Advertisement
E-Paper

পোড়া গ্রাম যেন শ্মশান, শান্তির বার্তা দিল দু’পক্ষই

পোড়া আসবাব থেকে তখনও ধোঁয়া উঠছিল। চারপাশে ছাইয়ের স্তূপ। পড়ে রয়েছে মরা ছাগল, হাঁস, মুরগি। দুর্গন্ধে টেকা দায়। গোটা পাড়াটাই ছারখার। যেন শ্মশান!

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ০৩:৪৫
সব হারিয়ে। আতঙ্ক কাটছে না মহিলাদের। —নিজস্ব চিত্র

সব হারিয়ে। আতঙ্ক কাটছে না মহিলাদের। —নিজস্ব চিত্র

পোড়া আসবাব থেকে তখনও ধোঁয়া উঠছিল।

চারপাশে ছাইয়ের স্তূপ। পড়ে রয়েছে মরা ছাগল, হাঁস, মুরগি। দুর্গন্ধে টেকা দায়। গোটা পাড়াটাই ছারখার। যেন শ্মশান!

চোখের জল তখনও বাঁধ মানছিল না আলেয়া বিবি, আজিদা বিবি, বিউটি খাতুনদের। কেউ সিপিএম সমর্থক। কেউ তৃণমূলের। কিন্তু হিংসার আগুন রেয়াত করেনি কোনও পরিবারকে। বসিরহাটের পানিগোবরা গ্রামের উত্তরপাড়ায় দু’দলের সংঘর্ষের পরে কেটে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টা। এলাকায় পুলিশ, র‌্যাফ টহল দিচ্ছে। গোলমালে জড়িত অভিযোগে দু’দলের আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবু বৃহস্পতিবারেও ওই মহিলাদের আতঙ্ক কাটেনি এতটুকু। গোটা গ্রাম কার্যত পুরুষশূন্য। মহিলাদেরও কেউ কেউ গ্রাম ছাড়তে শুরু করেন।

পোড়া ঘরের দিকে তাকিয়ে আলেয়া বিবি বলেন, ‘‘সিপিএম করার অপরাধেই তৃণমূলের ছেলেরা বাড়িতে আগুন দেয়।’’ তুহিনা বিবি নামে আর এক মহিলার গলায় উল্টো সুর। তিনি বলেন, ‘‘আমরা তৃণমূল করি বলে সিপিএমের লোকেরা আমাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দিল। একটা খাওয়ার গ্লাস পর্যন্ত নেই যে ত্রাণের চিঁড়ে ভিজিয়ে খাব।’’ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বিউটি খাতুন তখনও কাঁদছিল প্রিয় সাইকেলটা পুড়ে যাওয়ায়। তার কথায়, ‘‘খেতে বসেছিলাম। কিছু লোক ঢুকে ভাতের থালা লাথি মেরে ফেলে ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) দেওয়া সাইকেল, বই—সব পুড়ে গেল।’’

সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে বুধবার অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল পানিগোবরা। অন্তত ৩০টি বাড়িতে আগুন ধরানো হয়। চলে ভাঙচুর, লুঠপাট। গৃহহারা হন অন্তত ২৫০ জন। বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক এটিএম আব্দুল্লা রনি-সহ আহত হন অন্তত ২০ জন। গোলমাল থামাতে গিয়ে নিগৃহীত হন বসিরহাট থানার আইসি তপন মিশ্র-সহ কয়েক জন পুলিশকর্মী। তপনবাবুকে ওই রাতেই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, পরে তাঁকে জেলা গোয়েন্দা দফতরে (ডিআইবি) বদলি করা হয়। তাঁর জায়গায় বসিরহাটের আইসি করা হয় ডিআইবি-র দেবাশিস চক্রবর্তীকে।

বুধবার রাতটা কার্যত খোলা আকাশের নীচেই কাটান গৃহহারারা। বৃহস্পতিবার দুপুরে মহকুমাশাসক (বসিরহাট) নীতেশ ঢালি গ্রামে গিয়ে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তাঁদের হাতে সরকারি ত্রাণ তুলে দেওয়া হয়। এ দিন স্বরূপনগর বাজারে ‘শান্তি সভা’ করে তৃণমূল। রনিকে বারাসত হাসপাতালে দেখতে যান খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি বলেন, ‘‘দলের সকলকে বলা হয়েছে সংযত থাকতে। তথাপি সিপিএমের কেউ যদি লাঠি তোলে, তা হলে মারামারি না করে তা যেন কেড়ে নেয়।’’ আগের দিন ওই গ্রামে সিপিএমের বিজয়-মিছিলের শেষ প্রান্ত থেকে দু’টি ছেলে রনিকে চড় মারে এবং তা থেকেই গোলমালের সূচনা বলে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি রিপোর্ট দিয়েছেন বলে নবান্নে জানান জ্যোতিপ্রিয়বাবু। একই সঙ্গে দাবি করেন, ‘‘ওই গোলমালের সময় সিপিএমের পার্টি অফিসের যে সব চেয়ার-টেবিল ভাঙা হয়েছে, আমরা তা তাদের দিয়ে দিয়েছি।’’

শান্তির বার্তা শোনা গিয়েছে সিপিএমের গলাতেও। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রশাসন এবং শাসক দল শান্তি চাইলে আমরা সহযোগিতা করতে রাজি। কিন্তু ওখানে তৃণমূলের বহিরাগতেরা গিয়ে যা করল, তা ক্ষমার অযোগ্য।’’

TMC CPM
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy