শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হল ধূপগুড়ুি উপনির্বাচন। —নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছিল ঠিক ২৮ দিন আগে ৮ অগস্ট। কিন্তু সে দিনের ছবি দেখা যায়নি মঙ্গলবার। কোনও দলের পক্ষে বড় কোনও অভিযোগও নেই ধূপগুড়ি বিধানসভার উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ নিয়ে। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন থেকে গণনা পর্যন্ত রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মতো জলপাইগুড়ির এই বিধানসভা এলাকাতেও সংঘর্ষের খবর মিলেছিল।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে জয়ী হন বিজেপির বিষ্ণুপদ রায়। তাঁর মৃত্যুতেই এই উপনির্বাচন। পাহাড় লাগোয়া ধূপগুড়ি বিধানসভায় লড়াই এ বার ত্রিমুখী। তিন জনই রায়। তিন জনই রাজবংশী। কাশ্মীরে নিহত জওয়ানের স্ত্রী তাপসী রায় বিজেপি প্রার্থী। তৃণমূলের প্রার্থী অধ্যাপক নির্মলচন্দ্র রায়। কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী তথা শিক্ষক ঈশ্বরচন্দ্র রায়। প্রচারের শেষ দিনে ভোটের হাওয়া নতুন গতি এনে দেন আর এক রায়। প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক মিতালি রায় বিজেপিতে যোগ দেন। রাজ্য বিধানসভায় কোনও বড় বদল আনবে না ধূপগুড়ির রায়। তবে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির কাছে গড় রক্ষা আর তৃণমূলের কাছে গড় উদ্ধারের হিসাবে বড় কথা বলে দেবে ধূপগুড়ি। কে হাসবে? সেই রায় জানা যাবে আগামী শুক্রবার গণনার পরে।
উপনির্বাচনে সাধারণ ভাবে ভোটের হার কমই থাকে। কিন্তু দুপুর ৩টের সময়েই ৬০ শতাংশের উপরে ভোট পড়ে যায় ধূপগুড়িতে। শান্ত নির্বাচনের জন্য বিরোধীরা বলছেন, ৩০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকার জন্যই কোনও গোলমাল হয়নি। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। তবে তখনই অভিযোগ উঠেছিল যে, বাহিনীকে ব্যবহারই করা হয়নি।
রাজ্যের অন্যান্য জেলার তুলনায় জলপাইগুড়িতে পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে হিংসার অভিযোগ কমই ছিল। তবে যেটুকু ছিল তার মধ্যে একটা বড় অংশই ধূপগুড়িতে। ভোটের দিন ধূপগুড়ির শাকোয়াঝোরা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সোনাখালি গোঁসাইহাট ফরেস্ট ভিলেজ প্রাইমারি স্কুলের বুথে ছাপ্পার অভিযোগ উঠেছিল। সেখানে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে ধুন্ধুমার বেধে যায়। সেই অভিযোগ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। গণনার পরেও শিরোনামে ছিল ধূপগূড়ি। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের বাইরে থেকে উদ্ধার হয় ৪৭টি ব্যালট। তা নিয়ে জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করে কংগ্রেস। প্রশ্নের মুখে পড়ে ধূপগুড়ির বিডিও শঙ্খদীপ দাসের ভূমিকা। জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত। কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিন্হার এজলাসে তলব করা হয় শঙ্খদীপকে। তবে উপনির্বাচনের সময়ে তিনি আর দায়িত্বে ছিলেন না। অগস্টেই তাঁর জায়গায় নতুন বিডিও হয়ে আসেন জয়ন্ত রায়। শঙ্খদীপের মামলা এখনও বিচারাধীন।
ভোটের আগে ধূপগুড়িরই বারোঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল-সিপিআইম সংঘর্ষ হয়েছিল। দুই পক্ষের সাত জন আহত হয়েছিলেন পঞ্চায়েত নির্বাচনের পোস্টার লাগানো নিয়ে বচসায়। এই ধরণের সংঘাতের অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখেই সিপিএম এই উপনির্বাচনে ‘সক্রিয়’ থাকার জন্য রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) কাছে দাবি জানিয়ে রেখেছিল সিপিএম। একই পথে হেঁটেছিল বিজেপিও। তবে মঙ্গলবার দিনের শেষে স্বস্তি সব দলেই। কারণ, ধূপগুড়ির উপনির্বাচনে পঞ্চায়েত ভোটের অশান্তির দেখা মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy