Advertisement
E-Paper

‘খামোকা টাকা নেব কেন?’, বিয়েতে বরের কাছ থেকে বই পেলেন সানজিদা

হবু স্ত্রীর মন পড়তে বর বাবাজিও ভুল করেননি। ফলে, নতুন এক মাত্রা যোগ হল তাঁদের বিয়েতে। মুসলিম বিয়ের চিরাচরিত রীতি মেনে কনের প্রাপ্য উপহার বা ‘মোহর’ হিসেবে টাকার বদলে এ বার বই প্রাপ্তি হয়েছে সানজিদার।

ঋজু বসু 

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৯
বিয়ের মোহর বাবদ প্রাপ্ত বই নিয়ে সানজিদা পারভিন ও মেহেবুব সাহানা। —নিজস্ব চিত্র

বিয়ের মোহর বাবদ প্রাপ্ত বই নিয়ে সানজিদা পারভিন ও মেহেবুব সাহানা। —নিজস্ব চিত্র

সমকালের আন্তর্জাতিক সাহিত্যে মুসলিমদের ঘিরে ছক-বাঁধা ধ্যানধারণা ভাঙার নমুনা নিয়ে গবেষণা করছেন আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্রী, পার্ক সার্কাসের বাঙালিনি। নিজের জীবনেও চিরকেলে রীতির ছকে আটকে থাকা না-পসন্দ তাঁর। বিয়ের প্রাক্কালে হবু বর মেহেবুব সাহানাকে সেটাই বলেছিলেন সানজিদা পারভিন।

হবু স্ত্রীর মন পড়তে বর বাবাজিও ভুল করেননি। ফলে, নতুন এক মাত্রা যোগ হল তাঁদের বিয়েতে। মুসলিম বিয়ের চিরাচরিত রীতি মেনে কনের প্রাপ্য উপহার বা ‘মোহর’ হিসেবে টাকার বদলে এ বার বই প্রাপ্তি হয়েছে সানজিদার। মুসলিম বিয়েতে মোহর বাঁধার প্রথায় কনের জীবন সুরক্ষিত করতে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা ধার্য করার কথা বলা হয়। তবে বরের থেকে কী নেবেন, সেটা একান্তই কনের অধিকার। “আমি বরের উপরে আর্থিক ভাবে নির্ভরশীল নই, তা হলে ওঁর কাছ থেকে খামোকা টাকা নেব, কেন?”, প্রশ্ন তোলেন ২৭ বছরের সানজিদা। কনের সিদ্ধান্ত, বরের থেকে মোহর নিতে হলে শুধু বই-ই নেবেন তিনি।

জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পিএইচডি করা ২৯-এর মেহেবুব সাহানাও বইয়ের গুরুত্ব জানেন। বর্ধমানের খণ্ডঘোষের গরিব চাষির ঘরের ছেলেটি বলেন, “বাবা শহরে নিরাপত্তা-রক্ষীর কাজ করেও আমাদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন।” কিছু দিন বাদে ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৃতি-পরিবেশের উপরে নির্বিচার নগরায়ণের প্রভাব নিয়ে পোস্ট-ডক করতে যাবেন মেহেবুব। মোহরের টাকায় কনেকে বই দিতে সঙ্গে-সঙ্গে রাজি হয়ে যান তিনি।

আরও পড়ুন: উপোস করে মনসা পুজো দেন রবিউলেরা

গত ১২ অক্টোবর ওই দম্পতির বিয়ে উপলক্ষে তাই কেনা হয় ৫০ হাজার টাকার বইয়ের পাহাড়। ইংরেজি বিভাগে পিএইচডি-রত সানজিদার কাজের পরিধি অনুযায়ী, বেদ-বাইবেল বিষয়ক বইও কিনতে হয়েছে। দু’জনেরই এক কথা, “ব্যক্তিজীবনে আমরা মুসলিম। কিন্তু ভারতীয়, বাঙালি এবং দু’জন একুশ শতকীয় মানুষ, এ পরিচয়টাও সত্যি। একুশ শতকের চোখেই মোহরের রীতি বুঝতে চেয়েছি।” দু’জনের পরিবারেই কেউ কেউ মোহর বাবদ টাকা নিতে হবে বলে দাবি তোলেন। মিয়াঁ-বিবিই শেষ কথা বলেছেন। রেল-অফিসারের কন্যা সানজিদার কথায়, “বাবাকে দেখেছি, ধর্মের নিয়ম মেনে জাকাত বা গরিব দুঃখীকে রোজগারের অংশ দান করার সময়ে টাকার বদলে শিক্ষায় সাহায্য করতে। গরিবদের মধ্যে হিন্দু-মুসলিম ভেদ মানেন না তিনি।” মোহরের টাকার বদলে বই নেওয়ার ইচ্ছে কিছুটা বাবাকে দেখেও গড়ে ওঠে সানজিদার। মেহেবুব-সানজিদা দু’জনেই মনে করেন, “কনে চাইলে মোহর হিসেবে সেলাই মেশিন বা অন্য কাজের জিনিসও চাইতে পারেন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মোহরের অধিকারটুকু ঠিকঠাক কাজে লাগানোই বড় কথা।”

সমাজকর্মী তথা বাংলা সাহিত্যের কলেজশিক্ষক আফরোজা খাতুন সানজিদা-মেহেবুবের অভিনব মোহরের ভাবনাটিকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তাঁর অভিজ্ঞতায়, “গ্রামবাংলায় অনেক পুরুষই বিয়ের সময়ে মোহরের টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রাখেন না। তালাক হলে ওই টাকা কখনও মেয়েটির কাজে লাগে। তা-ও সেটা আদায় করা কঠিন হয়।” আফরোজা বলছেন, ধর্মের ভিতরে মেয়েদের প্রদত্ত অধিকারটুকু আদায় করতে পারলেও অনেক সমস্যার সুরাহা হয়।

Ritual Park Circus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy