রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকেই করোনা আক্রান্তের খবর মিলছে। সেই তালিকায় কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী জেলার আধিক্য কিছুটা হলেও বেশি। তবে রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে তা সরকারি ভাবে স্পষ্ট করেনি স্বাস্থ্য প্রশাসন। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ এবং কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে প্রায় ১০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশেরই শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।
ওমিক্রনের উপপ্রজাতি এনবি.১.৮.১ এবং এলএফ.৭ এই দু’টিই এ বারে সংক্রমণের কারণ। সব থেকে বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে এনবি.১.৮.১। বঙ্গেও যে সংক্রমণ হচ্ছে তার নেপথ্যে ওই উপপ্রজাতির ভূমিকা বেশি বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। তাঁদের আরও পর্যবেক্ষণ, গত এক সপ্তাহে যে ২০ জন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে, তাতে সব বয়সিরাই রয়েছে। ন’মাসের শিশু থেকে কিশোর, মাঝবয়সি, সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ সকলেই আক্রান্ত।
জানা যাচ্ছে, বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে সোমবার নিউমোনিয়া সংক্রমণ নিয়ে ৭২ বছরের এক বৃদ্ধ ভর্তি হন। সোনারপুরের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধের কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। তাঁকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হুগলির রিষড়ার বাসিন্দা বছর পনেরোর কিশোর এখন সুস্থতার পথে। সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ৬৬ এবং ৫০ বছরের দুই মহিলা কোভিড সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি। এঁদের দু’জনেরই কোমর্বিডিটি রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
অন্য দিকে, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (পিকু)-এ ভর্তি ন’মাসের শিশু এবং আইসোলেশন ওয়ার্ডে থাকা ৫৫ বছরেরমহিলা দু’জনেরই আর অক্সিজেন লাগছে না বলে খবর। হাওড়ার বাসিন্দা ওই দুজনেরই শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। চিকিৎসকদের মতে, স্বাভাবিক ভাবেই যত সময় যাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষমতা বাড়বে। কিন্তু মারণ ক্ষমতা ক্রমশ ক্ষীণ হবে।
মালদহের দু’বছরের এক শিশুর করোনা সংক্রমণের খবর মিলেছে। এ দিন শিশুটিকে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট থেকে জেনারেল ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জ্বরের মতো উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তি হলে করোনা, বার্ড ফ্লু, অ্যাডিনো ভাইরাসের পরীক্ষা করা হয়। শনিবার ভর্তি হওয়া ওই শিশুটিরও কোভিড পরীক্ষা হয়। শিশুটির অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তবুও তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’’
ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে এনবি.১.৮.১ এবং এলএফ.৭ এই দুটি উপপ্রজাতিকে এখনও উদ্বেগজনক বলা হয়নি। শুধু নজরে রাখার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ওই দু’টি উপপ্রজাতির সংক্রমণে মৃত্যু হার নেই বললেই চলে। তবে যাঁরা মারা যাচ্ছেন তাঁদের কর্কট রোগ, কিডনির অসুখ কিংবামারাত্মক রকমের অনিয়ন্ত্রিত কোমর্বিডিটি রয়েছে।’’
চিকিৎসকেরা আরও জানাচ্ছেন, আপার রেসপিরেটরি সংক্রমণ, গা-হাত-পা এবং গাঁটে ব্যাথা,জ্বরের উপসর্গ নিয়ে আসছেনরোগীরা। তবে সকলেরই করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে তেমনটা নয়। নারায়ণের কথায়, ‘‘সমস্যা গুরুতর এবং যাঁদের করোনা সংক্রমণ এক প্রকার নিশ্চিত মনে করা হচ্ছে তাঁদেরই পরীক্ষা করতে বলা হচ্ছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)