Advertisement
E-Paper

মেয়ের প্রেমিক নাপসন্দ, বাড়িতে ডেকে গলার নলি কেটে খুন

বছর আঠারোর মেয়েকে দিয়ে ফোন করিয়ে তার প্রেমিককে ডেকে এনেছিল বাবা-মা। তারপর মেয়ের হাত-পা বেঁধে ঘরবন্দি করে শুরু হয় ছেলেটিকে মারধর। তবে মারধরেই থামেনি ওই দম্পতি। যুবকের মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করে বাবা। আরও এক ধাপ এগিয়ে তরুণীর মা বঁটি দিয়ে তার গলার নলি কেটে দেয়।

অপ্রমেয় দত্তগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০৪:০৮
অভিযুক্ত দম্পতি। শঙ্কর দলুই (উপরে) এবং তার স্ত্রী সাবিত্রী দলুই। —নিজস্ব চিত্র

অভিযুক্ত দম্পতি। শঙ্কর দলুই (উপরে) এবং তার স্ত্রী সাবিত্রী দলুই। —নিজস্ব চিত্র

বছর আঠারোর মেয়েকে দিয়ে ফোন করিয়ে তার প্রেমিককে ডেকে এনেছিল বাবা-মা। তারপর মেয়ের হাত-পা বেঁধে ঘরবন্দি করে শুরু হয় ছেলেটিকে মারধর। তবে মারধরেই থামেনি ওই দম্পতি। যুবকের মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করে বাবা। আরও এক ধাপ এগিয়ে তরুণীর মা বঁটি দিয়ে তার গলার নলি কেটে দেয়।

তিনবার মাধ্যমিকে ফেল যুবকের সঙ্গে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ের প্রেম মানতে না পেরেই হলদিয়ার দেবগ্রাম পঞ্চায়েতের দলুইপাড়া গ্রামের দম্পতি শঙ্কর ও সাবিত্রী দলুই এই খুন করেছে বলে অভিযোগ। বুধবার রাতে খুন করে সৌমেন মাইতি (২০) নামে ওই যুবকের দেহ ভাগাড়ে ফেলে দেয় তারা। নিখোঁজ সৌমেনের সন্ধান শুরু হলেও শনিবার সন্ধে পর্যন্ত গোটা ঘটনা চাপাই ছিল। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদেও গোড়ায় মুখ খোলেনি বছর চল্লিশের শঙ্কর আর বছর ছত্রিশের সাবিত্রী। তবে শেষ রক্ষা হল না। খুনের প্রত্যক্ষদর্শী, তাদের ছেলেই পুলিশকে সব বলে দিয়েছে।

শনিবার রাতে দলুই দম্পতি গ্রেফতার হয়েছে। রবিবার তাদের পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে হলদিয়া আদালত। পূর্ব মেদিনীপুরের এসপি অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘ধৃতেরা খুনের কথা স্বীকার করেছে। মেয়েকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শঙ্কর ও সাবিত্রীর মেয়ের সঙ্গে বছর খানেক ধরে পাশের চকদ্বীপার সৌমেনের ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। তবে মাধ্যমিকের গন্ডি পেরোতে না পারা সৌমেনকে মানতে পারেনি দলুই দম্পতি। ইচ্ছে ছিল গৃহশিক্ষকের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেবে। কিন্তু সেই আপত্তিতেই গ্রামের ছাপোষা দম্পতি তরতাজা একটা ছেলেকে কি খুন করতে পারে?

মনোবিদ জয়রঞ্জন রামের মতে, ‘‘সামাজিক পরিচয়, আর্থিক অবস্থা দেখে একজনের মনের তল পাওয়া সম্ভব নয়।’’ এ ক্ষেত্রে মেয়ে মাধ্যমিক ফেল ছেলের সঙ্গে প্রেম করছে, এই লজ্জাটাই ওই দম্পতির কাছে বড় হয়ে উঠেছে বলে তাঁর ব্যাখ্যা। তাই তাদের কাছে মেয়ের শান্তি, এমনকী একজনের প্রাণও হয়ে গিয়েছে গৌণ।

পুলিশকে ধৃতেরা জানিয়েছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় সৌমেন বাড়িতে এলে পরিকল্পনা করে তাকে খুন করা হয়। ঘরবন্দি মেয়ে জানতে পারেনি সৌমেনকে মা-বাবা মেরেই ফেলেছে। রাতে মেয়েকে পাঁশকুড়ায় মামাবাড়িতে পাঠিয়ে দেয় শঙ্কর-সাবিত্রী। শুক্রবার সৌমেনের বাবা চন্দন মাইতি নিখোঁজ ডায়েরি করলে পুলিশ সৌমেনের মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে দলুইপাড়া গ্রামের ভাগাড়ে পৌঁছয়। সেখানেই মেলে সৌমেনের দেহ। শনিবার সকালে সৌমেনের জামাইবাবু নিমাই রাউতকে ফোন করে ওই তরুণী জানায়, সৌমেনকে তার বাবা-মা মারধর করেছে। সন্দেহ গিয়ে পড়ে দলুই দম্পতির উপর। প্রথমে অবশ্য তারা দাবি করে, সৌমেনকে চেনেই না। কিন্তু তাদের বছর চোদ্দোর ছেলে পুলিশকে সব বলে দেয়।

সৌমেনের পরিণতিতে হতবাক এলাকাবাসী। সৌমেনের বাবা চন্দনবাবু বলেন, ‘‘মেয়েটির বাবা-মা আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারত। ওকে শাসন করতে পারত। কিন্তু তাই বলে ছেলেটাকে মেরে ফেলবে!’’

Killer couple Murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy