ফাইল চিত্র।
ডব্লিউবিসিএস (প্রিলিমস)-এর পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে অভিযোগে সরব হল বিরোধীরা। ওই পরীক্ষা হয়েছে রবিবার। সেখানে কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী এবং সবুজসাথী— রাজ্য সরকারের এই তিনটি প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন আসে। একটিতে জানতে চাওয়া হয়, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্পের ক্ষেত্রে পারিবারিক আয়ের ঊর্ধ্বসীমা কখন প্রযোজ্য হবে না? অন্য দু’টি প্রশ্নে বলা হয়, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের বিমা প্রিমিয়ামের কত শতাংশ রাজ্য সরকার বহন করে এবং সবুজসাথী প্রকল্পে সরকারি বা সরকার পোষিত স্কুল বা মাদ্রাসার কোন শ্রেণিতে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের সাইকেল বিতরণ করা হয়? এই প্রেক্ষিতে বিরোধী বিজেপি এবং সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের রাজনৈতিক প্রচারের জন্য পরীক্ষার প্রশ্নপত্রকেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
কিছু দিন আগে কেন্দ্রীয় সরকারের ইউপিএসসি পরীক্ষায় পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন দেওয়া হয়েছিল। তখন বিজেপি-র বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছিল। কারণ, এ রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগে সবচেয়ে বেশি সরব বিজেপিই। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সোমবার টুইট করেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে যখন ইউপিএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছিল, তখন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে রাজ্য সরকারের পছন্দের প্রকল্পের বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে। ছদ্ম বুদ্ধিজীবীরা কী ভাবে এখন কথা ঘোরান, দেখা যাক।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকারের হাতে পুলিশ থেকে পরীক্ষা— সব কিছুরই রাজনীতিকরণ হয়েছে। ওদের কাছে এটা স্বাভাবিক বিষয়।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘ইউপিএসসি পরীক্ষায় পশ্চিমবঙ্গের ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে প্রশ্ন দেওয়ার মধ্য দিয়ে কেন্দ্র রাজনৈতিক প্রভাব খাটাবার চেষ্টা করেছিল। ভোটের পরে হিংসা তো হয়েছেই, কিন্তু তা নিয়ে পরীক্ষায় প্রশ্ন কেন? এ বার রাজ্য সরকারের প্রকল্পের গুণকীর্তন করার জন্য ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় প্রশ্ন দেওয়া হল। কেন্দ্র এবং রাজ্য— দুই সরকারই আসলে একই মুদ্রার এ পিঠ, ও পিঠের মতো কাজ করছে।’’
তৃণমূল নেতা তাপস রায় অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘কন্যাশ্রী, সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন ঐতিহাসিক ঘটনা। পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছে রাজ্য সরকারের বাস্তব প্রকল্প নিয়ে। আর নির্বাচনোত্তর হিংসা রাজনৈতিক অভিযোগ। দুটো বিষয় এক নয়। যিনি প্রশাসনিক আধিকারিক পদে চাকরি করবেন, তিনি রাজ্য সরকারের প্রকল্প সম্পর্কে ওয়াকিবহাল কি না, তা দেখতে চাওয়ায় অন্যায় কী আছে?’’
প্রসঙ্গত, গত দশ বছরে রাজ্যে কতগুলি নতুন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ চালু হয়েছে এবং কোন বিপ্লবী নেতা জেল থেকে ‘মার্সি পিটিশন’ করেন— এই দুটি প্রশ্নও রবিবার ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় এসেছিল। দ্বিতীয় প্রশ্নটির চারটি সম্ভাব্য উত্তরের প্রথমেই ভি ডি সাভারকরের নাম ছিল। যা নিয়ে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু দাবি করেন, ‘‘সাভারকর কখনও মুচলেকা দেননি। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই প্রশ্ন করা হয়েছে।’’ জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘সাভারকর পাঁচ বার মুচলেকা দিয়েছিলেন। তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন, তা যেমন সত্য, তেমনই মুচলেকা দিয়েছিলেন, তা-ও তথ্যগত ভাবে সত্য। এ নিয়ে যাঁর আপত্তি রয়েছে, আমি বিজেপির সেই নেতাকে এক ঘণ্টা আলোচনার চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy