Advertisement
০৫ মে ২০২৪
চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে

নাবালকের মাথায় অস্ত্রোপচার করে খুলির অংশ বসানো নিয়ে দ্বন্দ্ব

ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয় তিন বছরের রণজিৎ দে। মাথায় চোট লাগে তার। হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করার সময় তার খুলির একটি অংশ খুলে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। অস্ত্রোপচারের পরে ডাক্তারবাবুরা জানান, খুলি ঠিক হয়ে গিয়েছে।

রণজিৎ দে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।

রণজিৎ দে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:২১
Share: Save:

ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয় তিন বছরের রণজিৎ দে। মাথায় চোট লাগে তার। হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করার সময় তার খুলির একটি অংশ খুলে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। অস্ত্রোপচারের পরে ডাক্তারবাবুরা জানান, খুলি ঠিক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু চার বছর পরে সাত বছরের বালকের মাথায় অস্ত্রোপচার করে খুলির অংশ বসানো হয়েছে কি না, তা নিয়েই দ্বন্দ্ব। চিকিৎসকদের দাবি, তা বসানো হয়েছে, সিটি স্ক্যান-সহ যাবতীয় রিপোর্টে তার প্রমাণও রয়েছে। উল্টো দিকে, রোগীর বাড়ির লোকের অভিযোগ, মিথ্যা দাবি করছে হাসপাতাল। খুলির অংশ বসানো হয়নি। বাচ্চার মাথার সে জায়গা নরম হয়ে রয়েছে, হাত দিলে ঢুকে যাচ্ছে। বালক অসুস্থও হয়ে পড়ছে।

প্রতিকার চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি লিখেছে রামপুরহাটের রামরামপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই পরিবার। অভিযোগ জানিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি নির্মল মাজি এবং বীরভূমের জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীর কাছে।

অভিযোগ পেয়ে স্বাস্থ্য দফতর নড়েচড়ে বসেছে। ইতিমধ্যে কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ওই শিশুর চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র চেয়ে পাঠিয়েছে তারা। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পেলে কমিটি গড়ে তদন্ত করাই। এ ক্ষেত্রেও তেমনই হবে।’’

২০১২ সালের ১৫ জানুয়ারি বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয় তিন বছরের রণজিৎ দে। মাথায় চোট লাগে তার। চিকিৎসার জন্য রামপুরহাট হাসপাতাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল হয়ে তাকে কলকাতার ইএম বাইপাস লাগোয়া ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রণজিতের বাবা রামরতন দে পেশায় ট্যাক্সিচালক। তিনি জানান, ওই হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করার সময় রণজিতের খুলির একটি অংশ খুলে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।

ওই অংশটি লাগানোর জন্য ২০১২-র সেপ্টেম্বরে আবার ওই হাসপাতালে রণজিতের অস্ত্রোপচার হয়। রামরতনবাবুর অভিযোগ, ‘‘অস্ত্রোপচারের পরে ডাক্তারবাবুরা জানান, খুলি ঠিক হয়ে গিয়েছে। তখনই ওর মাথার কিছু অংশে হাত দিয়ে আমাদের নরম মনে হয়েছিল। কিন্তু ডাক্তারেরা বলেছিলেন, কিছু দিন পরে ঠিক হয়ে যাবে। মাস গড়িয়ে গেলেও তা হয়নি। উল্টে ছেলের নানা রকম শারীরিক অসুবিধা শুরু হয়।’’ সাত বছরের রণজিতের কথায়, ‘‘মাথায় ব্যথা আছে এখনও। রং চিনতে পারি না। মাঝে-মাঝে সব অন্ধকার হয়ে যায়।’’ পরিবারটির দাবি, রণজিৎকে নিয়ে এর পরে দক্ষিণ ভারত ও কলকাতার একাধিক হাসপাতালে ঘুরে কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে ফেলেছে তারা। রামরতনবাবুর অভিযোগ, ‘‘সব জায়গাতেই ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, খুলির অংশ না লাগিয়েই টাকা নেওয়া হয়েছে। এর প্রতিকার চাই।’’

অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক আশিস ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, ‘‘খুলির অংশ লাগানোর পরে রামরতনবাবুকে সিটি স্ক্যান-সহ সব রিপোর্ট দেখিয়ে, বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বার বার বলা হয়েছিল, ছেলের ২০-২১ বছর বয়স হলে খুলির অংশগুলি শক্ত হয়ে যাবে। তত দিন খুলিতে ‘টাইটেনিয়াম নেস’ নামে একটা জিনিস লাগিয়ে রাখতে হবে। উনি সন্তুষ্ট হয়ে চলেও গিয়েছিলেন। এখন সব জেনেও মিথ্যা অভিযোগ করছেন কেন, বুঝতে পারছি না।’’ আশিসবাবুর দাবি, কিছু রোগীর ক্ষেত্রে খুলির অংশ লাগানোর পরে তা মস্তিষ্কে মিশে যায়। এ ক্ষেত্রেও তেমন হয়েছে। এ দাবি সমর্থন করেছেন কলকাতার একাধিক নিউরো-সার্জেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, যুক্তির পক্ষে প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রমাণই মজুত রয়েছে তাদের কাছে।

চাপান-উতোরের এই গণ্ডীর বাইরে রয়েছে রণজিৎ। তার রাগের কারণ, ‘‘স্কুলে যেতে পারি না! বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে পারি না! এক দম ভাল লাগে না আমার!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

conflict ranjit dey skull operation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE