Advertisement
E-Paper

নড়ে বসছে হাসপাতাল, দু’বছর পর সুর বদল!

বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকেই বোধ হয় কাজ হল!দু’বছর ধরে বার-বার ঘুরে, ফোন করে, চিঠিচাপাটি দিয়েও উডল্যান্ডস হাসপাতাল থেকে বাবার চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র (মেডিক্যাল রেকর্ডস) পাননি বীরভূমের লাভপুরের বাসিন্দা টুটুল দত্ত।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৫১
প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকেই বোধ হয় কাজ হল!

দু’বছর ধরে বার-বার ঘুরে, ফোন করে, চিঠিচাপাটি দিয়েও উডল্যান্ডস হাসপাতাল থেকে বাবার চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র (মেডিক্যাল রেকর্ডস) পাননি বীরভূমের লাভপুরের বাসিন্দা টুটুল দত্ত।

শেষের দিকে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ তাঁর নাম শুনেই ফোন কেটে দিতেন বলে অভিযোগ। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে ওই হাসপাতালে ফোন করতেই ম্যাজিকের মতো কাজ হল। হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ টুটুলবাবুকে সবিনয়ে জানিয়েছেন, ‘এসে রিপোর্ট নিয়ে যান।’

টাউনহলে বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে বুধবার উডল্যান্ডস হাসপাতালের প্রতিনিধি দাবি করেছিলেন, ‘আমরা কখনও কোনও রোগীর মেডিক্যাল রিপোর্ট আটকে রাখি না। হাতে-হাতে দিয়ে দিই।’

টেলিভিশনে ওই বৈঠকের সম্প্রচার দেখে চমকে উঠেছিলেন টুটুলবাবু। মৃত বাবা-র মেডিক্যাল রেকর্ডস হাতে পেতে দু’ বছর ধরে জুতোর সুখতলা ক্ষয়ে গেলেও ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের থেকে তা পাননি তিনি। বৃহস্পতিবার টুটুলবাবু বলেন, ‘‘আবেদন-নিবেদন, চিঠি, ফোন—সব ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের কাছ ওঁরা নাকি ১৭ লক্ষ টাকা পান। সেটা না-মেটালে রেকর্ডস পাওয়া যাবে না। আর ওঁরাই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কী মিথ্যা কথাটাই না বললেন!’’

কৌতূহলবশেই এ দিন সকালে উডল্যান্ডসে ফোন করে তাঁর বাবার মেডিক্যাল রেকর্ডসের প্রসঙ্গ তোলেন টুটুলবাবু। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘এত দিন ধরে যে হাসপাতাল টাকার কথা বলে ঘুরিয়েছে, তাদের প্রতিনিধিই অত্যন্ত বিনীত ভাবে আমাকে যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে যেতে বলেছেন। টাকার কথা উচ্চারণই করেননি! ’’

কী হয়েছিল টুটুলবাবুর বাবার? আড়াই বছর আগে ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর সেরিব্রাল স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে উডল্যান্ডস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ছিয়াত্তর বছরের বীরেন্দ্রকুমার দত্ত। তাঁকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়। তাঁর ছেলে টুটুল দত্তের অভিযোগ, ‘‘চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিপদ কেটে গিয়েছে। অথচ পাঁচ দিন পরে কিছু না-জানিয়ে আমাদের বিনা অনুমতিতে বাবাকে ভেন্টিলেশনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।’’ প্রায় তিন মাস ওই হাসপাতালে ছিলেন বীরেন্দ্রবাবু। তার মধ্যে তিন দফায় ৫৫ দিন তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। টুটুলবাবুর অভিযোগ, ‘‘ভেন্টিলেশনে রাখার কারণ কখনওই ব্যাখ্যা করেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা চিকিৎসকেরা।’’

আরও পড়ুন: এ বার লাগাম বিধায়ক মন্ত্রীদের বিলেও

এসএসকেএমেই ৬ এপ্রিল মারা যান বীরেন্দ্রবাবু। ‘‘এর পরে ঠিক করি, মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া ও ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ করব। তার জন্য বাবার মেডিক্যাল রেকর্ডস-এর দরকার ছিল। আর উডল্যান্ডস হাসপাতালের কাছে সেটা চাইতে গিয়েই যত বিপত্তি।’’ বললেন টুটুলবাবু।

কেমন বিপত্তি? মৃতের ছেলের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতাল জানায়, ‘১৭ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে। ফলে আগে টাকা মেটাতে হবে, তার পর রেকর্ড দেওয়া হবে।’ আমি অবাক। আমরা যখন চিকিৎসা গাফিলতি হয়েছে বলে তদন্ত চাইছি তখন টাকা মেটানোর প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? আমাদের অনুমতি ছাড়াই অযৌক্তিক ভাবে রোগীকে ভেন্টিলেশনে ঢুকিয়েছিলেন ওঁরা। তাই চিকিৎসার কাগজ চাইতেই ওরা বেঁকে বসেন।’’

টুটুলবাবু এর পর বিভিন্ন জায়গায় চিঠি লিখেছেন, বিভিন্ন লোকের সঙ্গে দেখা করেছেন। মেডিক্যাল কাউন্সিল, স্বাস্থ্য ভবন কিছুই বাদ দেননি তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘২০১৬ সালের এপ্রিলে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া এবং ২০১৬-র মে মাসে স্বাস্থ্য দফতরও ওই হাসপাতালকে চিঠি দিয়ে রেকর্ড দিতে বলে। হাসপাতাল দেয়নি।’’

‘‘মেডিক্যাল কাউন্সিল লিখেছিল, বিনা শর্তে রোগীপক্ষকে আবেদন করার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল রেকর্ডস দিতে হবে। তার পরেও হাসপাতাল তাতে কান দেয়নি,’’ অভিযোগ টুটুলবাবুর।

উডল্যান্ডস হাসপাতালের চিফ অপারেশন অফিসার সুপর্ণা সেনগুপ্ত (বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন) বলেন, ‘‘আমরা ২০১৬ সালে সব রিপোর্ট স্বাস্থ্যভবনে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু কোন মাসে পাঠিয়েছিলাম সেটা মনে পড়ছে না।’’

স্বাস্থ্য ভবন জানিয়ে দিয়েছে তারা ওই ধরনের রিপোর্ট পায়নি। তা হলে? সুপর্ণাদেবী এ বার বলেন, ‘‘টুটুলবাবুকে এখন সব রিপোর্ট দিয়ে দেওয়া হবে। আর কোনও সমস্যা হবে না।’’

তা হলে তাঁরা এত দিন রিপোর্ট কি ইচ্ছে করে দেননি লাভপুরের ওই বাসিন্দাকে? তা হলে কি মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে আপনারা যে দাবি করেছেন, তা ভুল? সুপর্ণাদেবী বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না।’’

আজ, শুক্রবার উডল্যান্ডস হাসপাতালে গিয়ে বাবার মেডিক্যাল রেকর্ড সংগ্রহ করবেন টুটুলবাবু। তার পরে তা নিয়ে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ জানাবেন মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া এবং ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে।

Medical report Nursing Home
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy