শুধু ম্যাগি নয়, নজরদারি স্থানীয় ভাবে তৈরি নুডল্সেও।—নিজস্ব চিত্র।
দেশজুড়ে নুডল্স ম্যাগি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে নড়েচড়ে বসল জঙ্গিপুর পুরসভা। জঙ্গিপুর পুর এলাকায় দু’টি নুডল্স তৈরির কারখানা রয়েছে। সেই কারখানায় তৈরি নুডল্স কতটা নিরাপদ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন শহরের বাসিন্দারাই। এরই মধ্যে জঙ্গিপুর পুরসভা ওই দু’টি কারখানায় তৈরি নুডলসের গুণমান খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিল।
ওই কারখানা দু’টির মধ্যে একটি তৈরি হয় বছর সাতেক আগে। অন্যটি তৈরি হয় বছর দু’য়েক আগে। দামে সস্তা বলে স্থানীয় বাজারে ওই দুই কারখানার নুডল্সের ভাল কাটতিও রয়েছে। জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘‘রঘুনাথগঞ্জ শহরে দু’টি কারখানা রয়েছে নুডলস তৈরির। সেগুলির সরকারি অনুমোদন, ‘ফুড লাইসেন্স’ রয়েছে কিনা তা পুরসভার খাদ্য বিষয়ক আধিকারিককে দেখতে বলেছি। সেই রিপোর্ট পেলেই জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।’’
রঘুনাথগঞ্জের নুডলস প্রস্তুতকারক সংস্থার এক কর্তা নাটু দাস অবশ্য বলেন, ‘‘স্রেফ ময়দা দিয়ে নুডলস তৈরি করে প্যাকেটে ভরা হয়। সঙ্গে ছোট প্যাকেটে থাকে গরম মশলার গুঁড়ো। স্বাদ বাড়ানোর জন্য কোনও কিছু মেশানো হচ্ছে না। সরকারি অনুমতি নিয়েই এই নুডল্স তৈরি হচ্ছে।’’
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের খাদ্য দফতরের তদন্তে জানা গিয়েছে, ম্যাগির মধ্যে অতিরিক্ত মাত্রায় মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি বা আজিনামোতো) এবং সিসা রয়েছে। তার পর থেকেই ম্যাগি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। অতিরিক্ত সিসা শরীরের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর? কী বলেন বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকেরা? চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ জানাচ্ছেন, অতিরিক্ত সিসা থাকলে রক্ত তৈরির প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে প্রবল রক্তাল্পতা দেখা দিতে পারে। ফুসফুসের বায়ুথলির পর্দা ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।’’
চিকিৎসকদের আরও দাবি, অতিরিক্ত সিসা থেকে ভারী ধাতুজনিত বিষক্রিয়া হয় বিভিন্ন কোষে। স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে স্নায়বিক কাজকর্ম ব্যাহত করতে পারে এই ধাতু। আর অতি মাত্রায় আজিনামোতো সম্পর্কে তাঁদের কী মত? তাঁরা বলছেন, শরীরে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া ঘটায়। খাদ্যনালীর দেওয়াল ক্ষয়ে যায়। শরীরের ক্যানসার সৃষ্টিকারী সুপ্ত কোষগুলিকে জাগিয়ে তোলে। ম্যাগি নিয়ে এই বিতর্কের পরই জঙ্গিপুর শহরেই নুডল্স তৈরির কারখানা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। শহরের সব জায়গায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছিল নুডল্স তৈরির কারখানা নিয়ে আলোচনা।
এসইউসি কাউন্সিলর অনুরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘রঘুনাথগঞ্জ শহরেও দু’টি কারখানা রয়েছে নুডল্স তৈরির। এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সেগুলির গুণমান খতিয়ে দেখার কোনও ব্যবস্থা নেই। অবিলম্বে তা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে পুরসভাকে।’’ একই দাবি পুরসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের সমীর পণ্ডিতেরও। তাঁর অভিযোগ, গোটা শহর তো ভেজাল খাবারে ছেয়ে রয়েছে। আগে পুরসভার ফুড ও স্যানিটারি দফতর কিছু কাজকর্ম করত। এখন কোনও খাবারের জিনিসেরই গুণমান যাচাই হয় না। নুডল্স নিয়ে গোটা দেশ জুড়ে এত হইচই, কিন্তু পুরসভার কোনও হেলদোল নেই। কোন পরিবেশে সেগুলি তৈরি হচ্ছে তা দেখা উচিত ছিল পুরসভার। স্বাস্থ্য দফতরেরও তৎপর হওয়া উচিত। পুরসভার অন্দরেই এই চাপে পড়ে শেষপর্যন্ত জঙ্গিপুরের ওই দুই কারখানায় তৈরি নুডল্সের গুণমান যাচাইয়ের নির্দেশ দিল পুরসভা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy