বিডিও সাক্ষাৎ করে যাওয়ার পর কালোসোনা কালিন্দী। নিজস্ব চিত্র।
এক কালে আসর কাঁপাতেন। এখন বার্ধক্যের ছাপ সারা শরীরে। হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। বয়সের ভারে ন্যুব্জ এক কালে মঞ্চে সাড়া ফেলে দেওয়া পুরুলিয়ার নাচনি শিল্পী কালোসোনা কালিন্দী। অবস্থা এমনই যে, দিন কাটছে প্রায় অনাহারে। একার সংসারে দোসর কেবল অভাব। আর প্রায় কিছুই নেই!
রাজ্য মায় দেশের সবাই বিনামূল্যে রেশন সামগ্রী পান। কিন্তু কালোসোনার ভাঁড়ার বাড়ন্ত। এক সময় যাঁর তালে নাচত ছেলেবুড়ো, আজ তাঁর দু’বেলা ভাত জোটে না। পুরুলিয়া এক নম্বর ব্লকের সোনাইজু়ডি পঞ্চায়েত এলাকার মাগুরিয়া গ্রামে থাকেন কালোসোনা। আনন্দবাজার অনলাইনকে কালোসোনা জানান, পরিবারে কেউ নেই। কাগজ না থাকায় জোটে না সরকারি কোনও সাহায্য। পান না বিনামূল্যের রেশনও। প্রতিবেশীরাই দয়া করে দু’মুঠো খেতে দেন। সেটা খেয়েই বেঁচে থাকেন কালোসোনা। তার পর বালির মেঝেয় শতচ্ছিন্ন কাপড় পেতে শুয়ে থাকেন। দিন কাটে। অবস্থা ফেরে না।
কালোসোনার অবস্থার কথা আনন্দবাজার অনলাইনের কাছ থেকেই জানতে পারেন পুরুলিয়া এক নম্বর ব্লকের বিডিও অনিরুদ্ধ ঘোষ। কালোসোনার জন্য একটি কাপড়, কিছু চাল ও শুকনো খাবার পৌঁছে দেন তিনি। অনিরুদ্ধ বলেন, ‘‘কালোসোনার যাতে স্থায়ী সুরাহা করা যায়, তা আমরা দেখছি। আপাতত অঙ্গনওয়াড়ি থেকে এক বেলা রান্না করা খাবার পৌঁছে দেব। আর যত দিন ওঁর রেশন কার্ড না হচ্ছে, কুপনের ব্যবস্থা করছি। ভোটার তালিকায় ওঁর নাম আছে। সেটা দিয়ে আধার কার্ড করা যায় কি না দেখছি। আধার হলে একটা পেনশনেরও ব্যবস্থা করা যাবে।’’
স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান সুনীল সহিস বলেন, ‘‘কালোসোনার আধার কার্ড না থাকায় যত সমস্যা। তবুও আমরা আবার চেষ্টা করব।’’
জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলাশাসকদের বলে থাকেন, কাগজ, নথি না থাকলেও গরিব ও প্রান্তিক মানুষকে সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। খালি হাতে ফেরানো যাবে না কাউকে। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছ থেকে কালোসোনার খবর পেয়ে উদ্যোগী হয়েছেন সরকারি আধিকারিকরা। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে কালোসোনা কিছু খাবার হাতে পেয়েছেন। আর পেয়েছেন ভবিষ্যতে খাবার পাওয়ার প্রতিশ্রুতি। আপাতত, এতেই মুখে হাসি ধরে না অশীতিপর কালোসোনার। সরকারি আধিকারিকদের দু’হাত তুলে বার বার আশীর্বাদ করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy