Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

প্রকট তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব

ডাকাতিতে অভিযুক্ত এক তৃণমূল নেতাকে ঘিরে শাসক দলের অন্তর্দ্বন্দ্বই প্রকট হয়ে গেল। তৃণমূলের রাজগঞ্জ ব্লকের সুখানি অঞ্চল কমিটির সহ সভাপতি মনোরঞ্জন দাস নামে ওই নেতার বিরুদ্ধে ডাকাতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ করেছিলেন জলপাইগুড়ির ফাটাপুকুরের বাসিন্দা এক ব্যবসায়ী সুধীররঞ্জন ধাড়া।

ডাকাতির খবর শুনে ব্যবসায়ীর বাড়িতে গৌতম দেব। —নিজস্ব চিত্র।

ডাকাতির খবর শুনে ব্যবসায়ীর বাড়িতে গৌতম দেব। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০২:০৫
Share: Save:

ডাকাতিতে অভিযুক্ত এক তৃণমূল নেতাকে ঘিরে শাসক দলের অন্তর্দ্বন্দ্বই প্রকট হয়ে গেল। তৃণমূলের রাজগঞ্জ ব্লকের সুখানি অঞ্চল কমিটির সহ সভাপতি মনোরঞ্জন দাস নামে ওই নেতার বিরুদ্ধে ডাকাতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ করেছিলেন জলপাইগুড়ির ফাটাপুকুরের বাসিন্দা এক ব্যবসায়ী সুধীররঞ্জন ধাড়া। শনিবার রাতে ওই ডাকাতি হয়। সেই রাতেই মনোরঞ্জনবাবুকে ধরে পুলিশ। তারপরে মনোরঞ্জনবাবুকে ছাড়ানোর জন্য রাজগঞ্জ থানা ঘিরে রেখে বিক্ষোভ দেখান একদল তৃণমূল নেতাকর্মী। ছিলেন রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়ও। তিনি জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। শেষপর্যন্ত মনোরঞ্জনবাবু ছাড়াও পেয়ে যান। অভিযোগ ওঠে পুলিশকে চাপ দিয়ে শাসক দলের ওই নেতারা মনোরঞ্জনবাবুকে ছাড়িয়েছেন।

কিন্তু উল্টো দিকে ওই ব্যবসায়ী সুধীরবাবুর বাড়িতে সকালে গিয়েই দেখা করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। যদিও ওই সময় থানায় বিক্ষোভ চললেও সেখানে তিনি যাননি।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির কিছু নেতার দাবি, গৌতমবাবুর মতো ব়়ড় মাপের নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে বলেই সুধীরবাবু এক ব্লক স্তরের তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পেয়েছেন। তাঁদের দাবি, তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী এখানে অভিযোগকারী ও অভিযুক্তের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাই পুলিশও কী করবে ভেবে পাচ্ছিল না। তাদের আচরণেও এই দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়েছে। তাই পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার পরই তাড়াতাড়ি অভিযুক্তকে ধরে। কিন্তু তারপরে তাঁকে ছেড়েও দিতে বাধ্য হয়। তবে সৌরভবাবুর দাবি, ‘‘এটা আদৌ কোনও রাজনৈতিক ঘটনাই নয়। তাই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরও প্রশ্ন ওঠে না।’’ তৃণমূলের কর্মী সমর্থকেরা যে থানায় গিয়েছিলেন, তা-ও তিনি স্বীকার করতে চাননি। সৌরভবাবুর দাবি, ‘‘এলাকার লোকজন অভিযুক্তকে ছাড়াতে থানার সামনে জড়ো হয়েছিলেন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বিধায়ককে সেখানে যেতে বলেছিলাম।’’ গৌতমবাবুরও বক্তব্য, ‘‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও বিষয় নেই। আমরা অত্যন্ত স্বচ্ছ। দোষীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।’’

যাঁকে নিয়ে সারা দিন এই হইচই, তিনি এলাকায় পরিচিতি মনু ডাক্তার নামে। পেশায় হাতুড়ে চিকিৎসক। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, মনু ডাক্তার সজ্জন ব্যক্তি। জমি নিয়ে বিবাদের জেরে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। জমি নিয়ে কী বিবাদ হয়েছিল?

তৃণমূলের রাজগঞ্জ ব্লকের সুখানি অঞ্চল কমিটির সভাপতি অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সুধীরবাবুর কাছ থেকে ১৯৯৮ সালে রাস্তার পাশের প্রায় সাত বিঘা জমি ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় কিনে নেন মনু ডাক্তার। জমি কেনার পরে মনোরঞ্জনবাবু দেওয়াল দেন। সেখানে একটি ঘর তোলেন। অরিন্দমবাবু বলেন, “এর পরে সুধীররঞ্জন নানা অছিলায় জমি ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করেন। দেওয়াল ভেঙে দেন। কিন্তু মনু ডাক্তার জমি ছাড়তে রাজি হননি। ওই সংঘাতের জেরে তাঁকে ডাকাতির ঘটনায় ফাঁসানো হয়েছে।” একই কথা বলে এদিন থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে রমজান মাসে কান্নায় ভেসেছেন মনোয়ারা বেগম। তাঁর কথায়, “আমার প্রতিবেশী ওই ডাক্তার। এমন মানুষ হয় না। সে করবে ডাকাতি!”

মনুবাবুর বড় ছেলে অমিত দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। ছোট ছেলে অভিজিৎ নার্সারিতে। বাবা থানায় দেখে নির্বাক অমিত। মনুবাবুর ভাইপো মুন্না বনিক জানান, ওই জমির দাম এখন প্রায় দেড় কোটি টাকা। এখন ২০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সেটা ফেরত পেতে সচেষ্ট হয়েছে ওই ব্যবসায়ী।

যদিও সুধীরবাবুর পরিবার জানান, প্রথমত জমি বিক্রি করা হয়নি। আর্থিক সমস্যার জন্য বন্ধক দেওয়া হয়। কিন্তু সেটাই মালিকানা হিসেবে দেখতে শুরু করেন মনোরঞ্জনবাবু। রবিবার বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ কর্তারা ডিগবাজি খেয়ে মনোরঞ্জনবাবুকে গ্রেফতারের কথা পর্যন্ত অস্বীকার করছেন দেখে ধাড়া পরিবার পরে মুখে কুলুপ আঁটেন। শুধু সুধীরবাবুর ভাইঝি দেবযানী ধাড়া মোবাইল ফোনে কথা বলতে রাজি হন। তাঁর বক্তব্য, “আমরা সন্দেহবশত এক জনের নাম বলেছি।”

প্রদেশ তৃণমূল সম্পাদক কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন, “মনু এলাকায় খুবই জনপ্রিয়। ওই কারণে এলাকার বাসিন্দারা অভিযোগ মানতে পারেনি।” বিরোধীরা বলছেন, মনোরঞ্জনবাবুর স্ত্রী রাজগঞ্জের পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য। এবার মনোরঞ্জনবাবু নিজে দাঁড়িয়েছিলেন। জিততে পারেননি।

সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য বলেন, “জনপ্রিয় হলে তাঁকে গ্রেফতার করতে পারবে না, এটা কোন ধরনের কথা! আসলে দাদাগিরি সর্বত্র চলছে।” একই বক্তব্য জেলা কংগ্রেস সভাপতি নির্মল ঘোষ দস্তিদারের। জেলা বিজেপি সভাপতি দীপেন প্রমাণিক বলেন, “রাজ্য জুড়ে উচ্ছৃঙ্খলতা চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jalpaiguri tmc open group rivalry tmc group rivalry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE