদ্ধার করেছে এনএসজি।

ফলে দু’দিক দিয়েই সমালোচনার মুখে পড়েছে রাজ্য পুলিশ। খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থল থেকে পাওয়া তাজা বোমাগুলি নিষ্ক্রিয় না করে সেগুলি নদীর চরে গিয়ে ফাটিয়ে ফেলায় এর আগে প্রশ্ন উঠেছিল তাদের অতিসক্রিয়তা নিয়ে। এখন উঠেছে তল্লাশিতে গাফিলতির অভিযোগ।

পুলিশ কেন বাদশাহি রোডের বাড়িতে বিস্ফোরক খুঁজে পায়নি? সূত্রের খবর, সে দিন তল্লাশির সময়ে বোমা বিশেষজ্ঞদের ডাকা হয়নি। এ বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা মন্তব্য করতে চাননি। তবে জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “৭ তারিখে যখন তল্লাশি চালানো হয়, তখন তদন্তভার চলে গিয়েছে সিআইডি-র হাতে। বাথরুমের উপরে বাঙ্কার করে আইইডিগুলি রাখা ছিল।

তাই বোঝা যায়নি।”

সূত্রের খবর, বুধবারই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল এনএসজি-র। এনআইএ মৌখিক ভাবে তাদের কাছে সাহায্য চাইলেও লিখিত আবেদন এসে পৌঁছয় বুধবার সন্ধেয়। তার আগেই দিল্লি থেকে কলকাতায় চলে এসেছিলেন এনএসজি-র দুই অফিসার। লিখিত অনুরোধ মিলতেই যন্ত্রপাতি নিয়ে আরও কয়েক জন চলে আসেন। আনা হয় বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ কুকুরও। বৃহস্পতিবার বর্ধমানে পৌঁছে যায় দলটি। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল, এনআইএ-কে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্যই বোধ হয় এনএসজি-কে ডাকা হয়েছে।

কিন্তু পরে জানা যায়, শুধুমাত্র এনএসজি-র বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদেরই সাহায্য চাওয়া হয়েছে। বরং নিরাপত্তার দিকটি সামলাতে এক কোম্পানি বিএসএফ-কে ডেকে নিয়েছে এনআইএ। এ বার থেকে কোথাও হানা দেওয়ার সময়ে এনআইএ অফিসারদের সঙ্গে বিএসএফ জওয়ানরাই থাকবেন।

এ দিন বিকেলে বাদশাহি রোডে রেজাউলের বাড়িটিতে পৌঁছয় এনআইএ। জনা দশেক কর্মী ও দু’টি কুকুর (জলি ও জনসন)-সহ এনএসজি-র দলটি সেই সময়ে এক মেজরের নেতৃত্বে খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থলে ছিল। এনআইএ তাদের বাদশাহি রোডে ডেকে নেয়। প্রায় পাঁচশো মিটার রাস্তা হেঁটেই এনএসজি-র মেজর দল নিয়ে চলে আসেন ওই বাড়িতে। সেখানে বিস্ফোরক খোঁজার যন্ত্র দিয়ে তল্লাশি শুরু হয়। শৌচাগারের কাছে গিয়ে ওই যন্ত্র শব্দ করে। তার পরেই শুরু হয় চিরুনি তল্লাশি। শেষে দেখা যায়, শৌচাগারের ভিতরে চাটাই দিয়ে ফল্স সিলিং করা রয়েছে। সেখান থেকেই উদ্ধার হয় ৩৫টি আইইডি।

এর আগে সারাদিন মঙ্গলকোটের শিমুলিয়ার মাদ্রাসার ভিতরে-বাইরে চিরুনি তল্লাশি চালায় এনএসজি-র দলটি। সকাল ১০টা ৫৫ নাগাদ তারা শিমুলিয়ায় পৌঁছয়। কুকুর ও যন্ত্রপাতি নিয়ে মাদ্রাসার ভিতরে-বাইরে তল্লাশি চলে। মাদ্রাসার ছ’টি ঘর ছাড়াও লাগোয়া বাড়ি ও গোয়ালঘর ঘুরে দেখে তারা। বুধবারই মাদ্রাসার পাশের দু’টি পুকুরের জল তোলা হয়েছিল।

কিন্তু রাতে বৃষ্টি হওয়ায় ফের খানিকটা জল জমে যায়। এ দিন সকালে সেই জলও তুলে ফেলতে বলে এনএসজি। মেজর বলেন, তল্লাশির কাজ চালাতে ৫০ জন কর্মী লাগবে। মঙ্গলকোট থানার তরফে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ডেকে পাঠানো হয়।

বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ এসে পৌঁছন এনআইএ-র ডিআইজি অনুরাগ তনখা। তিনি এনএসজি-র অফিসারদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেন। পৌনে ১টা নাগাদ বেশ কয়েক জন সিভিক ভলান্টিয়ার মাদ্রাসা লাগোয়া জমিতে নেমে লাঠি দিয়ে মাটি ঠুকে ঠুকে পরীক্ষা করতে থাকেন। সেখান থেকে অবশ্য সন্দেহজনক কিছু মেলেনি। মাদ্রাসার ভিতর থেকেও তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। তবে বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করতে দেখা গিয়েছে এনএসজি-র অফিসারদের।

এনএসজি-র এই বিশেষ দলটির সাহায্য নেওয়ায় তদন্তে কতটা সুবিধে হবে এনআইএ-র?

এনএসজি-র ডিজি জয়ন্তনারায়ণ চৌধুরী এ দিন জানান, শুধু বিস্ফোরক সন্ধান করে নিষ্ক্রিয় করা নয়, তদন্তে নতুন দিশাও দিতে পারবে তাঁদের বাহিনী। ডিজির কথায়, ‘‘আমাদের বোমা বিশেষজ্ঞরা অন্যতম সেরা। পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনী ও সেনাবাহিনী থেকে বাছাই করা অফিসারদের নিয়ে এই দল গঠন করেছি আমরা। তা ছাড়া আমাদের বিশেষজ্ঞদের কাছে যত তথ্য ও অভিজ্ঞতা রয়েছে, দেশে আর কারও কাছে নেই। আমাদের অফিসারেরাই বিস্ফোরক দেখে বলে দিতে পারবেন, ওই বিস্ফোরক আগে ব্যবহার করা হয়েছে কি না।”

khagragarh bomb blast case NSG NIA bardwan Rezaul house recovered explosives IEDS Burdwan state news online state news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy