জবুথবু: গঙ্গাসাগরে। —নিজস্ব চিত্র।
বেশি পুণ্যের আশায় বেশি শীত চাইছিলেন যাঁরা, রবিবার ভোরে সেই তীর্থযাত্রীরা গঙ্গাসাগরে স্নান করলেন হাড়কাঁপানো ঠান্ডা ছাড়াই। আর দিন যত গড়াল, কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় বঙ্গের অন্যান্য প্রান্ত টের পেল, এটা পৌষেরই সংক্রান্তি। শীতল দিন মিলল। কনকনে রাত। পৌষের শেষ দিনেও তুঘলকি খেয়াল দেখাল শীত।
গত কয়েক দিনের তুলনায় রাতের তাপমাত্রা রবিবার সামান্য বেড়েছে। তবে দিনের তাপমাত্রা কমিয়ে সংক্রান্তিতে বাঙালির পৌষ খানিকটা জমিয়ে দেয়। হাওয়া অফিস বলছে, রবিবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে চার ডিগ্রি কম। গত পাঁচ বছরে সংক্রান্তির দিনে এটাই সব থেকে কম। কলকাতায় রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২.৩ ডিগ্রি, স্বাভাবিকের থেকে দু’ডিগ্রি কম। পশ্চিম বর্ধমান, মুর্শিদাবাদে এ দিনও শৈত্যপ্রবাহ চলেছে। আসানসোলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল আট ডিগ্রি, বহরমপুরে ৭.৪। শ্রীনিকেতনে রাতের তাপমাত্রা থিতু হয়েছে আট ডিগ্রিতে। রোদ না-মেলায় দিনের বেলাতেও তাপমাত্রা বাড়তে পারেনি।
সাগরমেলায় কমবেশি শীতের মধ্যেই পুণ্যডুব দিয়েছেন পুণ্যার্থীরা। আমজনতার সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন তাবড় নেতা-মন্ত্রীরাও। জব্বর ঠান্ডা না-পেয়ে পুণ্যার্থীদের অনেকে মুষড়ে পড়েছেন যথেষ্ট কৃচ্ছ্রসাধনের সুযোগ না-পাওয়ায়। প্রশাসন জানাচ্ছে, এটুকু শীত যে হবে, তা আগেই জানা গিয়েছিল। সম্প্রতি সাগরে স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া যন্ত্র বসানো হয়েছে। তাই এই প্রথম আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া গিয়েছে সেখানেও। আবহাওয়া দফতরের এক বিজ্ঞানী বলছেন, পৌষের শেষ দিনে এমন আবহাওয়া নতুন নয়। পৌষসংক্রান্তির এমন মেজাজ ছিল গত বছরেও। ২০১৭-র মকরসংক্রান্তিতে কলকাতায়
রাতের তাপমাত্রা ছিল ১১.২ ডিগ্রি এবং দিনের তাপমাত্রা ২২.১। পৌষের শেষ দিনটা জমিয়ে দিয়েছিল দিনে-রাতের শীত। তার পিছনে ছিল উত্তুরে হাওয়ার আচমকা হানা। এ বার শীতের এমন খেল্ কেন?
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, কিছু দিন আগে উত্তুরে হাওয়ার দাপট ছিল। তাতে তাপমাত্রা অনেকটাই নেমে যায়। কয়েক দিন আগে বাংলাদেশে একটি ঘূর্ণাবর্ত হাজির হয়েছে। তার প্রভাবেই উত্তুরে হাওয়ার পথে বাধা পড়ছে এবং সাগর থেকে জোলো হাওয়া গাঙ্গেয় বঙ্গের পরিমণ্ডলে ঢুকছে। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের কম থাকায় সেই জলীয় বাষ্পই ঘনীভূত হয়ে কুয়াশা এবং বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে হাল্কা মেঘ তৈরি করছে। ফলে দিনের বেলায় রোদের দেখা মিলছে না। তাই তাপমাত্রা বাড়ছে না, উল্টে দিনভর স্যাঁতসেঁতে শীত মালুম হচ্ছে। আবহবিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, দিনের বেলা তাপমাত্রা কম থাকলে এবং আকাশে মেঘ থাকলে রাতের তাপমাত্রা কমে না। আজ, সোমবার কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
কথায় বলে, মাঘে নাকি বাঘা শীত মেলে। কিন্তু আবহাওয়ার খামখেয়ালে এ বার মাঘের পারদ কী বলে, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy