Advertisement
২৮ মার্চ ২০২৩

হামলার কথা জানাননি, টালিগঞ্জের ওসি বদলি

কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, লালবাজারের জারি করা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর বা ‘এসওপি’ মেনে রবিবার রাতে থানায় হামলার পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাননি ওসি অনুপবাবু।

টালিগঞ্জ থানা।—ফাইল চিত্র।

টালিগঞ্জ থানা।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৯ ০৪:৩৬
Share: Save:

টালিগঞ্জ থানায় হামলার ঘটনার জেরে তাঁকে তির্যক খোঁচা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পুরমন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিম অবশ্য বুধবার বলেন, ‘‘পার্থবাবু যা-ই বলুন, প্রশাসন প্রশাসনের কাজ করছে। প্রশাসনকে দোষ দিয়ে কোনও লাভ নেই। অপরাধী-দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়। যা খুশি করে পার পাওয়া যায় না।’’ ওই হামলার তিন দিনের মধ্যেই সরিয়ে দেওয়া হল টালিগঞ্জ থানার ওসি অনুপ ঘোষকে। গোয়েন্দা বিভাগে বদলি করা হয়েছে তাঁকে। টালিগঞ্জের ওসি-র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দক্ষিণ বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি সরোজ প্রহরাজকে। এ দিন দুপুরে লালবাজারের তরফে ওই বদলির নির্দেশিকা জারি করা হয়।

Advertisement

কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, লালবাজারের জারি করা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর বা ‘এসওপি’ মেনে রবিবার রাতে থানায় হামলার পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাননি ওসি অনুপবাবু। শহরের বুকে এক মডেলের নিগ্রহের ঘটনার পরেই গত ২৭ জুন লালবাজার এসওপি করে নির্দেশ দিয়েছিল, কোনও ঘটনা ঘটলে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এবং তা জানাতে হবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে। রবিবার রাতে থানায় হামলার পরে ওসি ওই দু’টি নির্দেশের কোনওটিই মানেননি। উপরন্তু, মদ্যপান করে গোলমাল করার অভিযোগে আটক যুবকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা না-নিয়ে শুধু তাঁর নির্দেশে ‘ক্যালকাটা পুলিশ অ্যাক্ট’-এর ‘ডিসঅর্ডারলি কনডাক্ট’-এর অভিযোগে জরিমানা করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।

থানায় দু’দফায় হামলা এবং পুলিশকে মারধরের ঘটনা ঘটলেও ওসি কড়া হাতে তা দমন করতে পারেননি বলে অভিযোগ তুলেছে পুলিশের নিচু তলা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, থানায় হামলা এবং পুলিশকর্মীকে মারধরের পরে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়া সত্ত্বেও তিনি আপসে মিটিয়ে নেওয়ায় ঘটনার পরের দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি।

লালবাজার জানিয়েছে, ঘটনার পরের দিন ইদের অনুষ্ঠানের শেষে পুলিশ কমিশনার-সহ পুলিশকর্তারা ওই ঘটনার কথা জানতে পারেন। ক্ষুব্ধ সিপি তীব্র ভাষায় তিরস্কার করেন ওসি-কে। তার পরেই ওসি-কে শোকজ করা হয়। ডিসি (সাউথ)-র কাছে রিপোর্ট চান সিপি। বুধবার সেই রিপোর্ট জমা পড়ে লালবাজারে। তার পরেই ওই ওসি-কে সরানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক পুলিশকর্তা জানান, পুলিশি কতটা নিষ্ক্রিয় ছিল, ওই দিন তা থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়েছে।

Advertisement

রবিবার যাকে ঘিরে টালিগঞ্জ থানায় গোলমালের সূত্রপাত, সেই রণজয় হালদারকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার সঙ্গে গ্রেফতার করা হয় টালিগঞ্জ থানায় হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত আকাশ বসু এবং তার সঙ্গী অক্ষয় রঞ্জনকে। এর আগে থানায় হামলা ও পুলিশ পেটানোর অভিযোগে চেতলার ১৭ নম্বর বস্তির স্থানীয় তৃণমূল নেত্রী এবং আকাশের পিসি পুতুল নস্কর ও তার বোন প্রতিমা ওরফে পূর্ণিমা দাসকে পাকড়াও করেছিল পুলিশ। বুধবার ধৃত পাঁচ জনকে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। সরকারি কৌঁসুলি সৌরীন ঘোষাল জানান, ধৃত পাঁচ জনই থানায় হামলা এবং মারধরে নেতৃত্ব দিয়েছিল। তদন্তকারীরা এ দিন মূল মামলার সঙ্গে পুলিশকর্মীদের গুরুতর আঘাত করার একটি ধারা যুক্ত করার আবেদন জানান। বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করে ধৃতদের শনিবার পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘ওসি-র বদলি নিয়ে কিছু বলার নেই। ওটা সরকার করেছে। তবে এ রাজ্যে পুলিশের উপরে যে-ভাবে গুন্ডাদের আক্রমণ হচ্ছে, তাতে পুলিশের মনোবল ভেঙে যাচ্ছে। তাদেরই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী দরকার বলে মনে হচ্ছে!’’

বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের বক্তব্য, সরকারে আসার আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, তিনি গুন্ডা কন্ট্রোল করেন। তার পরে এ রাজ্যে অনেক থানাতেই হামলা হয়েছে। এখন বোঝা যাচ্ছে, গুন্ডা-অপরাধীদের উপরে আর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। ‘‘সব নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পুলিশকেও মারধর করছে। নিরাপত্তা দিতে রাজ্য সরকার ব্যর্থ,’’ বলেন মান্নান।

বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, পুলিশেরও নিরাপত্তা নেই। থানায় ঢুকে পুলিশকে মারা যায়। আইনশৃঙ্খলার হাল এই ঘটনাতেই স্পষ্ট। ‘‘রাজ্যটা এখন তোলাবাজি, গুন্ডামি, বিশৃঙ্খলার উপরে চলছে,’’ বলেন সুজনবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.