মাথার উপরে ঘুরছে কমিশনের ভিডিও ক্যামেরা। সরকারি সূত্রের খবর, তাই বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী সফরের সময়ে অভ্যাসমতো হেলিপ্যাডে স্বাগত জানাতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত পিছু হটেন মালদহ জেলার এক সরকারি অফিসার। কারণ, তাতে বিধিভঙ্গের অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের শাস্তির মুখে পড়ার আশঙ্কা। অতীতে মালদহের এক পুলিশ কর্তা এমনই বিপাকে পড়েছিলেন। তা ছাড়া এমন ঘটনা ঘটলে সমালোচনার মুখে পড়বেন মুখ্যমন্ত্রীও। তাই বুধবার পৌঁছনোর সময়ে তো বটেই, বৃহস্পতিবার তিনি ফিরে যাওয়ার সময়েও জেলার কোনও সরকারি অফিসারকে প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ঘেঁষতে দেখা যায়নি।
নির্বাচন কমিশনের কড়াকড়িতেই যে সবাই এমন তটস্থ, জনান্তিকে তা মেনে নিয়েছেন অনেকেই। বলছেন, যে ভাবে ফি ঘণ্টার ভিডিও ফুটেজ চাওয়া হচ্ছে, তাতে একটু এদিক-ওদিক হলেই মুশকিল!
বিতর্ক এড়াতে তৎপর তৃণমূলও। তাই মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক অফিসার-কর্মীরাও হিসেব কষে প্রশাসনের লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। যে অফিসার বুধবার হেলিপ্যাডে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে, তাঁকে নিরস্ত করেন ওঁরাই। ওই আধিকারিককে তাঁরা মনে করিয়ে দেন, কমিশনের বিধি অনুযায়ী শাসক দলের মন্ত্রীরা ভোট প্রচারে গিয়ে সরকারি কোনও অফিসারের সঙ্গে কথাবার্তা বললে বিধিভঙ্গের অভিযোগ উঠতে পারে। যে হেতু গোটা সফরই এ বার ভিডিও-কে ধরা হচ্ছে, তাতে জেলার কোনও অফিসার স্বাগত কিংবা বিদায় জানাতে হেলিপ্যাডে গেলেও বিতর্কে পড়তে হতে পারে শাসক দলের নেত্রীকেও— জানিয়ে দিয়েছেন এই কথাও। এর পরে অবশ্য অত্যুৎসাহী সেই অফিসার রণে ভঙ্গ দেন।
ভোট ঘোষণা হলে শাসক দলের মন্ত্রীরা কী করতে পারবেন আর কী পারবেন না, তা নিয়ে একটা আদর্শ আচরণবিধির অধ্যায়ই রেখেছে কমিশন। সেখানে স্পষ্ট বলা রয়েছে, ভোট প্রচারের সময়ে সরকারি কোনও কাজ বা পদক্ষেপ করতে পারবেন না মন্ত্রী। প্রচারের কাজে বেরিয়ে সরকারি খরচে গাড়ি, অতিথিনিবাসও ব্যবহার করতে পারবেন না তাঁরা। সরকারি কর্মীদেরও কোনও ভাবে প্রচারের সময়ে কাজে লাগাতে পারবেন না মন্ত্রী।
বাম জমানা থেকে তৃণমূল আমল, বিধি থাকলেও তা না-মানার অভিযোগ প্রচুর। কখনও সার্কিট হাউসে মন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশ অফিসার দেখা করতে গিয়েছেন, কখনও জেলাশাসক গিয়ে শাসক দলের মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন— ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে পুলিশ-প্রশাসনের একাধিক অফিসারের বিরুদ্ধে
এমন নানা অভিযোগ ওঠায় তাঁদের কমিশন বদলিও করে দিয়েছিল।
সরকারি সূত্রের খবর, সে জন্য চলতি বিধানসভা ভোটে শাসক দলের মন্ত্রীদের সফর যাতে ভিডিও ফুটেজ-এ ধরা হয়, এমনই নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। আর সেই নির্দেশ মেনেই বুধবার মালদহের নারায়ণপুরের মাঠে হেলিপ্যাডের অদূরে চার তলা বাড়ির মাথায় ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এক ফটোগ্রাফার। মুখ্যমন্ত্রীর হোটেলে যাতায়াতের পথে এবং সভাস্থলেও ছিল ভিডিও ক্যামেরার চোখ। এমনকী, বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পুলিশের এক অফিসারকে হোটেলে ঢুকতে দেখার পরে ভিডিও ক্যামেরাধারী কোথায়, তা নিয়ে খোঁজখবরও শুরু হয়। কিন্তু, পরে ওই পুলিশ অফিসার দাবি করেন, যে হেতু হোটেলের চত্বরেই হেলিপ্যাড, তাই তিনি গেট দিয়ে ঢুকে নিরাপত্তা বন্দোবস্ত দেখতে গিয়েছিলেন।
এর পরেই অফিসারটির স্বগতোক্তি, ‘‘মাথার ওপরে যে ক্যামেরা ঘুরছে সেটা সকলে জানেন। আর আমি জানব না!’’