মাঝদুপুরে শান্ত-নিঝুম পাড়াটা আচমকা কেঁপে উঠল গুলি-বোমার শব্দে!
হাতেগোনা যে ক’টা লোক রাস্তায় ছিলেন, কিছু না বুঝেই দৌড়ে পালালেন। যাঁরা বাড়িতে ছিলেন, বেরিয়ে দেখলেন, এক যুবক রাস্তায় পড়ে ছটফট করছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীর। খোলা রিভলভার হাতে ছুটে পালাচ্ছে জনাচারেক ছেলে। তার পরে একটি পাঁচিল টপকে তারা পগার পার। তখনও অনেকেই জানেন না, বোমার স্প্লিন্টার লেগে জখম হয়েছেন পাড়ার এক মহিলাও।
বলিউড়ের কোনও ক্রাইম থ্রিলারের দৃশ্য নয়। বৃহস্পতিবার এমন নাটকীয় ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেন চন্দননগরের হরিদ্রাডাঙার বাসিন্দারা। গুলিতে জখম বছর একুশের অনির্বাণ মিস্ত্রি নামে ওই যুবক চুঁচুড়ার লেনিন নগরের বাসিন্দা। তাঁর পেটে দু’টি গুলি লাগে। তাঁকে প্রথমে চন্দননগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে স্থানান্তরিত করানো হয় কলকাতার হাসপাতালে। বোমার স্প্লিন্টারে জখম সোমা সাহার প্রাথমিক চিকিৎসা হয়।
পুলিশ জানায়, অনির্বাণের বিরুদ্ধে নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ওই যুবক তাঁর উপরে হামলার অভিযোগ এনেছেন লেনিননগরেরই দীপঙ্কর সরকার ওরফে দীপের বিরুদ্ধে। দীপের বিরুদ্ধেও নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন হাজতবাসের পরে সে মাসখানেক আগে জামিন পায়। থানায় দীপ ও তার শাগরেদদের নামে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের হয়েছে অনির্বাণের পরিবারের পক্ষ থেকে। দুষ্কৃতীদের ধরতে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
হুগলির পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, পুরনো শত্রুতার জেরেই ওই হামলা বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলা যাবে না।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অনির্বাণ পেশায় স্কুলের গাড়ির চালক। এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ তিনি মোটরবাইকে চন্দননগর থানার কাছে একটি স্কুলে যাচ্ছিলেন এক পড়ুয়াকে আনতে। হরিদ্রাডাঙা মোড়ে একটি প্রাথমিক স্কুলের সামনে চার দুষ্কৃতী তাঁর পথ আটকায়। প্রথমে দু’পক্ষের বচসা বাধে। তার পরে ওই ঘটনা। অনির্বাণ লুটিয়ে পড়ে দুষ্কৃতীরা দু’টি বোমাও ছোড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ গিয়ে অনির্বাণকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে অনির্বাণের মোটরবাইক, একটি তোয়ালে এবং কয়েকটি চটি উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তকারীদের অনুমান, অনির্বাণ যে ওই পথে আসবেন, দুষ্কৃতীদের কাছে আগাম সে খবর ছিল।
অনির্বাণের বাবা অমলবাবু বলেন, ‘‘এক মহিলাকে নিয়ে দীপের সঙ্গে ছেলের গোলমাল হয়েছিল। পরে তা মিটেও যায়। কিন্তু ও যে ছেলেকে খুনের চেষ্টা করবে, ভাবিনি।’’
ঘটনার জেরে আতঙ্কে ভুগছেন হরিদ্রাডাঙার বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, দিনেদুপুরে দুষ্কৃতীরা যে ভাবে বোমা ছুড়ে, বন্দুক চালিয়ে চলে গিয়েছে, তা এ শহরে সচরাচর হয় না। এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, ‘‘যে ভাবে অপরাধের পরেও দুষ্কৃতীরা খোলা রাস্তায় অস্ত্র উঁচিয়ে দৌড়ল, তা বেশ উদ্বেগের ব্যাপার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy