উত্তরবঙ্গে বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের উপরে আক্রমণ এবং সাংসদ রাজু বিস্তার গাড়িতে ‘হামলা’র জেরে বিতর্কের মধ্যেই এ বার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কনভয় ঘিরে ‘হামলা’ ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটল! দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকায় রবিবার কালীপুজোয় উদ্বোধনে যাওয়ার পথে শুভেন্দুর কনভয় ঘিরে বিক্ষোভ দেখানে হল। বিজেপির অভিযোগ, আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে তৃণমূল কংগ্রেস হামলা চালাচ্ছে। এই প্রক্ষিতে শুভেন্দু হিন্দু-একতার ডাক দিয়ে, দ্রুত তৃণমূলের ‘দীপ নিভে যাবে’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে দলের সাংগঠনিক যোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের পাল্টা বক্তব্য, সবটাই ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’ ও বিজেপির ‘বাংলা-বিরোধিতা’র ফল।
মথুরাপুর ও পাথরপ্রতিমায় এ দিন শুভেন্দুর পুজো উদ্বোধনের কর্মসূচি ছিল। মন্দিরবাজারের দক্ষিণ বিষ্ণুপুরে শুভেন্দুর কনভয় ঘিরে সকালে বিক্ষোভ শুরু করেন মহিলারা। খটিরবাজার, লালপুর, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, শ্রীমতী এবং নবরদোকান মোড়েও বিক্ষোভ হয়। গাড়িতে চড়-থাপ্পড়ও মারতে দেখা যায় অনেককে। পুলিশ ও শুভেন্দুর রক্ষীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে শুভেন্দু বলেছেন, “চার-পাঁচ মাসের মধ্যে তৃণমূলের দীপ নিভে যাবে! তার আগে কোচবিহারের খাগড়াবাড়ি থেকে কুলতলি— তৃণমূল আক্রমণে নেমেছে। খগেন মুর্মু, শঙ্কর ঘোষের পরে রাজু বিস্তা এবং এখন আমার উপরে প্রাণঘাতী হামলা হল।”
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, “বিজেপির যে নেতারা বার বার বলেছেন বাংলাকে কেন্দ্রের টাকা দেওয়ার দরকার নেই, তাঁদের মানুষের মুখোমুখি হওয়ার সাহস রাখতে হবে! ভিন্-রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপরে হামলা, বাংলায় কথা বললে হেনস্থা করা হবে, আর বাংলার মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হবে না?”
হামলার জন্য ‘অনুপ্রবেশকারী’, তৃণমূল ও পুলিশকে এক পঙ্ক্তিতে রেখে সরব হয়েছেন শুভেন্দু। মথুরাপুরে শুভেন্দু বলেছেন, “এলাকাটি বাংলাদেশের কাছে। তৃণমূলের মদতে অনুপ্রবেশকারীরা অবৈধ ভাবে বাস করছে। এসআইআর-প্রক্রিয়ায় এঁরা আতঙ্কিত। তাই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।” পরে কলকাতাতেও রামমোহন সরণিতে দলের বর্ষীয়ান নেতা তাপস রায়ের যুবশ্রী ক্লাবের পুজো উদ্বোধনে গিয়েও তাঁর দাবি, “কালীপুজো উদ্বোধনে যাচ্ছিলাম। জেহাদিরা বাধা দিয়েছে। কাঠামো দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, এঁরা ভারতের বাসিন্দা নন!” বিরোধী দলনেতার সংযোজন, “আমতলা (তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী কেন্দ্রের অন্তর্গত) এলাকা ভাইপোর নয়, ওটা রাষ্ট্রবাদীদের এলাকা। উনি সেলোটেপ লাগিয়ে দিয়েছিলেন ইভিএম-এ।”
ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ‘বাধা’র অভিযোগ তুলে বিরোধী দলনেতার আহ্বান, ‘‘বদলা চাইলে বদল করতে হবে। তৃণমূল আর সিপিএমের হিন্দুরা ওঁ লেখা পতাকার নীচে আশ্রয় নিন।’’ ‘হামলা’র ঘটনার প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে ‘হিন্দুদের বিপুল সংখ্যায় সম্মিলিত’ হওয়ার ভিডিয়োও সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন বিরোধী দলনেতা। জগদ্ধাত্রী পুজোর পরে ‘ঝান্ডার সঙ্গে ডান্ডা’ নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ফের আসবেন বলে জানিয়ে গিয়েছেন শুভেন্দু। পাশাপাশি, সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাওকে ‘কয়লা চোর’ বলে কটাক্ষ করে বিরোধী নেতার হুঁশিয়ারি, “রাস্তায় বিক্ষোভ দেখানোর পরিকল্পনা পুলিশেরই ছিল। এপ্রিলের পরে আপনার হাতে যাতে মোবাইল ফোন না-থাকে, সেটাও আমি দেখব!” পুলিশ সূত্রে অবশ্য বক্তব্য, গোলমালের খবর পেয়েই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
বিক্ষোভের নেপথ্যে দলের যোগ উড়িয়েই তৃণমূলেরর মথুরাপুরের সাংসদ বাপি হালদারের দাবি, ‘‘একশো দিনের কাজ, আবাস যোজনা— সব কিছুরই টাকা বন্ধ করে রেখেছে কেন্দ্র। মানুষ এই বঞ্চনা মেনে নিতে পারছেন না।’’ আর শুভেন্দুর পাশে থাকার বার্তা দিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, “বাংলায় হিন্দু, বিরোধী কেউ নিরাপদ নন! তৃণমূল বাংলাকে সন্ত্রাসের রাজ্যে পরিণত করেছে। আমরা প্রতিটি নাগরিক ও হিন্দুর নিরাপত্তার জন্য লড়ব।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)