E-Paper

ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্য শিবিরের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন

রাজ্যে ডাক্তার, নার্স, এবং টেকনিশিয়ানের অভাবও আছে। তার উপরে ভ্রাম্যমাণ শিবিরের জন্য ব্লক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান নিয়ে যাওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:১৬

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

নিজের নির্বাচনী এলাকায় ‘সেবাশ্রয়’ প্রকল্প চালু করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ তথা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমান্তরালে এই প্রকল্প নিয়ে নানা প্রশ্নও উঠেছিল। এ বার বিধানসভা ভোটের আগে কার্যত ‘সেবাশ্রয়’ প্রকল্পের ধাঁচেই স্বাস্থ্য শিবির চালু করছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। ‘ঘটনাচক্রে’ রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। সূত্রের খবর, সরকারি এই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা শিবির’ বা মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিট (এমএমইউ)।

এই ভ্রাম্যমাণ শিবিরের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, কোনটি বেশি জরুরি? সরকারি হাসপাতালে সাধারণ অ্যাম্বুল্যান্স, নিশ্চয়যান এবং মাতৃযানের সংখ্যা বাড়ানো, নাকি কোটি-কোটি টাকা খরচ করে এমএমইউ যান নিয়ে সপ্তাহে গাড়ি-প্রতি ৬টি করে মেডিক্যাল ক্যাম্প করা? উল্লেখ্য, মোট ২১০টি মোবাইল মেডিক্যাল ইউনিট গাড়ি কিনেছে সরকার। সূত্রের খবর, এক-একটি গাড়ির দাম ৪০ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ মোট ৮০ কোটি টাকা খরচ করেছে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সম্প্রতি এর মধ্যে ১১০টি এমএমইউয়েরউদ্বোধন করেছেন।

অনেকেই স্বীকার করছেন, রাজ্যের আর্থিক অবস্থার যা দশা এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর যা হাল তাতে এই টাকায় সাধারণ অ্যাম্বুল্যান্স কিনলে অনেক বেশি মানুষ লাভবান হতেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে রোগীরা সরকারি সাধারণ অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার অপ্রতুলতায় হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। এর বড় অংশ প্রসূতি ও সদ্যোজাত। প্রয়োজনের সময় তাঁরা অ্যাম্বুল্যান্স পাচ্ছেন না, হাসপাতালে পৌঁছতে পারছেন না অথবা কার্যত ঘটিবাটি বেচে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের চড়া ভাড়া মেটাচ্ছেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, রাজ্যে সব সরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে রাজ্যে খাতায়-কলমে ১৯৫টি সাধারণ অ্যাম্বুল্যান্স আছে। এর মধ্যে বড় অংশ অবশ্য অকেজো।

খবর, এত দিন রাজ্যে পিপিপি মডেলে ১০০০টি মাতৃযান চলত। গত অগস্ট মাস থেকে নতুন করে দরপত্র ডেকে চুক্তির পর সংখ্যা কমে গিয়ে ৮০০ হয়ে গিয়েছে। অথচ পরিষেবা ঠিকঠাক চালাতে রাজ্যে অন্তত ১৫০০ মাতৃযান দরকার। রাজ্যে নিশ্চয়যানের সংখ্যাও ৩৮০০ থেকে কমে ২৭০০ হয়েছে। উপরন্তু, নিশ্চয়যান অপারেটরদের সংগঠনের অভিযোগ, ৯ মাস ধরে সরকারতাদের বকেয়া প্রায় ৪৮ কোটিটাকা মেটায়নি।

রাজ্যে ডাক্তার, নার্স, এবং টেকনিশিয়ানের অভাবও আছে। তার উপরে ভ্রাম্যমাণ শিবিরের জন্য ব্লক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান নিয়ে যাওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ।

অনেকেই বলছেন, যে দিন এই শিবির হচ্ছে, সে দিন স্থানীয় হাসপাতালের পরিষেবা কার্যত থমকে যাচ্ছে বলেও স্বাস্থ্য ভবনে অভিযোগ এসে পৌঁছেছে। এই পুরো বিষয়টি সম্পর্কে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। ফোন ধরেননি এবং মেসেজের উত্তর দেননি রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাইন্দ্রজিৎ সাহা। যদিও স্বাস্থ্য-কর্তাদের একাংশের অভিযোগ, এমএমইউ একটা নির্দিষ্ট দিনে এক জায়গায় যাচ্ছে। এতে আপৎকালীন চিকিৎসার সুরাহা হচ্ছে না। অন্য সময়েও চিকিৎসার প্রয়োজন মানুষজন এমএমইউ-পরিষেবা পাচ্ছে না। কাজেই এই শিবির কতটা কার্যকরী তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Health Camp West Bengal health department Swasthya Bhavan West Bengal government TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy