নয়া এই পদ্ধতিতে চলছে খেতের কাজ। দুবরাজপুর তোলা ফাইল চিত্র।
সময়, শ্রম, মজুরি-সহ বীজ ও সারের খরচ কমিয়ে কীভাবে উৎপাদন ঠিক রাখা যায়, চলতি মরসুমে চাষীদের সে নিয়ে উৎসাহ দিতে বিনা কর্ষণে ধান চাষের উদ্যোগ নিল বীরভূম জেলা কৃষি দফতর। এর আগে চলতি মরসুমে একই পদ্ধতিতে চাষ করে গম চাষে সাফল্য পাওয়া গিয়েছে বলে, এ বার ধান চাষে সেই সাফল্য পাওয়ার আশাবাদী দফতর।
ইতিমধ্যে জেলার রামপুরহাট ১, রামপুরহাট ২, ময়ূরেশ্বর ১ ব্লক, সাঁইথিয়া, সিউড়ি, মহম্মদবাজার, লাভপুর ব্লকের কৃষি খামার গুলিতে ওই পদ্ধতিতে ধান রোয়ার কাজ শেষ করেছে দফতর। জেলা কৃষি তথ্য দফতরের তথ্য আধিকারিক অমর মণ্ডল বলেন, ‘‘এ বারে জেলা জুড়ে বিনা কর্ষণে ধান চাষের জন্য ৪.১১ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। কৃষি খামার ছাড়া জেলার তিন মহকুমার কিছু এলাকায় চাষীদের জমিতে বিনা কর্ষণে ধান চাষ করার জন্য পরিদর্শন ক্ষেত্র করা হয়েছে। সেটা কি পরিমাণ জমিতে চাষ হয়েছে তার সম্পূর্ণ তথ্য এখনও জেলাতে এসে পৌঁছয়নি বলে অমর মণ্ডল জানান।
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, বিনা কর্ষণে ধান চাষের বিষয়টি হল এই চাষের ক্ষেত্রে চাষিদের আলাদা ভাবে বীজতলা তৈরি করতে হবে না। বীজতলা তৈরির পর জমিতে ধান পোঁতার উপযুক্ত ভাবে তৈরি করার জন্য বার বার চাষ দিতেও হয় না। এই পদ্ধতিতে ধান একবার মাত্র যন্ত্রের মাধ্যমে একসঙ্গে ধানের বীজ এবং সার দিয়ে ধান চাষ করা যায়। আগাছা জমিতেও চাষ করা যায়। পাশাপাশি অল্প বৃষ্টিপাতেও এই চাষ করে উৎপাদন ঠিক রাখা যায়। এই চাষের বিশেষ সুবিধা হল চাষ করার জন্য শ্রমিকের মজুরি কম লাগবে, বীজ ও সার কম লাগবে। যেহেতু নির্দিষ্ট দূরত্বে বীজ ফেলা হয় সেই জন্য ধান গাছে আলো, বাতাস খেলতে পারে সেই জন্য পোকার উপদ্রবের ভয় থাকে না।
কীভাবে এই চাষ করা যায়। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে বিনা কর্ষণের ধান চাষের জন্য জুন মাসের মাঝামাঝি সময় হচ্ছে উপযুক্ত সময়। এই চাষের জন্য ট্রাক্টরের পিছনে জিরো টিলেজ মেশিন লাগিয়ে সেই যন্ত্রের দুটো চেম্বারের মধ্যে একটি চেম্বারে বীজ এবং অন্য চেম্বারে সার দিতে হবে। এর পরেই নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে সার এবং বীজ পড়তে পড়তে যাবে। তবে এই পদ্ধতিতে চাষের আগে এক সপ্তাহ আগে জমিতে সম্পূর্ণ আগাছা নাশক স্প্রে করতে হবে। এক সপ্তাহ পরে ধান রোয়ার কাজ শুরু করা যায়।
জেলার এক কৃষি বিশেষজ্ঞ জানান, জিরো টিলেজ পদ্ধতিতে ধান চাষে ধানের বীজের ক্ষেত্রে বিঘে প্রতি তিন থেকে চার কিলো ধান সাশ্রয় হয় চাষির। আবার সারের ক্ষেত্রেও ৩০ শতাংশ কম খরচ হয় চাষির।
রামপুরহাট মহকুমা কৃষি আধিকারিক দিবানাথ মজুমদার বলেন, ‘‘জিরো টিলেজ পদ্ধতিতে গম চাষ করে রামপুরহাট থানার কাবিলপুর মৌজার চাষিরা গম চাষে বিশেষ সাফল্য পেয়েছিল। ওই সাফল্য থেকে রামপুরহাট মহকুমার রামপুরহাট ১ ব্লক কৃষি খামারে ৫ বিঘে, রামপুরহাট ২ ব্লকের কৃষি খামারে ৫ বিঘে, ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের কৃষি খামারে ৪ বিঘে জমিতে বিনা কর্ষণে ধান চাষ করা হয়েছে।’’
তিনি জানান, রামপুরহাট ১ ব্লকের কয়েকজন চাষির জমিতেও এই পদ্ধতিতে চাষের জন্য প্রদর্শন ক্ষেত্র হিসাবে বাছাই করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে চাষের জন্য চাষিদের যন্ত্র দফতর থেকে সরবরাহ করা হয়। এর জন্য চাষিদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয় না। তিনি বলেন, ‘‘জিরো টিলেজ পদ্ধতিতে ধান চাষ করলে চাষীরা তাঁদের শ্রম এবং আর্থিক দিক থেকেও অনেক লাভবান হবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy