E-Paper

‘লড়াইয়ে’ আটকে গেল স্থায়ী ডিএমই নিয়োগ

ডিএমই পদের জন্য ১১ জন ইন্টারভি‌উ দিলেও কেন তাঁদের মধ্যে থেকে কাউকে এখনও নির্বাচিত করা গেল না? বিষয়টি নিয়ে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৫৫
An image of Swasthya Bhawan

—ফাইল চিত্র।

‘লড়াই’ এমনই তীব্র যে, আটকে গেল স্থায়ী নিয়োগ! কার বা কাদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার পদে বসবেন, তা চূড়ান্ত না হওয়াতেই এই পদক্ষেপ বলে অভিযোগ চিকিৎসকদের একাংশের।

যার জেরে ওই নির্দিষ্ট পদের জন্য ১১ জন পরীক্ষা দিলেও সেই ফলাফল অপ্রকাশিত থেকে গেল। বরং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অতি গুরুত্বপূর্ণ পদ স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা বা ‘ডিএমই’ পদে বসানো হল অবসরের পরেও কর্মরত এক কর্তাকে। যিনি আবার ওই পদে নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউয়ের নির্দেশিকা জারি করেছিলেন।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার পদ থেকে অবসর নিয়েছেন চিকিৎসক দেবাশিস ভট্টাচার্য। তারও দিনকয়েক আগে ওই পদে নতুন কাউকে নিযুক্ত করার জন্য ইন্টারভিউ হয়। কিন্তু এতগুলি দিন কেটে গেলেও স্থায়ী ভাবে কাউকে নিযুক্ত করার সিদ্ধান্তই নিতে পারেনি রাজ্য প্রশাসন। শাসকদলের ঘনিষ্ঠ কোন গোষ্ঠীর পছন্দের লোক ওই পদে বসবেন, তা নিয়েই তুঙ্গে ওঠে জল্পনা। তার মধ্যেই রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিবের শনিবার জারি করা এক নির্দেশিকায় বলা হয়, দফতরের ওএসডি এবং বিশেষ সচিব (স্বাস্থ্য-শিক্ষা) অনিরুদ্ধ নিয়োগী স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা হিসাবে কাজ করবেন। যত ক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী ভাবে কাউকে ওই পদে নিযুক্ত করা না হচ্ছে।

সূত্রের খবর, কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের ডিন থেকে বিশেষ সচিব হয়েছিলেন অনিরুদ্ধ। কয়েক মাস আগে তিনি অবসর নেন। তার পরেও তাঁকে ‘এক্সটেনশন’-এ রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য-শিক্ষা দফতরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে তিনি রয়েছেন। এ বার সেই সঙ্গে যুক্ত হল স্বাস্থ্য-শিক্ষা ব্যবস্থার সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বও।

ডিএমই পদের জন্য ১১ জন ইন্টারভি‌উ দিলেও কেন তাঁদের মধ্যে থেকে কাউকে এখনও নির্বাচিত করা গেল না? বিষয়টি নিয়ে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। এক কর্তা শুধু বললেন, ‘‘বিষয়টি প্রশাসনের শীর্ষ মহল দেখছে।’’

স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরের খবর, গোষ্ঠীগত ‘লড়াইয়ে’ কার্যত দিশাহারা শীর্ষ কর্তারা। জানা যাচ্ছে, বিশেষ ক্ষমতাশালী ‘উত্তরবঙ্গ লবি’ চাইছে, তাদের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের কাউকে ওই
পদে বসানো হোক। এমনকি, সেই ঘনিষ্ঠের তালিকায় থাকা বাকিদেরও রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের শীর্ষ পদে বসানোর জন্য ওই বিশেষ গোষ্ঠী অতি তৎপর হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। যা নিয়ে বার বার রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তরেও ওই গোষ্ঠী তদ্বির করছে বলে সূত্রের খবর।

অন্য দিকে, ওই গোষ্ঠীর নিজেদের মতো করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সব কিছু সাজিয়ে নেওয়ায় আপত্তি তুলেছে শাসকদলের ঘনিষ্ঠ অন্য একটি অংশ। ফলে, কার কথা শীর্ষ মহল রাখবে, তা নিয়েই চলছে টানাপড়েন।

রাজ্যের একাধিক বিরোধী চিকিৎসক সংগঠনের অভিযোগও অবশ্য উত্তরবঙ্গ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই। রাজ্যের সিনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, ‘‘স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা কে হবেন, সেখানে কোনও টানাপড়েনের জায়গা নেই। যিনি কাজের অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা-সহ অন্যান্য মাপকাঠিতে এগিয়ে থাকবেন, তাঁকেই করা উচিত। তিনি যে কোনও পক্ষেরই ঘনিষ্ঠ হতে পারেন।’’

কার অঙ্গুলি হেলনে চিকিৎসা শিক্ষায় এই অচলাবস্থা তৈরি হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিসে কি কোনও যোগ্য ব্যক্তি নেই? ডিএমই পদের জন্য যাঁরা ইন্টারভিউ দিলেন, তাঁরা সবাই কি অযোগ্য? বিশেষ দু’-এক জনের জন্য আর কত অমর্যাদা, অসম্মান করা হবে ডিএমই, প্রিন্সিপালের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক চেয়ারের।’’

এ রাজ্যে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা, স্বাস্থ্য অধিকর্তা, স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মতো কোনও পদেই এখন আর স্থায়ী ভাবে কেউ দায়িত্বে নেই। এই প্রসঙ্গটি তুলে ‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘বোঝা যাচ্ছে না আদৌ এই পদগুলির অস্তিত্ব রয়েছে কি না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সর্বোচ্চ এই গুরুত্বপূর্ণ পদগুলি কার্যত অকেজো করে রাখা হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Swasthya Bhawan Recruitment conflict

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy