Advertisement
E-Paper

বিজেপি ছেড়ে ঘরে ফেরার হাওয়া বামে

লোকসভা ভোটের পরে ছিল বাম শিবির ছেড়ে দক্ষিণপন্থী হওয়ার হিড়িক। এখন হাওয়া উল্টো— গেরুয়া ছেড়ে লালের দিকে ফেরার আগ্রহ। আন্দোলনের সক্রিয়তা বাড়িয়ে রাজ্যে বিরোধী রাজনীতির পরিসরে বিজেপিকে পিছনে ঠেলে ফের যে ভাবে জাঁকিয়ে বসছে বামেরা, সেই সময়ে এই প্রবণতার তাৎপর্য দেখছেন অনেকেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৯
অন্য দল ছেড়ে সিপিএমে যোগদানকারী (বাঁ দিক থেকে) জিয়াউল আনসার, আবুল মাজান এবং তারাপদ ঘোষ। শুক্রবার মহম্মদবাজারের জনসভায় অনির্বাণ সেনের তোলা ছবি।

অন্য দল ছেড়ে সিপিএমে যোগদানকারী (বাঁ দিক থেকে) জিয়াউল আনসার, আবুল মাজান এবং তারাপদ ঘোষ। শুক্রবার মহম্মদবাজারের জনসভায় অনির্বাণ সেনের তোলা ছবি।

লোকসভা ভোটের পরে ছিল বাম শিবির ছেড়ে দক্ষিণপন্থী হওয়ার হিড়িক। এখন হাওয়া উল্টো— গেরুয়া ছেড়ে লালের দিকে ফেরার আগ্রহ। আন্দোলনের সক্রিয়তা বাড়িয়ে রাজ্যে বিরোধী রাজনীতির পরিসরে বিজেপিকে পিছনে ঠেলে ফের যে ভাবে জাঁকিয়ে বসছে বামেরা, সেই সময়ে এই প্রবণতার তাৎপর্য দেখছেন অনেকেই।

প্রথম বড় নজিরটি শুক্রবার গড়েছেন যুব নেতা অনির্বাণ চৌধুরী। ফরওয়ার্ড ব্লকের সংগঠন যুব লিগের রাজ্য সম্পাদক হিসেবে এক সময়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর আস্থাভাজন ছিলেন। বছরখানেক আগে সপার্ষদ যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। কিন্তু এ দিন তিনি চিঠি পাঠিয়ে বিজেপির সংগঠন সরকারি কর্মচারী পরিষদের রাজ্য সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। ওই একটি পদ ছাড়া বিজেপিতে তাঁর আর আলাদা কোনও সদস্যপদ ছিল না।

নিজের পুরনো দলেই ফিরবেন কি না, তা নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে চাননি অনির্বাণ। তবে বামপন্থী রাজনীতিতেই যে থাকবেন, তা নিয়ে সংশয় রাখেননি। বলেছেন, ‘‘বামপন্থীদের দুর্দিনে আমি বাম শিবির ছেড়ে গিয়েছিলাম, এটা ঠিক। কিন্তু সেই সময়ে বামেদের দিক থেকে তেমন আন্দোলনের তৎপরতা ছিল না। এখন বামপন্থীরাই রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে গিয়ে রক্তাক্ত। তাঁদের পাশে এই সময় দাঁড়ানো উচিত।’’ তাঁর পুরনো দলের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘বামপন্থী রাজনীতির ঘরানা থেকে বিজেপি বা তৃণমূলে গিয়ে অনেকের পক্ষেই মানিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। তাঁরা ভুল বুঝতে পারলে তাঁদের নিয়ে কাজ করতে বামপন্থীদেরও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’ ঘটনাচক্রে, এ দিনই অনির্বাণদের জেলা উত্তর ২৪ পরগনায় গিয়ে দেবব্রতবাবু এবং দলের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ বলেছেন, সকলকে নিয়েই কাজ করার সময় এখন। নির্দিষ্ট কারও সদস্যপদ নিয়ে জটিলতা তৈরি করা অর্থহীন।

এক সময়ে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধদের বড় আশ্রয় হয়ে উঠেছিল বিজেপি। কিন্তু এখন হৃদয় ঘোষ, নিমাই দাসের মতো বেশ কিছু নেতা-কর্মী বিজেপি ছে়ড়ে তৃণমূলে ফিরতে শুরু করেছেন। তবু শাসক দলের বিরুদ্ধে কোথাও প্রলোভন, কোথাও ভয় দেখিয়ে হৃদয় পরিবর্তন ঘটানোর অভিযোগ আছে। যা বামেদের বিরুদ্ধে এখনও নেই। বিমানবাবুর কথায়, ‘‘আন্দোলনের রাস্তাতেই আমরা থাকব। কোন দলের কী চেহারা, মানুষ বুঝে নেবেন।’’

মুর্শিদাবাদ, বীরভূম বা নদিয়ার মতো অনেক জেলাতেই অল্পবিস্তর বামেদের ‘ঘর ওয়াপসি’র আভাস ধরা পড়ছে। বীরভূমের মহম্মদবাজারে এ দিনই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের সভায় দেখা গিয়েছে এমন কিছু মুখ, যাঁরা সাম্প্রতিক কালে বামেদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছিলেন। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে ওই দল করা অনেককেও এ দিন সিপিএমের মিছিলে দেখা গিয়েছে। সেকেড্ডা গ্রামের তৃণমূল নেতা মহম্মদ সাহারিয়া, সিরাজুল শেখ-দের নেতৃত্বে শ’দুয়েক মানুষ মিছিল করে এসেছিলেন। তাঁরা বলেন, ‘‘তৃণমূল দলটা দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে। কোনও আদর্শ, নিয়মনীতি নেই।’’ আবার বীরভূমেরই চড়িচা পঞ্চায়েতের তানসুলি গ্রামের তারাপদ ঘোষ, উজ্জ্বল ঘোষ-দের বক্তব্য, যে আশা নিয়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন, তার কিছুই পূরণ হয়নি!

উল্টো দিকে বাম দলে থেকেও নিষ্ক্রিয় ছিলেন, এমন অনেকেও ফের দলীয় কর্মসূচিতে সামিল হচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, নেতাদের রাস্তায় না দেখে তাঁরা হতাশ হচ্ছিলেন। এখন সেই ছবি বদলাচ্ছে। বহরমপুরে এ দিন সিপিএমের সভায় ভিড় দেখে জেলা বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মণ্ডল মেনেই নিয়েছেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ জেলায় ব্যাকফুটে থাকা সিপিএমকে অনেকটাই চাঙ্গা করে দিয়েছে।’’

CPM Trinamool BJP congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy