Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Partha Chatterjee

Partha-Arpita Case: আমার নামে সম্পত্তি আছে, কিন্তু আমি এক জন বেতনভুক কর্মী! ইডিকে অর্পিতা

ইডি সূত্রের দাবি, টিভিতে টাকার ছবি দেখে উত্তেজিত অর্পিতা পার্থের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন, ‘‘স্যর! এত টাকা আমার বাড়িতে রাখা হয়েছিল?’’

অর্পিতা মুখোপাধ্যায়।

অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। ছবি পিটিআই।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২২ ০৯:১৭
Share: Save:

সামনে টেলিভিশনে ‘লাইভ’, স্ক্রিন জুড়ে টাকার পাহাড়ের ছবি। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর দফতরে বসে সেই ছবি দেখে ভেঙে পড়লেন অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। সেখানে তখন উপস্থিত রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও।

ইডি সূত্রের দাবি, টিভিতে ওই ছবি দেখে উত্তেজিত অর্পিতা পার্থের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন, ‘‘স্যর! এত টাকা আমার বাড়িতে রাখা হয়েছিল?’’ এর পরে ইডি-র অফিসারদের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘‘বিশ্বাস করুন। এত টাকার কথা আমি জানতাম না।’’ ইডি-র দাবি, প্রাথমিক জেরায় জানা গিয়েছে, টালিগঞ্জ ও বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে টাকা নিয়ে যেতেন পার্থের প্রতিনিধি। সেই টাকা রেখে তাঁরা চলে আসতেন।

ইডি সূত্রের দাবি, বুধবার টিভিতে টাকার পরিমাণ দেখার পরে অর্পিতা দাবি করেন, ‘‘এর মধ্যে (বাজেয়াপ্ত হওয়া টাকা) এক টাকাতেও হাত দেওয়ার অধিকার ছিল না আমার। গয়না আলমারির লকারে রাখা থাকত। কয়েকটা হয়তো আমি পরেছি। কিন্তু এই গয়নাতেও আমার কোনও অধিকার ছিল না।’’ ইডি সূত্রের দাবি, এই সময়ে পার্থ নাকি চুপ করে বসেছিলেন। অর্পিতা নাকি বলে যান, ‘‘স্যর। আমার নামে সম্পত্তি-কোম্পানি সবই রয়েছে। প্র্যাকটিক্যালি আই অ্যাম নট অ্যান ওনার অব দিজ় প্রপারটিজ়। আই অ্যাম পেড স্টাফ, অ্যান্ড অলসো আ কেয়ারটেকার।’’

তদন্তকারী সংস্থার এক কর্তার কথায়, ‘‘অর্পিতা সব দোষ এখন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপরেই চাপাচ্ছেন। তাঁর সমস্ত দাবি যাচাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে। অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়ার জন্যও তিনি এমনটা বলে থাকতে পারেন। অর্পিতার বয়ানের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পার্থকে লাগাতার জেরা করা হয়েছে।’’

ইডি সূত্র জানাচ্ছে, বুধবার সন্ধ্যা ছ’টা থেকে সিজিও কমপ্লেক্সে দফতরের কনফারেন্স হলে একসঙ্গে বসিয়েই জেরা করা হচ্ছিল পার্থ ও অর্পিতাকে। ওই ঘরেই চলছিল টিভি। তদন্তকারীদের কথায়, তাঁর মায়ের বাড়িতে ইডি-র অফিসারদের দেখে দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসেছিলেন অর্পিতা। কিন্তু বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে যখন ইডি-র অফিসারেরা ভিতরে ঢুকে পড়েন, তখন উত্তেজিত হয়ে পড়েন অর্পিতা।

বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটে যখন নোট গোনার যন্ত্র নিয়ে ব্যাঙ্কের কর্মীরা পৌঁছন, তদন্তকারীদের দাবি, অর্পিতা তখন চেঁচিয়ে বলেন, ‘‘স্যর, ওখানেও অনেক টাকা পাওয়া যাবে। সোনার গয়নাও রয়েছে।’’ ইডি সূত্রের খবর, এই কথা বলার পরে দু’হাতে মুখ ঢেকে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকেন অর্পিতা। ইডি অফিসারদের দাবি, সেই সময়ে পার্থকে বেশ কয়েক বার চশমা খুলে সোফার উপরে রাখতে দেখা গিয়েছে। ইডি-র এক কর্তার দাবি, ‘‘টিভিতে টাকা উদ্ধারের ঘটনা ও তাঁর মায়ের বাড়িতে ইডি-র তল্লাশি ছবি দেখার পরে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন অর্পিতা।’’

ইডি সূত্রের দাবি, অর্পিতা জানান, কয়েক বছর আগে টলিগঞ্জের কয়েক জন অভিনেতা বন্ধু মারফত একটি অনুষ্ঠানে পার্থের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল। এরপর ঘনিষ্ঠতা। ডায়মন্ড সিটিতে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করেন পার্থই। ওই সূত্র বলছে, অর্পিতার বয়ান অনুযায়ী, সম্পত্তি, ফ্ল্যাট এবং তাঁর নামে তৈরি সংস্থা— সবকিছুই পার্থের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এক হিসেবরক্ষক মারফত করা হয়েছিল। শুধু তাঁর প্যান, ভোটার আইডি, আধার কার্ড ও আরও কিছু নথি নাকি অর্পিতার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল। তাঁর গাড়ির চালকের কাছ থেকেও একই নথি নেওয়া হয়েছিল। এর পর তাঁর ও সেই গাড়িচালকের নামে বেশ কয়েকটি সংস্থা খোলা হয়েছে এবং এই সবই নাকি তিনি পরে জানতে পারেন। তদন্তকারীদের দাবি, এ সবই পার্থের সামনে বসেই বলেন অর্পিতা এবং পার্থ পাল্টা কিছুই বলেননি।

বুধবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে ফেরার পরে অর্পিতা, পার্থ এবং মানিককে আলাদা আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৮টা নাগাদ কনফারেন্স হল থেকে অর্পিতাকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরে সাড়ে ৯টা নাগাদ ফের তাঁকে সেখানে নিয়ে আসা হয়। তখন পার্থের পাশে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি, তৃণমূলের বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যও ছিলেন। তিন জনকে একসঙ্গে বসিয়ে জেরা শুরু করা হয়। ইডি সূত্রের দাবি, মানিককে দেখার পরে উত্তেজিত হয়ে অর্পিতা চিৎকার করে তাঁকে দোষারোপ করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE