Advertisement
E-Paper

কর্মবিরতির ধাক্কা সামলে ভিড় রোগীর

চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে ১০ জুন এনআরএসে হাঙ্গামার জেরে জুনিয়র ডাক্তারেরা দিন সাতেক কর্মবিরতি চালানোয় রাজ্য জুড়ে স্বাস্থ্য পরিষেবায় সঙ্কট দেখা দেয়। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনার আশ্বস্ত হয়ে জুনিয়র চিকিৎসকেরা আন্দোলন তুলে নেন।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৯ ০২:৪৯
এনআরএসের বহির্বিভাগে ওষুধ কেনার  ভিড়। দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এক মহিলা। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

এনআরএসের বহির্বিভাগে ওষুধ কেনার ভিড়। দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এক মহিলা। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ৬১০০ জন। সিএনএমসি বা ন্যাশনাল মেডিক্যালে ৪৩০১ জন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ৫৭০০ জন। ‘লক্ষ্মীছেলেরা’ আন্দোলন তুলে নেওয়ার পরে ৪৮ ঘণ্টায় এই সংখ্যক রোগীই কলকাতার এই তিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা করিয়েছেন বলে স্বাস্থ্য ভবনের খবর।

চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে ১০ জুন এনআরএসে হাঙ্গামার জেরে জুনিয়র ডাক্তারেরা দিন সাতেক কর্মবিরতি চালানোয় রাজ্য জুড়ে স্বাস্থ্য পরিষেবায় সঙ্কট দেখা দেয়। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনার আশ্বস্ত হয়ে জুনিয়র চিকিৎসকেরা আন্দোলন তুলে নেন।

অচলাবস্থা কাটিয়ে মঙ্গলবার ছিল স্বাভাবিক স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার প্রথম দিন। পরিসংখ্যান বলছে, সে-দিন মহানগরীর পাঁচ মেডিক্যাল কলেজের বহির্বিভাগে স্বাভাবিক দিনের তুলনায় রোগীর সংখ্যা কম ছিল। বিভিন্ন হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তাদের ব্যাখ্যা, সাত দিন সরকারি হাসপাতালের প্রবেশপথে ‘বন্ধ কারখানা’র মতো পরিস্থিতি ছিল। পরিষেবা যে চালু হয়েছে, প্রথম দিন সেটা অনেকের জানা ছিল না। তাই মঙ্গলবার বহির্বিভাগে রোগীর চাপ কম ছিল। কী ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল, তা বোঝাতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের গেটের সামনে ১৩ জুনের বৃষ্টিভেজা রাতের একটি উদাহরণই যথেষ্ট। হাওড়ার বাসিন্দা সৈকত দে তাঁর ৭৬ বছরের বৃদ্ধ বাবা গৌরাঙ্গ দে-কে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে মেডিক্যালে আসেন। অ্যাম্বুল্যান্সে বেহুঁশ গৌরাঙ্গবাবুকে হাতপাখার হাওয়ায় স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁর স্ত্রী আরতিদেবী। আর যত বার শুনছেন কোনও মেডিক্যাল কলেজের দরজা তাঁর স্বামীর চিকিৎসার জন্য খোলা নেই, তত বার দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। অসহায় ছেলে অ্যাম্বুল্যান্সের সামনে চালকের পাশের আসনে বসে বিড়বিড় করে চলেছেন, ‘‘বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসা করানোর মতো ক্ষমতা নেই। কী যে করি! এসএসকেএমেও ভর্তি নেবে না?’’ মেডিক্যাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত হাজরার একটি হাসপাতালে বাবাকে নিয়ে যান সৈকত। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী সেখানেও বৃদ্ধের চিকিৎসা হয়নি।

বুধবার সৈকতেরাই সরকারি মেডিক্যাল কলেজের বহির্বিভাগে ভিড় করেন। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, এনআরএসে মঙ্গলবার বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২১০০। এ দিন তা বেড়ে হয় প্রায় চার হাজার। প্রথম দিন রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল ১৮২। এ দিন ২৬২। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে মঙ্গলবার বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা ছিল ২০০০। এ দিন সেখানে বহির্বিভাগে চিকিৎসা করিয়েছেন অন্তত ৩৭০০ জন। ন্যাশনাল মেডিক্যালে মঙ্গলবার বহির্বিভাগে ১৫০০ জন রোগী এসেছিলেন। বুধবার বহির্বিভাগে চিকিৎসা করিয়েছেন ২৮০১ জন। সব মিলিয়ে মঙ্গলবারের থেকে এ দিন রোগীর সংখ্যা বেড়ে প্রায় ‘স্বাভাবিক’-এর মাত্রা ছুঁয়েছে তিন হাসপাতালেই।

পাটিগণিত বলছে, গত দু’দিনে শুধু তিনটি মেডিক্যালে বহির্বিভাগে মোট রোগীর সংখ্যা ১৬,০০০। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, প্রতিদিন সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে তিন-চার হাজার রোগী চিকিৎসা করান। এ দিন এনআরএসের হেমাটোলজি বিভাগের বহির্বিভাগে সাত বছরের ছেলে প্রদীপকে কোলে আগলে বসে ছিলেন বসিরহাটের বাসিন্দা দীপিকা পাত্র। ছেলে রক্তের ক্যানসারে ভুগছে। ‘‘ওর বাঁ হাতের তালুতে টিউমারের মতো হয়েছে। গত বুধবার গন্ডগোলের জন্য দেখাতে পারিনি। সাত দিন অপেক্ষা করার পরে আজ ওষুধ নিয়ে বাড়ি যাব,’’ বললেন দীপিকাদেবী।

ওষুধের জন্য সাত দিন অপেক্ষা করতে হল কেন, দীপিকাদেবীরা সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য পাননি।

Patient Government Hospital Doctor's Strike NRS Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy