দত্তপুকুরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। —নিজস্ব চিত্র।
এগরাকাণ্ডের পর এ বার উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর। রাজ্যের জায়গায় জায়গায় বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলছেন বিরোধীরা। শাসকদল এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাকে ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত করার অভিযোগ তুলছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে শুরু করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। অন্য দিকে, শাসক শিবির দাবি করেছে, দত্তপুকুরে বাজি বিস্ফোরণের ঘটনার নেপথ্যে স্থানীয় এক আইএসএফ নেতা রয়েছেন। তিনি বাইরে থেকে লোক এনে বাজি তৈরি করাচ্ছিলেন। পাল্টা, তৃণমূলের স্থানীয় দুই নেতার দিকে আঙুল তুললেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি।
রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বিস্ফোরণের জোরালো শব্দে কেঁপে ওঠে দত্তপুকুরের মোচপোল। বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের সহযোগিতায় এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই রমরমিয়ে বাজির কারবার চালানো হচ্ছিল। একাধিক বার অভিযোগ জানিয়েও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দাবি, শুধু একটি বাড়িতেই নয়, এলাকার একাধিক বাড়িতে প্রশাসনের ‘যোগসাজশ’-এ অবৈধ বাজির কারবার চলছে। তাতে পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও ‘যুক্ত’। বিস্ফোরণের ঘটনার পর সামসুল নামে এক ব্যক্তির বাড়িও ভাঙচুর করেন স্থানীয়েরা। তাঁদের অভিযোগ, তিনিই বেআইনি বাজির কারবার চালাচ্ছিলেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী রথীন ঘোষ দাবি করেছেন, এই ঘটনার পিছনে স্থানীয় এক আইএফএফ নেতার হাত রয়েছে। তিনিই মুর্শিদাবাদ থেকে লোক এনে বেআইনি ভাবে বাজি তৈরি করাচ্ছিলেন। রথীন বলেন, ‘‘এই বুথে আইএসএফ জিতেছে। স্থানীয় আইএসএফ নেতা রমজান আলি রয়েছেন এটার পিছনে। আমরা জানতাম না। পুলিশও জানত না।’’ পাল্টা নওশাদ বলেন, ‘‘স্থানীয়েরা প্রশাসনকে একাধিক বার বেআইনি বাজি তৈরির কথা জানিয়েছিল। আইএসএফ যদি বাজি কারখানা চালাত, তা হলে কি প্রশাসন চুপ করে থাকত? বেআইনি বাজি কারবারের পিছনে তৃণমূলের দুই নেতা রয়েছে— কেরামত আলি আর আজিবর আলি। ওরা ভানু বাগের (এগরাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত) মতো পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ওদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। অনেক তথ্য পাওয়া যাবে। যারা আমাদের নামে অভিযোগ করছে, তারাই এই সব বাজি কারখানা থেকে টাকা পেত।’’
গোটা রাজ্যই বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ করতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। সুকান্ত বলেন, ‘‘এই অপদার্থ দল যত দিন ক্ষমতায় থাকবে, তত দিন রাজ্যের মানুষ মরতেই থাকবে। স্থানীয়দের থেকে খবরাখবর নিচ্ছি। তার ভিত্তিতে একটা রিপোর্ট তৈরি করে অমিত শাহকে পাঠাব। এনআইএ তদন্ত চাইব।’’ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘‘এগরার ঘটনার পর বেআইনি কারখানা আর থাকবে না বলেই আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। বেআইনি কারবারের সঙ্গে তৃণমূল জড়িত।’’ সেলিমও তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘‘রাজ্য সর্বনেশে বারুদের স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে! এই দুর্নীতি-দুষ্কৃতী চক্রকে না ভাঙলে এ রকমই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে আমাদের সভ্যতা। তৃণমূলী মুক্তাঞ্চল মানেই পুলিশের-প্রশাসনের নাকের ডগায় বেআইনি কাজ-কারবার।’’
এর প্রেক্ষিতে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘দত্তপুকুরের ঘটনাটা অত্যন্ত মর্মান্তিক। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি সব কিছু বলা সম্ভব নয়। পুলিশ-প্রশাসন তদন্ত করেছে। এই দুর্ঘটনা যে কোনও ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে এবং কারও হাতে থাকে না। যারা শুধু বাজি শিল্পকে দায়ী করছে, তাদের সঙ্গে একমত হতে পারছি না, কারণ বহু মানুষের কর্মসংস্থান জড়িয়ে। কিন্তু আমাদের দেখতে হবে, সেখানে কোনও অনিয়ম ছিল কি না। মুখ্যমন্ত্রী কড়া বার্তা দিয়েছেন। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন কী ভাবে তা পালন করছে, এগুলো দেখতে হবে। বিরোধীদের কাজ শুধু চিলচিৎকার করা। পুলিশ-প্রশাসন দেখছে। সঠিক তথ্য সামনে আসবে। তার আগে একতরফা ভাবে বাজি শিল্পকে দোষারোপ করা ঠিক নয়। তা হলে সিপিএম জমানার কথাও টানতে হবে। কিন্তু এই পরিস্থিতিটা তুল্যমূল্য বিচারের নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy