বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়েও মেলেনি রথযাত্রার অনুমতি। সেই যাত্রার উদ্বোধনে এসে অমিত শাহের যে সভা করার কথা ছিল, মেলেনি তার মাঠও। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের ক্ষেত্রে একেবারে বিপরীত চিত্র। দু’একটি ছোটখাটো হুমকি ছাড়া মাঠ থেকে কর্মীদের জন্য গাড়ি, কোথাও কোনও সমস্যা নেই। এর পিছনে কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি রাজনৈতিক সৌজন্য? নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজনাথ সিংহের ব্যক্তিগত সম্পর্কের প্রভাব?
গত কয়েক দিন ধরে এই প্রশ্নগুলিই ঘুরছে কোচবিহারে। তৃণমূলের কর্মীদের অনেকেই বলছেন, রথযাত্রার উদ্বোধনে ৭ ডিসেম্বর ঝিনাইডাঙায় অমিত শাহের সভা নিয়ে তো একেবারে উল্টো ছবি ছিল। তখন জেলা পুলিশ-প্রশাসনের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, রথযাত্রা হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে। একই চিত্র দেখা গিয়েছে মালদহ এবং সাম্প্রতিক কাঁথির সভাতেও। কিন্তু রাজনাথের বেলায় সব যেন বদলে গিয়েছে। আগামিকাল, শনিবার কোচবিহারের মাথাভাঙায় পারাডুবিতে এবং তার পরে আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটায় যে সভা করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।
বিজেপি সূত্রের খবর, পারাডুবির জমি নিয়ে পুলিশের কাছে যাওয়ার পরে তারা বুঝিয়ে দেয়, কাদের কাছ থেকে অনুমতি দরকার। সেই সব বিভাগ থেকে অনুমতি পেতেও অসুবিধা হয়নি। ফলে পুলিশের অনুমতিও হাতে এসে গিয়েছে। বিজেপি সূত্রে আরও বলা হচ্ছে, আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, হেলিকপ্টার নামানোর জায়গা নিয়েও সমস্যা হবে না। সভায় কর্মীদের নিয়ে যেতে যে সব গাড়ি ভাড়া করা হচ্ছে, এখন পর্যন্ত সেখানেও বাধাদানের কোনও খবর নেই।
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘অনুমতি দিতে গেলে সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দিকগুলি মাথায় রাখতে হয়। সেগুলি ঠিক থাকলে অনুমতি মিলবে।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘রাজনাথের সভা থেকেই বোঝা যায়, ঠিক জায়গায় ঠিক ভাবে শর্ত মেনে আবেদন করলে, প্রশাসন তা আটকায় না।’’
বিজেপির কোচবিহার জেলা সভানেত্রী মালতী রাভা বলেন, “সভার অনুমতি আমরা পেয়েছি। সভা নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ অনেক।” দলের নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, মমতা-রাজনাথ সম্পর্ক যে ভাল, সেটা সকলেই জানেন। তাই এমন সৌজন্য। তৃণমূলের লোকজনও বলছেন, রাজনাথের সভা বলেই অন্য চোখে দেখছেন মমতা।
যদিও তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, প্রথম সারির কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা রাজ্যের অতিথি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ২ ফেব্রুয়ারির সফর নিয়ে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এর মধ্যেই বলেছেন, ‘‘তিনি সরকারি অতিথি। তাই তাঁর সফরে কোথাও যাতে কোনও গোলমাল না হয়, সেটা আমরা দেখব।’’ সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় অবশ্য বলছেন, “শুধু রাজনাথ সিংহ নয়, দিদিভাই-মোদীভাইয়ের মধ্যেও সম্পর্ক রয়েছে। বাকি যা চলছে সব ‘গটআপ’।”