E-Paper

চাপ? আতঙ্ক নিয়ে ঘরফেরত

গত দু-তিন দিন ধরে কিছু কিছু পরিবার প্রশাসনের সহযোগিতায় বাড়িতে ফিরতে শুরু করে। রবিবার সকালেও ১৫টি পরিবারের ৬০ জন সদস্য প্রশাসনের গাড়ি করে নিজেদের বাড়ির দিকে রওনা হন।

জয়ন্ত সেন , বিমান হাজরা

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫ ০৫:৫৫
মালদহের পারলালপুর হাই স্কুলের শিবির থেকে নিজেদের বাড়িতে ফিরছেন পড়শি মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান পুরসভার বেতবোনা ও হাতিচিত্রার বাসিন্দারা।

মালদহের পারলালপুর হাই স্কুলের শিবির থেকে নিজেদের বাড়িতে ফিরছেন পড়শি মুর্শিদাবাদ জেলার ধুলিয়ান পুরসভার বেতবোনা ও হাতিচিত্রার বাসিন্দারা। রবিবার দুপুরে। ছবি: জয়ন্ত সেন।

রবিবার সন্ধ্যায় ফাঁকা হয়ে গেল মালদহের পারলালপুর হাই স্কুলের শিবির। মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জ, ধুলিয়ানে গোলমালের পরে অনেক পরিবার গঙ্গা পেরিয়ে মালদহের পারলালপুরে একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিল। গত দু-তিন দিন ধরে কিছু কিছু পরিবার প্রশাসনের সহযোগিতায় বাড়িতে ফিরতে শুরু করে। রবিবার সকালেও ১৫টি পরিবারের ৬০ জন সদস্য প্রশাসনের গাড়ি করে নিজেদের বাড়ির দিকে রওনা হন। সন্ধ্যার দিকে বাকিরাও ফিরে যান।

শমসেরগঞ্জের ফেরিঘাটে তাঁদের স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলাম এবং পুলিশকর্তারা। আমিরুল বলেন, ‘‘জাফরাবাদে প্রায় সকলেই ফিরেছেন। বেতবোনায় ঘরছাড়ারাও ফিরে আসায় এলাকায় স্বস্তি ফিরবে। ফিরে আসা পরিবারগুলির ভয় কেটেছে। আমরা তাঁদের সব রকম সাহায্য করব।’’ জঙ্গিপুর পুলিশ-জেলার সুপার আনন্দ রায় জানান, পারলালপুর থেকেযাঁরা ফিরেছেন, তাঁদের পুলিশ বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে।

প্রশ্ন উঠেছে, এই শিবিরে আশ্রিত মানুষজনের দাবি ছিল, এলাকায় বিএসএফের স্থায়ী শিবির করতে হবে। তার পরেই তাঁরা ফিরবেন। সে কথা তাঁরা রাজ্যপাল থেকে শুরু করে জাতীয় মহিলা কমিশনের কাছেও বলেছিলেন। কিন্তু কী এমন হল যে, রাজ্যপাল ঘুরে যাওয়ার দু’দিনের মধ্যেই রবিবার সন্ধ্যায় শিবির পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে গেল?

সন্ধ্যায় পারলালপুর গঙ্গা ঘাটে বসে হাতিচিত্রার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘গত ১১ এপ্রিল পরিবার পরিজন নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে গঙ্গা পেরিয়ে পারলালপুর এসেছিলাম। তখন গ্রামের মানুষজনই আমাদের ওই পারলালপুর হাই স্কুলে আশ্রয় দিয়েছিলেন। শনিবার রাতে সেই গ্রামের বাসিন্দারাই এসে আমাদের জানিয়েছেন, আমরা থাকায় স্কুল খোলা যাচ্ছে না। তাতে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার ব্যাঘাত ঘটছে।’’ তিনি জানান, স্থানীয়েরা নানা অসুবিধার কথা জানিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনের তরফেও আমাদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য ক্রমাগত চাপ দেওয়া হচ্ছিল। ফলে বাধ্য হয়েই আমাদের বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।’’

বেতবোনার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘কয়েক দিন শিবিরে প্রশাসনের তরফে বলা হচ্ছে, যাঁদের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সরকার তাঁদের বাড়ি করে দেবে। সেই বাড়ির তালিকা তৈরির জন্য এলাকায় শমসেরগঞ্জ ব্লক প্রশাসনের তরফে সমীক্ষা করা হতে পারে। কিন্তু আমরা শিবিরে থাকলে সে তালিকায় আমাদের নাম উঠবে না। আতঙ্ককে সঙ্গী করেই তাই বাড়িতে ফিরতে বাধ্য হলাম।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এটাই ভরসা যে এলাকায় এখনও বিএসএফ রয়েছে।’’

পারলালপুর থেকে কাঞ্চনতলা ঘাটে ফিরে বেতবোনার আর এক বাসিন্দাও বলেন, ‘‘পারলালপুর হাই স্কুলে পৌঁছনোর পর থেকেই প্রশাসনের তরফ থেকে বাড়ি ফেরার জন্য চাপ তৈরি করা হয়। রবিবার সকাল থেকে চাপ আরও বাড়তে থাকে। তাই বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরলাম।’’ একই কথা বলেন বেতবোনার বাসিন্দা এক মহিলাও।

পারলালপুরেরও এক বাসিন্দার আবার বক্তব্য, ‘‘এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এই শিবির চলায় স্কুল বন্ধ রয়েছে— এই বিষয়টি যেমন রয়েছে, তেমনই এই পরিবারগুলিকে এলাকার যে সমস্ত মানুষ সহযোগিতা করেছিলেন, তাঁদের কয়েক জনকে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দেওয়াও হয়েছে। ফলে কার্যত বাধ্য হয়েই গ্রামবাসীদের তরফে শিবিরে আশ্রিত মানুষজনকে শিবির ছাড়তে অনুরোধ করা হয়েছিল।’’

যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলার পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ধুলিয়ান এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে শিবিরে আশ্রিতদের জানানো হয়েছিল ও তাঁদের বাড়িতে ফিরে যেতে অনুরোধ করা হয়। বাকি যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন।’’

পারলালপুরের ক্যাম্প দেখাশোনার দায়িত্ব থাকা তপন চৌধুরী এ দিন বলেন, ‘‘ওঁরা স্বেচ্ছায় ধুলিয়ান ফিরে গিয়েছেন। সঙ্গে পুলিশও গিয়েছে। প্রত্যেককে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। রবিবার পারলালপুর শিবির বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’ মালদহ সদর মহকুমা শাসক পঙ্কজ তামাংও বলেন, ‘‘নিজেদের ইচ্ছেতেই পারলালপুর হাই স্কুলে আশ্রিতেরা ন নিজেদের বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন। তাঁদের হাতে চাল, ডাল, ত্রিপল ও বিপর্যয় মোকাবিলা কিট তুলে দেওয়া হয়েছে।’’ যদিও গঙ্গা পার হতে নৌকায় ওঠার সময়ও অনেকেই বলে গেলেন, ‘‘আতঙ্ক নিয়েই বাড়ি ফিরছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Murshidabad Malda Unrest Situation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy