ক্রমশ এগিয়ে আসছে সমুদ্র। নিজস্ব চিত্র
সমুদ্র চোখ রাঙায় প্রতিদিন। সৈকত ভেঙে এগিয়ে আসে গ্রামের দিকে। আতঙ্কের প্রহর গোনেন বাসিন্দারা।
২০০৩ সালে থেকেই সমুদ্র ভাঙন ক্রমশ বাড়ছে শঙ্করপুর মোহনা থেকে জামুয়া-লছিমপুর পর্যন্ত প্রায় দু’-তিন কিলোমিটার এলাকায়। এ বারের ভারী বৃষ্টি আর জলোচ্ছ্বাস গ্রাস করেছে সৈকতের একাংশ, সারি সারি ঝাউগাছ তলিয়ে গিয়েছে। আশপাশের যোশীপুর, জলধা, ক্ষীরপাই, বোধড়া গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা উৎকণ্ঠায় কাটান জোয়ারের সময়।
এলাকার বাসিন্দা প্রাক্তন বিধায়ক স্বদেশ নায়েক বলেন, “পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। যে কোনও দিন বড় কিছু ঘটে যেতে পারে। সমুদ্রবাঁধ ভাঙলে শঙ্করপুর মৎস্য বন্দর তলিয়ে যাবে সমুদ্রে। কাজ হারাবেন কয়েক হাজার মানুষ।’’ শুধু তাই নয়, ২.৮ কিলোমিটার ওই সমুদ্র বাঁধ ভাঙলে ভেসে যাবে শঙ্করপুর পর্যটন কেন্দ্রও। তাই আতঙ্কিত লাগোয়া হোটেলের মালিকরাও। বিঘার পর বিঘা চাষের জমি নষ্ট হবে লোনা জলে।
স্থানীয় আশিস ভঞ্জ, বিমল দাসদের দাবি, “সমুদ্রবাঁধ মেরামত বা স্থায়ী নির্মাণের বিষয়ে উদ্যোগী হোক প্রশাসন। নয়তো এতগুলো মানুষের প্রাণ ও সম্পত্তি নষ্ট হবে। সে দায় কার?’’
বাম আমলের শেষের দিকে পূর্ব মেদিনীপুর উপকুলের এই অংশটিতে বড় বোল্ডার ফেলে ও কাঠের খুঁটিতে বালির বস্তা ফেলে দুর্বল বাঁধ মেরামতির চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সে সব এখন জলের তলায়।
এমনকী ২০০৫ সালে তৎকালীন দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ চেয়ারম্যান, সমুদ্র বিশেষজ্ঞ আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হয়েছিল। কয়েক কোটি টাকা খরচ করে ‘জিও টিউব’ দিয়ে বাঁধ বাঁচাতে চেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। সমুদ্রের ঢেউয়ে ভেসে গিয়েছে জিও-টিউব।
তারপর থেকে এই এলাকার বাসিন্দারা স্থায়ী সমুদ্র বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু সরকার বদলে গেলেও সে বিষয়ে কেউ কোনও পদক্ষেপ করেনি। বাঁধ মেরামতির দায়িত্বে থাকা কাঁথি মহকুমা সেচ দফতরের মুখ্য বাস্তুকার স্বপন পণ্ডিত বলেন, “দেড় বছর আগে ৬৬ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি হয়ে আছে। অর্থের বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে কোস্টাল ম্যানেজমেন্ট –এর কাছে। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি জায়গায় টাকার জন্য আবেদন করা হয়েছে। সে টাকা এলেই কাজ শুরু হবে।’’
টাকার অপেক্ষায় সেচ দফতর আর সমাধানের আশায় বাসিন্দারা। কিন্তু তার মাঝে একের পর এক পূর্ণিমা-অমাবস্যায় উদ্বেগ বেড়ে ওঠে পাহাড় প্রমাণ। আতঙ্ক থেকে মুক্তি মিলবে কবে? জানেন না কেউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy