ভদ্রকে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁচ ফেরিওয়ালাকে বাংলাদেশি সন্দেহে তিন দিন ধরে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে ওড়িশা পুলিশের বিরুদ্ধে। মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জ এবং সুতির ১০ জন পরিযায়ী শ্রমিককেও আটক করে ভদ্রক থানার পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে মুর্শিদাবাদের ১১ জন শ্রমিককে আটক করে জাজপুর থানার পুলিশ। তবে তাঁরা বুধবার ছাড়া পান।
পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁচ জনের মধ্যে দু’জনকে ছ’মাস আগেও একই কারণে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। তখন যাবতীয় নথি দেওয়া হয়েছিল। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক ইউনিস রিশিন ইসমাইল বলেন, “তথ্য নেওয়া শুরু করেছি। ওঁরা এখানকার প্রকৃত বাসিন্দা হলে, ফেরাতে সহযোগিতা করব।” আটক পরিযায়ীরা রয়েছেন ভদ্রক টাউন থানা লাগোয়া ক্যাম্পে। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক শেখ আবদুল দয়ান বলেন, “এর আগে, বাংলাদেশিদের সঙ্গে কটকের জগৎপুরে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধের পরে অভিযান হয়েছিল। এখন দিল্লিতে বিস্ফোরণের পরে ফের অভিযান হয়েছে। সন্দেহজনকদের আটক করে নথি যাচাই করা হচ্ছে।”
ভদ্রকের পুরাতন বাজারের সরকারনগরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন পূর্ব মেদিনীপুরের অনেক পরিযায়ী। সোমবার সন্ধ্যায় ভদ্রক টাউন থানার পুলিশ সরকারনগরে অভিযান চালায়। পাঁশকুড়া থানার রাধাবল্লবচক গ্রামের শেখ আলিমুদ্দিন, শেখ আব্বাস আলি, শেখ ঔরঙ্গজেব, শেখ খুবাইর ইসলাম ও তমলুক থানার ইসমাইল দিনকে তুলে নিয়ে যায়। ইসমাইল ও আব্বাসকে ছ’মাস আগেও পুলিশ চার দিন আটক রেখেছিল। পরে নথি দেখে ছাড়া হয়। সে কথা বললেও এ বার রেহাই মেলেনি বলে দাবি।
আব্বাসের মা সানোয়ারা বিবি বলেন, “পুলিশের ভয়ে আগে ছেলে ফিরে এসেছিল। কিন্তু কাজ না করলে খাব কী! ওখানে পুলিশকে কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না যে ওরা বাঙালি, বাংলাদেশি নয়।” শেখ আলিমুদ্দিনের মা আসিরন বিবি জুড়লেন, “আট বছর ধরে ছেলে ওড়িশায় ফেরি করে। এখন বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশি বলে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। আগে এমন হয়নি।” মুর্শিদাবাদের পাঁচ পরিযায়ী শ্রমিককে আটক করা হয় সোমবার রাতে। বাকি পাঁচ জনকে মঙ্গলবার সকালে। তাঁদের রাখা হয়েছে ভদ্রক বাসস্ট্যান্ডের পাশে যাত্রীনিবাসে।
তৃণমূলের তমলুক জেলা সভাপতি সুজিত রায়ের দাবি, “শুধু বাংলায় কথা বলায় ওড়িশার বিজেপিশাসিত সরকারের পুলিশ আমাদের শ্রমিকদের বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করেছে।” বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সিন্টু সেনাপতির বক্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গেও কেউ সন্দেহজনক আচরণ করলে পুলিশ আটক করে। যথাযথ নথি দেখালে ছেড়ে দেয়। ওড়িশাতেও নিশ্চিত তা-ই হবে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)