Advertisement
E-Paper

সব বন্দিরই মুক্তির দিন গুনতে গুনতে মুক্তি বাবুলালের

গত ডিসেম্বর থেকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের মুক্তি দিচ্ছে রাজ্যের কারা দফতর।

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৬:৪৪
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সাজার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সেই সাজা শেষে কবে কারা মুক্তির স্বাদ পাবেন, তার হিসেব কষতেন তিনি। সব লিখে রাখতেন খাতায়। সেই কাজে বড্ড নিখুঁত তিনি। মঙ্গলবার থেকে সেই কাজ আর করতে হবে না বাবুলাল জানাকে। কারণ, দীর্ঘ আড়াই দশক পরে বহির্জগতে পাকাপাকি ভাবে সময় কাটাতে চলেছেন তিনি।

গত ডিসেম্বর থেকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের মুক্তি দিচ্ছে রাজ্যের কারা দফতর। এ দিন সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে দুই মহিলা-সহ ২৭ জনের নাম। চার দফায় সব মিলিয়ে এ-পর্যন্ত ১০১ যাবজ্জীবন দণ্ডিত বন্দি ছাড়া পেলেন।

বন্দিদের আচার-আচরণ কেমন, কতটা বদল হয়েছে মানসিকতায়, যে-অপরাধে সাজা খেটেছেন, এত দিনে তার যথেষ্ট দণ্ডভোগ হয়েছে কি না— মুক্তির ক্ষেত্রে এগুলিই বিচার্য। গুরুত্ব পায় পুলিশি রিপোর্টও। সাধারণত, ১৪ বছর জেল খাটার পরে এই সব বিষয়ে তাদের বক্তব্য রিপোর্ট আকারে জমা দিলে সরকারের ‘সেনটেন্স রিভিউ বোর্ড’ বা সাজা পুনর্বিবেচনা পর্ষদ সংশ্লিষ্ট বন্দির মুক্তির বিষয়টি পর্যালোচনা করে। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। আরও কয়েক জনের ক্ষেত্রে এই ভাবেই প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি খতিয়ে দেখছে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বাধীন সাজা পুনর্বিবেচনা পর্ষদ।

সেই অনুযায়ী কিছু দিনের মধ্যে ফের কয়েক জন বন্দি মুক্তির সুযোগ পেতে পারেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দিদের মুক্তির ক্ষেত্রেও এই ধরনের পর্ষদই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

এ দিন প্রকাশিত তালিকায় অন্য ২৬ জনের সঙ্গে ছিলেন বাবুলাল। ওড়িশার বালেশ্বরের টিপসিগোড়িয়া নামে একটি গ্রামের বাসিন্দা বাবুলাল একটি হত্যাকাণ্ডে আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে জেলে ছিলেন। যার মধ্যে বেশির ভাগ সময় কাটিয়ে ছিলেন বঙ্গের প্রেসিডেন্সি জেলে। সেখানকার ‘এস্টাব্লিশমেন্ট’ সংক্রান্ত কাজের ক্ষেত্রে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ছিল বাবুলালের ভূমিকা। মূলত, যাঁদের সাজার মেয়াদ নির্ধারিত করে দিত আদালত, সেই সব অভিযুক্তের জেলে আসার সময় থেকে তাঁদের ‘প্রব্যাব্‌ল ডেট রিলিজ়’ (পিডিআর) বা সম্ভাব্য মুক্তির দিন লিখে রাখা হয়। সেই কাজে সামান্য ক্রটি হত না বাবুলালের। মূলত করণিকের কাজ করতেন তিনি। তাই বাবুলালের মুক্তির কিছুটা প্রভাব অন্তত কিছু দিন সেই কাজে পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেক কারাকর্তা। জেলে থাকতেই থাকতেই কম্পিউটারের কি-বোর্ডের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেন বাবুলাল। তাই হাতে লেখাই হোক বা কম্পিউটারের কাজ, সবটাই হাসিমুখে করতেন তিনি। এক কর্তা বললেন, ‘‘প্রেসিডেন্সি জেলে বাবুলালকে চেনেন না, এমন কর্মী-আধিকারিক নেই বললেই চলে। খুবই ভাল ছিল বাবুলাল। যে এত দিন অন্য বন্দির ছুটির দিন লিখে রাখত, আজ সে-ও কারাগার থেকে বেরোল, এটা খুব ভাল।’’ বাবুলালের পাশাপাশি প্রেসিডেন্সি জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন সুখদেব দাস।

আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে ঢুকতে ‘বার কোড’

এ দিন মুক্তি পাওয়ার তালিকায় মেদিনীপুর সেন্ট্রাল জেলের ১১ জন বন্দি রয়েছেন। এ ছাড়া বারুইপুর, জলপাইগুড়ি ও বহরমপুর সেন্ট্রাল জেল থেকে এক জন করে বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে কারা দফতর। আলিপুর মহিলা জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন গীতা রায় ও বুলারানি ভট্টাচার্য। সিউড়ি জেলা জেল, পুরুলিয়া বিশেষ জেল, মেদিনীপুর মুক্ত জেল, বাঁকুড়া জেলা জেল থেকে এক জন করে ছাড়া পেয়েছেন। লালগোলা মুক্ত জেল থেকে তিন জন এবং দুর্গাপুর মুক্ত জেল থেকে দু’জন ছাড়া পেয়েছেন।

Prison
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy