Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ুক গেট খুলে রাখার সময়, চায় সীমান্তের গ্রাম

বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া কোচবিহারের গীতালদহে কাঁটাতারের ওপারের গ্রাম রতিনন্দন-কোনামুক্তা পয়েস্তি। বেশির ভাগ কাজেই তাঁদের আসতে হয় ‘গেট’ পেরিয়ে। সেই গেট খোলে দিনে তিন বার। সকালে সাতটা থেকে আটটা। তার পরে বেলা ১২টা থেকে ১টা। তৃতীয় বার বিকেল ৪-৫টা পর্যন্ত।

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:০৫
Share: Save:

স্কুল শুরু হয় সকাল সাড়ে ১০টায়। তার জন্য ভোরের আলো ফুটতেই উনুনে আঁচ দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় আমিনা বিবির বাড়িতে। পড়ি কি মরি করে দু’টো ভাত ফুটিয়ে মেয়েকে খাইয়ে সাড়ে ছ’টার মধ্যে বের করতে না পারলে, সে দিনের মতো উপস্থিতির খাতায় লাল দাগ পড়বে। বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব দু’কিলোমিটার। কিন্তু এইটুকু দূরত্বেই কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিএসএফের ‘ফেন্সিং গেট’।

বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া কোচবিহারের গীতালদহে কাঁটাতারের ওপারের গ্রাম রতিনন্দন-কোনামুক্তা পয়েস্তি। বেশির ভাগ কাজেই তাঁদের আসতে হয় ‘গেট’ পেরিয়ে। সেই গেট খোলে দিনে তিন বার। সকালে সাতটা থেকে আটটা। তার পরে বেলা ১২টা থেকে ১টা। তৃতীয় বার বিকেল ৪-৫টা পর্যন্ত। তাই স্কুলের সময়ের অনেক আগেই গেট পেরিয়ে এ পারে চলে আসতে হয় ফিরোজ, সোহেল, ফিরোজা ইয়াসমিনদের। ফলে যে সময়টায় নিজে প়ড়াশোনা করার কথা, সেই সময়টা কাটে স্কুল চত্বরে কিংবা পথে ঘাটে ঘুরে বেড়িয়ে।

ছুটি হয়ে গেলেও তাই গেট খোলার অপেক্ষায় বসে থাকতে হয় ছাত্রছাত্রীদের। যেমন, শনিবার দেড়টা থেকে দু’টোর মধ্যে স্কুল ছুটি হয়। তখন ৪টে পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকে না। অন্য দিন স্কুল চারটেয় শেষ হয়। কিন্তু তার আগেই ছুটি নিয়ে ফিরোজাদের বেরিয়ে পড়তে হয়। কারণ কাঁটাতার অবধিও প্রায় আধ কিলোমিটার হাঁটাপথ।

কোচবিহারের সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় জানান, তাঁরা একটি সমীক্ষা করে দেখেছেন, সীমান্তের অন্তত ২৫টি স্কুলে এমন সমস্যা রয়েছে। অর্থাৎ, কয়েকশো ছাত্রছাত্রী অসুবিধের মধ্যে রয়েছে। তাদের কথা জানে প্রশাসনও। বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষও উদ্বিগ্ন। বিএসএফকে গেট খোলার
এই সূচি শিথিল করতে আবেদন করেছে বিদ্যাসাগর মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র স্কুল। বিএসএফের কোচবিহার রেঞ্জের ডিআইজি সিএল বেলওয়া বলেন, “বিষয়টি সম্প্রতি জেনেছি। ছাত্রছাত্রীদের যাতে পড়াশোনায় কোনও অসুবিধে না হয়, সেটা দেখছি।”

ফিরোজ, সোহেলদের কথায়, ‘‘গেট পেরিয়েও অনেকটা পথ হাঁটতে হয়। বাড়ি ফিরতে সন্ধে নেমে যায়।” স্কুলে সবুজসাথী প্রকল্পের সাইকেলও এখনও আসেনি। প্রধান শিক্ষক আসরাফ আলি বলেন, “ওপার থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের কখনও আগে ছুটি দিতে হয়। কখনও পরে। সমস্যাটি প্রত্যেককে জানিয়েছি।”

সেই অপেক্ষাতেই রয়েছে রতিনন্দন-কোনামুক্তা পয়েস্তি। আমিনা বলেন, ছেলেমেয়েরা যে কোথায় কী করে অত ক্ষণ সময়, সারা দিন সেই ভাবনা হয়। তা ছাড়া, সকালের পরে সেই দুপুরে মিড ডে মিল। তার পরে আবার বাড়ি এলে পেটে কিছু পড়ে। তাঁর কথায়, ‘‘গেট খোলার সময় বাড়লে, হাঁফ ছেড়ে বাঁচি।’’

হাঁফ ছেড়ে বাঁচে ফিরোজাও। সপ্তম শ্রেণির ফিরোজার কথায়, ‘‘হঠাৎ শরীর খারাপ হলেও মায়ের কাছে ফিরতে পারি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Border cooch behar School Time Fencing Gate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE