—ফাইল চিত্র।
এক ঘেয়ে ঘ্যানঘ্যানে আত্মরতির সেলফি আর মেসেজের ভিড়ে স্ক্রোল করার ফাঁকে চোখটা আটকে গিয়েছিল মেসেজটায়, একটা নিরীহ চেহারার রং মাখা জড়োসড়ো কুকুর। নীচে করুণ আর্তি— ‘আমরা তো তোমাদের মতো স্নান করতে পারি না, রঙের বিষ আমাদের শরীরে ছড়িয়ে থাকে। চেটে পরিষ্কার করাও দুষ্কর। প্লিজ আমাদের রং মাখিও না এ বার। বাঁচাও আমাদের।’
গত বছর, কৃষ্ণনগরের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো, দুধ সাদা কুকুরটাকে লাল, সবুজ, নীল— যে যা পেরেছিল রঙে ভরিয়ে দিয়েছিল। জিভ দিয়ে আর কতটুকু সাফ করা যায়! মাস ঘোরার আগেই সারা গা ঘায়ে ভরে গিয়েছিল তার। দিন কয়েকের মধ্যেই মারা গিয়েছিল কৃষ্ণনগরের আমিনবাজারের অতিচেনা ‘টাইগার’। বহমপুরের ইন্দ্রপ্রস্ত এলাকার ‘লালু’ও রঙের উৎসবের পরে হারিয়ে ফেলেছিল তার পুরনো চেহারা। রঙে চোবানো কুকুরটা মারা গিয়েছিল দিন কয়েকের মধ্যেই।
আরও পড়ুন: প্রত্নসামগ্রীতে জীবন্ত অতীত
নিছক দু’টো উদাহরণ। দোলের পর পাড়ায় এমনই অচেনা হয়ে ওঠা রঙিন কুকুরের সংখ্যা কম নয়।
পশু চিকিৎসক অর্ঘ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘শীতকালেই সাধারনত ছানাপোনা হয় কুকুরের। প্রথম বসন্তে, দোলের সময় তাদের আর কতই বা বয়স! এই সময়ে পারভো নামে এক ভাইরাল অসুখ হয় তাদের। সেটা সামাল দেওয়ার আগেই দোলের রং মেখে ভূত হয়ে থাকে অনেক মা- কিংবা তাদের ছানা।’’ যে রং জিভ দিয়ে চেটে তুলতে গিয়ে পেটে চলে যায় পারা। যা থেকে গায়ে ঘা। মাস ঘুরতেই মারা যায় কুকুরগুলি। বাচ্চাগুলোরও একই দশা হয়। সারমেয় বিশেষজ্ঞ গৌতম চট্ট্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অধিকাংশ রঙেও রাসায়নিক মেশানো থাকে। গা থেকে রং তুলতে গিয়ে অনেক সময়ে তারা দেওয়ালে, রাস্তায় পিঠ ঘষে। সে ঘা সংক্রামক। পরিণতিতে মৃত্যু।’’ অনেক সময়ে কানেও ঢুকে যায় রং। পেকে পুঁজ হয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে মাথায়, ঘাড়ে। মৃত্যু সে ক্ষেত্রেও সময়ের অপেক্ষা মাত্র, জানাচ্ছেন গৌতম। অর্ঘবাবুর আবেদন, দোলের উল্লাস থেকে এই ‘অত্যাচার’টুকু বাদ দিলে হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy