সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অন্তত এক শতাংশ রোগী ভিন্ রাজ্য বা ভিন্ দেশের।
গত সাত বছরে ঢেলে সাজানো হয়েছে রাজ্যের চিকিৎসা পরিকাঠামো। বিনা পয়সার চিকিৎসা ও ওষুধ পেতে তাই ভিন্ রাজ্য ও দেশ থেকে বাংলায় আসছেন অনেকে। এমনই দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অসুস্থ মানুষকে হাসপাতাল থেকে ফেরায় না রাজ্য। কিন্তু তার জন্য মোটা টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি রাজ্যের সব কটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে সমীক্ষা চালিয়ে স্বাস্থ্য ভবন দেখেছে, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অন্তত এক শতাংশ রোগী ভিন্ রাজ্য বা ভিন্ দেশের। প্রতিবেশী রাজ্য বা দেশ থেকে বছরে অন্তত ১০ হাজার রোগী এ রাজ্যে এসে চিকিৎসা করিয়ে ফিরে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা।
এক কর্তার কথায়, ‘‘সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এক শতাংশ রোগী ভিন্ রাজ্যের বা অন্য দেশের। এ রাজ্যে বছরে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করান। ফলে রাজ্যের বাইরের অন্তত ১০ হাজার মানুষকে চিকিৎসা করছে রাজ্য।’’ ওই কর্তা জানাচ্ছেন, এখন হৃদরোগ থেকে ক্যানসারের চিকিৎসাও বিনা পয়সায় দেওয়া হয়। সমস্ত ওষুধ বিনামূল্যে মেলে। তাই সংখ্যাটা বছরে মাত্র ১০ হাজার হলেও, আসলে চিকিৎসা খরচের দিক থেকে তা বিপুল।
যে চিকিৎসা প্রতিবেশী রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে মেলে না, তা পেতে অনেকে এ রাজ্যে চলে আসছেন বলে জেনেছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। এক কর্তার আবার বক্তব্য,‘‘প্রতিবেশী দেশগুলিতে দালাল চক্রও তৈরি হয়েছে। দালালেরা রোগীদের এনে এ রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে চিকিৎসা করাচ্ছে। সে সব এ বার ধরার ব্যবস্থা হচ্ছে।’’
সরকারি কর্তাদের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়ে ভিন্ রাজ্যের রোগীদের সংখ্যা যাচাই করতে শুধু মেডিক্যাল কলেজগুলিকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল। কারণ, এখানে ভর্তির সময় ঠিকানা লেখার কড়াকড়ি করা হয়। জেলা বা মহকুমা হাসপাতালগুলিতে ঠিকানা বা পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভর্তির ব্যবস্থা এখনও তেমন ভাবে কার্যকর হয়নি। ১৩টি মেডিক্যাল কলেজে রোগী ভর্তির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮-এর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৯৯ হাজার ৪৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে ৩৭ জন ভিন্ দেশের এবং ৮৭২ জন ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দা। এই তথ্য থেকেই স্বাস্থ্য কর্তাদের ধারণা গোটা রাজ্যে সব মিলিয়ে বছরে সংখ্যাটা প্রায় ১০ হাজার। ওই সময়ে মেডিক্যাল কলেজগুলির বহির্বিভাগে ৮ লক্ষ ৫০ হাজার ৯৪৮ জন চিকিৎসা করিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কত জন ভিন রাজ্যের তার কোনও তথ্য স্বাস্থ্য ভবনের কাছে নেই। কর্তাদের মতে, বর্হিবিভাগেও বছরে প্রায় চার লক্ষ ভিন্ রাজ্যের মানুষ চিকিৎসা হয়ে থাকতে পারে।
কর্তারা জানাচ্ছেন, মালদহ, শিলিগুড়ি এবং বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে ভিন্ রাজ্যের রোগী সবচেয়ে বেশি। ঝাড়খণ্ড, বিহার এবং সিকিম থেকে এখানে রোগী এসেছে। আবার নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশের রোগীও অনেকে এ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পেয়েছেন। কলকাতার এসএসকেএম, এনআরএস এবং মেডিক্যাল কলেজেও ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দার চিকিৎসা হয়েছে যথেষ্ঠ।
পরিস্থিতি বদলাতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
স্বাস্থ্য কর্তারা জানিয়েছেন, এ রাজ্যের ৮ কোটি মানুষের হাতে খাদ্যসাথীর কার্ড রয়েছে। প্রতিটি হাসপাতালে খাদ্যসাথীর কার্ড নিয়ে ভর্তি করার নির্দেশ গিয়েছে। ভর্তির সময় পরিচয়পত্র না থাকলে জেলাস্তরের হাসপাতালে চার দিনের মধ্যে তা জমা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু পরিচয়পত্র না আনতে পারলে চিকিৎসা হবে না, এমন নয়— এ কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy