‘এ লড়াই লড়তে হবে!’ ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চে সীতারাম ইয়েচুরি, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও প্রকাশ কারাট। রবিবার দেবাশিস রায়ের তোলা ছবি।
লড়াইয়ের প্রথম ধাপ পেরোলেন! তবে পথ আরও বাকি!
দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পরে সিপিএমের অন্দরে দ্বৈত লড়াই জারি রেখেছেন সীতারাম ইয়েচুরি! প্রথমত, কট্টরপন্থী অবস্থান থেকে বার করে এনে সিপিএমের সঙ্গে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ অন্যান্য শক্তির সেতুবন্ধনের রাস্তা খোলা। আর দ্বিতীয়ত, দলকে তরুণ প্রজন্মের কাছে আকষর্ণীয় করে তোলা।
কলকাতায় ৩৭ বছর পরে সিপিএমের সাংগঠনিক প্লেনামের সূচনায় প্রথম লড়াইয়ে অন্তত খানিকটা এগিয়ে গেলেন ইয়েচুরি! পার্টি কংগ্রেসে গৃহীত কংগ্রেস ও বিজেপি থেকে সমদূরত্বের লাইন ঈষৎ পরিমার্জন করে প্লেনামে বলা হল— রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিচারে ‘নমনীয়’ কৌশল নিয়েই দলকে এগোতে হবে। দায়িত্ব নেওয়া ইস্তক ধারাবাহিক ভাবে এই যুক্তির পক্ষেই সওয়াল করে আসছিলেন ইয়েচুরি। প্লেনাম শুরুর আগে শনিবারও তাঁর গলায় ছিল একই সওয়াল। শেষ পর্যন্ত প্লেনামের রুদ্ধদ্বার কক্ষে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবেও জায়গা করে নিল নমনীয়তার দাবি!
ব্রিগে়ড সমাবেশের পরে রবিবার সন্ধ্যায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে (যার সজ্জা হয়েছে তিতুমীরের ‘বাঁশের কেল্লা’র আদলে) প্লেনামের সাংগঠনিক খসড়া রিপোর্ট পেশ করেছেন প্রকাশ কারাট। বিশাখাপত্তনম পার্টি কংগ্রেসের পর থেকে প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকই এখন সার্বিক ভাবে দলের সংগঠনের দায়িত্বে। সেই সঙ্গেই ৪৩৬ জন প্রতিনিধির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ১২ পাতার একটি সাংগঠনিক প্রস্তাবও। সেই প্রস্তাবের ‘আশু প্রয়োজন’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: যুক্তফ্রন্ট গড়ে তোলার কৌশল কার্যকরী ভাবে কাজে লাগাতে হবে। যৌথ আন্দোলনের মঞ্চ তৈরি করতে হবে, শাসক শ্রেণিভুক্ত দলগুলোর সঙ্গে আছেন, এমন মানুষের কাছেও যেতে হবে। প্রস্তাবের ভাষায়, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দ্রুত যে পরিবর্তন ঘটবে, তার সঙ্গে তাল রাখার জন্যই নমনীয় কৌশল নিতে হবে’।
প্রস্তাবে কোথাও সরাসরি কংগ্রেসের নাম নেই ঠিকই। তবে নমনীয় কৌশলের কথা বলেই ইয়েচুরিরা বাংলায় কংগ্রেসের হাত ধরার রাস্তা পরিষ্কার করছেন বলে সিপিএমের একাংশের ব্যাখ্যা। প্লেনাম শুরুর আগে এ দিন ব্রিগেড সমাবেশ থেকেও যার খানিকটা ইঙ্গিত মিলেছে। যেখানে ইয়েচুরি বা রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র কেউই কংগ্রেসকে কড়া আক্রমণ করেননি। বরং, কংগ্রেস তো বটেই, তৃণমূলের মধ্যেও বীতশ্রদ্ধ, আক্রান্ত মানুষকে বৃহত্তর ঐক্যে সামিল করার কথা বলেছেন। প্লেনামে অবশ্য স্বয়ং ইয়েচুরি আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই সাংগঠনিক প্রস্তাব পেশ করার পরেই তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হবে।
তার আগে ইয়েচুরিকে স্বস্তি দিয়ে ব্রিগেড-মঞ্চ থেকে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর পথেই হেঁটেছেন। বৃন্দা কারাট যেমন বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র বাঁচানোর লড়াই শুধু সিপিএমের একার নয়। এটা সব মানুষের লড়াই। সবাইকে নিয়ে এই লড়াই ল়ড়তে হবে।’’ তেমনই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার কংগ্রেস এবং বিজেপি-র মধ্যে অর্থনৈতিক নীতিতে কোনও ফারাক নেই বলেও সংযোজন করেছেন, ‘‘বামপন্থীদের বৃত্তের বাইরে যাঁরা আছেন, তাঁদেরও কাছে টানতে হবে।’’ এর পরে বিতর্কে ‘বাঁশের কেল্লা’ কেঁপে ওঠার পালা!
এই সংক্রান্ত আরও খবর...
• ভয় ভেঙেই লড়াইয়ের বার্তা নিয়ে ভরল ব্রিগেড
• সূর্যের হুঁশিয়ারি, তারুণ্যে হোঁচট দলেই
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy