বইমেলার মাঠে রূপা চক্রবর্তী। লালবাগে। ছবি: মৃন্ময় সরকার
তাঁকে দেখলেই সরে যাচ্ছিল থিকথিকে ভিড়টা! কেউ তাকিয়েছিলেন অবাক হয়ে। কেউ শক্ত করে ধরেছিলেন চেয়ারের হাতলটা। কেউ আবার সদ্য প্রকাশিত পত্রিকা তাঁর হাতে তুলে দিয়ে বলেছেন, ‘‘দিদি, পড়ে মতামত জানাবেন কিন্তু। ঠিকানাটা দেখুন...।’’
কথা ফুরোয় না। তিনি পত্রিকার পাতায় মুখ গোঁজেন। ছাপাখানার টাটকা গন্ধে ভিজে যায় তাঁর চোখ। একটু সামলে চাকা গড়িয়ে চলে আর এক স্টলে। অনেকে বলেন, বই বই বৈ আর কিছু নয়। বড়দিনের সন্ধ্যায় লালবাগ বইমেলায় হুইল চেয়ারে বসে বছর পঁচিশের রূপা চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘দুঃসময়ে সবথেকে বড় বন্ধু বই-ই।’’
রূপা তখন নবম শ্রেণি। এক বিকেলে খবর এল, তার বিয়ে। নবাবভূমের মেয়ে চলল পলাশি। কোলে এল ফুটফুটে মেয়ে। তাঁর হাত ধরে মেয়ে হাঁটতে শিখল বটে। কিন্তু রূপাই পঙ্গু হয়ে গেলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এক দিন ঘুম ভাঙার পরে বুঝলাম, কোমরের নীচ থেকে সাড় নেই। ডাক্তার-বদ্যি করেও কিছু হল না।’’
রূপার ঠাঁই হল বাপের বাড়ি। অভাবের সংসারে ধার করে আনা বইয়ে মুখ গুঁজে আশ্রয় খোঁজেন তিনি। ২০ ডিসেম্বর থেকে বাড়ির পাশে শুরু হয়েছে বইমেলা। রূপা ভাবেন, ‘‘ইস! যদি এক বার যেতে পারতাম!’’ রূপার ইচ্ছের কথা জানতে পারেন বইমেলা কমিটির কর্ণধার শুভাশিস পাল। যিশু-দিবসের সকালে রূপার বাড়িতে হাজির কমিটির লোকজন। সঙ্গে নতুন হুইল চেয়ার। রূপা বলছেন, ‘‘সান্টা ক্লজ়ের কথা অনেক শুনেছি। এই প্রথম আমি তার উপহার পেলাম।’’ শুভাশিসবাবু বলেন, ‘‘আমরা রূপাকে কিছু বই উপহার দিয়েছি। আর তিনি এ বার হুইল চেয়ারে স্থানীয় পাঠাগারেও যেতে পারবেন।’’ পৌষ বিকেলে চার বছরের মেয়ে প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াচ্ছে মায়ের চারপাশে। নতুন বইয়ের পাতা ওল্টাচ্ছেন রূপা, ‘‘কী রে, আর একটা গল্প শুনবি নাকি?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy