E-Paper

কেন শুধু ২০০২-এর তালিকা গ্রাহ্য, সবর্দলে প্রশ্নে বিদ্ধ কমিশন

এনআরসি-আতঙ্কে আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনাকেও এসআইআর-এর সঙ্গে সম্পর্কিত বলে দাবি করেছে তৃণমূল এবং সিপিএম। যদিও বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, এ রাজ্যে এনআরসি হচ্ছে না। ফলে, এনআরসি-র ভীতি তৈরি করছে তৃণমূলই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:২৯

—প্রতীকী চিত্র।

রাজ্যে ভোটার তালিকাযর বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) ঘিরে কার্যত এক সুরে নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রশ্ন তুলল তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএম এবং কংগ্রেস। রাজ্যের মুখ‍্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরে মঙ্গলবার সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়েছিল এসআইআর নিয়ে। সেখানে নাগরিকত্ব যাচাইয়ে কমিশনের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তিন দল। একই সঙ্গে ২০০২ সালের ভোটার তালিকাকেই কেন একমাত্র মান্যতা দেওয়া হচ্ছে, প্রশ্ন তোলা হয়েছে তা নিয়েও। তিন দলেরই দাবি, ২০০২ সালের পরে হওয়া নির্বাচনগুলিতে থাকা ভোটার তালিকাকেও মান্যতা দিতে হবে কমিশনকে।

এমনকি, এনআরসি-আতঙ্কে আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনাকেও এসআইআর-এর সঙ্গে সম্পর্কিত বলে দাবি করেছে তৃণমূল এবং সিপিএম। যদিও বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, এ রাজ্যে এনআরসি হচ্ছে না। ফলে, এনআরসি-র ভীতি তৈরি করছে তৃণমূলই। তাই যদি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে থাকে, তবে তার দায় তৃণমূলেরই। বৈঠকে বিজেপির অভিযোগ, তাদের নিযুক্ত বুথ লেভল এজেন্টদের (বিএলএ) হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আইন না মেনে নিয়োগ হয়েছেন ৬ হাজার বুথ লেভল অফিসার (বিএলও)। এ রাজ্যে এবং বিহারের ভোটার তালিকায় প্রশান্ত কিশোরের নাম থাকার অভিযোগও করেছে বিজেপি।

পরে সিইও মনোজ আগরওয়াল বলেছেন, ‘‘কমিশনের নিয়ম-বিধি মেনে আমরা চলব।এক জনও যোগ্য ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবেন না, কমিশন তা নিশ্চিত করছে। সংবিধানের ৩২৪-৩২৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী, নিখুঁত ভোটার তালিকা তৈরির অধিকার রয়েছে কমিশনের।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘সংবিধানের ৩২৬ ধারা বলছে, বৈধ নাগরিকেরাই ভোটার থাকতে পারেন। ফলে, এ ক্ষেত্রে কমিশনের এক্তিয়ার স্পষ্ট।’’

বৈঠকের পরে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা অরূপ বিশ্বাস বলেছেন, ‘‘এসআইআর, এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে আত্মহত্যা করছেন অনেকে। ২০০২ সালের এসআইআরে দু’বছর সময় লেগেছিল। দু’মাসে কী ভাবে হয়? মা-বাবার জন্মের শংসাপত্র দেওয়া হবে কী ভাবে? নাগরিকত্বের শংসাপত্র দিতে পারে না কমিশন।’’ মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ‘‘এক জন যোগ্য ভোটারের নাম কাটা গেলে বিরোধিতা হবে। ২০০২ সালের পরে যত লোকসভা হয়েছে, সেগুলো কি অবৈধ? তবে তো প্রধানমন্ত্রীকে ইস্তফা দিতে হয়! কমিশন-বিজেপিকে একসঙ্গে চলতে দেব না। দরকারে পা ভেঙে দেব!’’

সিপিএমের তরফে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘মনে হয়, সিইও পুরোপুরি প্রস্তুত নন। নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরি কমিশনের দায়িত্ব। নাগরিকত্ব বিচারের দায়িত্ব তাদের নয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বর্ধিত দফতর হিসাবে কমিশনকে ব্যবহার করা হচ্ছে? ২০০২ সালের তালিকাকে মানদণ্ড কে স্থির করল? বাকি নির্বাচনগুলির তা হলে কী হবে? সিএএ-এসআইআর একসঙ্গে চলে কী করে। এটা কি আরএসএসের প্রকল্প?’’ কংগ্রেসের তরফে প্রসেনজিৎ বসু, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়েরা দাবি করেছেন, ২০০২ সালে পূর্ণাঙ্গ এসআইআর হয়নি। ওই সময়ের পরের বছরগুলির ভোটার তালিকা বিবেচনার দাবির পাশাপাশি বেশ কিছু পদ্ধতিগত প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।

বিজেপির প্রতিনিধি শিশির বাজোরিয়ার পাল্টা দাবি, ‘‘তৃণমূলের সুর বদলাচ্ছে। আগে তারা বলত, এক জন ভোটার বাদ গেলে ধর্না দেব, এখন তারা শুধু বৈধ ভোটারের কথা বলছে! এনআরসি জুজু তৃণমূল দেখাচ্ছে। সত্যিই সেই আতঙ্কে আত্মহত্যা হলে তার দায় তৃণমূলেরই।’’ তাঁর অভিযোগ, জন সুরাজ পার্টির নেতা প্রশান্ত কিশোর (পি কে) বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের একটি এলাকার ভোটার। মুখ্যমন্ত্রী কম্পার্টমেন্টাল পেয়ে যেখান থেকে পাশ করেছেন। বিজেপির বিএলএ-দের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যে ৬০০০ বিএলও ভুল ভাবে নিযুক্ত হয়েছেন। তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘কমিশনের তরফে ২৪ জুন এসআইআরের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরে এত প্রশাসনিক রদবদল কী ভাবে হয়, কমিশনকে প্রশ্ন করা হয়েছে।’’

সিইও অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘২০০২ সালে এসআইআর-এর সময়ে এত প্রযুক্তি-পদ্ধতি ছিল না। বিহারে নিখুঁত ভাবে এসআইআর করা হয়েছে স্বল্প সময়েই। যদিও সেখানকার এবং এখানকার ভোটার কাছাকাছিই। একটি বুথে কম-বেশি ৯৫০ ভোটার থাকেন, পরিবার সংখ্যা ২০০-৩০০। দিনে ৫০টা বাড়ি যাওয়া অসম্ভব নয়।’’ বিএলও-দের নিরাপত্তার প্রশ্নে সিইও-র বক্তব্য, ‘‘আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত। তারা নিশ্চয়ই সহযোগিতা করবেন। কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোটের সময়েই একমাত্র ডাকা হয়।’’ পি কে-কে শো-কজ় করেছে কমিশন, সেই প্রসঙ্গে সিইও জানিয়েছেন, বিহারের সিইও একটা ভোটার কার্ডের নম্বর দিয়ে তথ্য চেয়েছিলেন, সেটা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এরই পাশাপাশি সিইও আগরওয়াল আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘বিপর্যয়ের কারণে যাদের নথি নষ্ট হয়েছে, তা তৈরি করে দিচ্ছেন জেলাশাসকেরা। কী নথি ছিল, তার রেকর্ড সরকারের কাছে থাকে। ফলে, সমস্যা নেই।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আগের তালিকার সঙ্গে যাঁদের কোনও মিল পাওয়া যাচ্ছে না, তাঁদের অনেকগুলোর মধ্যে একটা নথি দিতে হবে। সমস্যা থাকার কথা তো নয়! কোনও কারণে কারও নাম বাদ গেলে তিনি ইআরও-র কাছে আবেদন করতে পারেন। দ্বিতীয় ধাপে জেলাশাসকের কাছে এবং তৃতীয় ধাপে সিইও-কে আবেদন করতে পারেন তিনি। বাদ পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

TMC Election Commission BJP CPIM NRC CAA

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy