Advertisement
E-Paper

বেনোজল! একটি জেলাতেই ‘আবাস প্লাস’ তালিকা থেকে হয়তো বাদ যেতে চলেছে আড়াই লক্ষ নাম

২০১৭ সালে সমীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি হয় ‘আবাস প্লাস’ তালিকা। এর বছর পাঁচেক আগে, ২০১২ সালে সমীক্ষার পরে প্রকাশিত হয়েছিল আবাস যোজনার ‘পার্মানেন্ট ওয়েটিং লিস্ট’।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৫১
দাসপুরের বিভিন্ন গ্রামে আবাসের তালিকা যাচাই করছেন আশাকর্মীরা। ফাইল চিত্র

দাসপুরের বিভিন্ন গ্রামে আবাসের তালিকা যাচাই করছেন আশাকর্মীরা। ফাইল চিত্র

একেবারে শুরুতে আবাস যোজনার তালিকায় নাম ছিল প্রায় ৫ লক্ষ ৯০ হাজার জনের। গত কয়েক বছরে দফায় দফায় ঝাড়াই-বাছাই করে অনুপযুক্তদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। চলতি যাচাই-পর্বের শুরুতে তালিকায় নাম ছিল প্রায় ৪ লক্ষ ৬৬ হাজার জনের। যাচাই শেষের মুখে। প্রশাসনের একটি অংশের অনুমান, চূড়ান্ত তালিকায় নাম থাকতে পারে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ জনের। অর্থাৎ, সেই শুরু থেকে এ পর্যন্ত তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষ জনের নাম।

ছবিটা পশ্চিম মেদিনীপুরের। তালিকায় এত বেনোজল ছিল? জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘যাঁরা সরকারি প্রকল্পের বাড়ি পাওয়ার যোগ্য নন, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল, তাঁদের নাম চূড়ান্ত তালিকায় থাকবে না।’’ বেনোজল ঠেকাতে কিছু এলাকায় ফের যাচাই হচ্ছে বলেও প্রশাসনের এক সূত্রে খবর। এক বিডিও মানছেন, ‘‘জেলার নির্দেশ মতো কাজ হচ্ছে। যে অঞ্চলে ১৫ শতাংশ বা তার কম নাম বাদ পড়েছে, সেখানে আবার সব যাচাই করে সবদিক দেখে নেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘কোনওভাবেই পাকা বাড়ির মালিকের নাম যেন তালিকায় না থাকে, এটা নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে জেলা।’’

২০১৭ সালে সমীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি হয় ‘আবাস প্লাস’ তালিকা। এর বছর পাঁচেক আগে, ২০১২ সালে সমীক্ষার পরে প্রকাশিত হয়েছিল আবাস যোজনার ‘পার্মানেন্ট ওয়েটিং লিস্ট’। এত দিন সেই তালিকা ধরেই বাড়ি বরাদ্দ হয়েছে। ২০১৭ সালে ফের সমীক্ষা হয়েছিল কারণ, সেই সময়ে নালিশ ওঠে যে, অনেক ‘যোগ্য’ উপভোক্তা তালিকার বাইরে রয়েছেন। সেই সমীক্ষা শেষে তৈরি হয় ‘আবাস প্লাস’ তালিকা। জানা যাচ্ছে, এই জেলার তালিকায় সেই সময়ে ৫ লক্ষ ৯১ হাজার ৯২ জনের নাম ছিল। গত কয়েক বছরে দফায় দফায় যাচাই চলেছে। চলেছে ‘অটো রিজেকশন’ প্রক্রিয়াও। এক দফায় ৮৩ হাজার ৮৬৩ জনের নাম বাদ পড়ে ‘অটো রিজেকশনে’। তালিকায় নাম ছিল ৫ লক্ষ ৭ হাজার ২২৯ জনের। পরের দফায় ফের ৪১ হাজার ০৪০ জনের নাম বাদ পড়ে। নাম থাকে ৪ লক্ষ ৬৬ হাজার ১৮৯ জনের।

রাজ্যের নির্দেশে এ বার এই ৪,৬৬,১৮৯ জনের নামের তালিকা ধরেই যাচাই পর্ব শুরু হয়েছিল। ‘অটো রিজেকশন’ চলতে থাকে। তালিকায় নাম ঠেকে ৪,২৫,৫৮১ জনের। সবদিক দেখে প্রশাসনের একটি অংশের অনুমান, চূড়ান্ত তালিকায় নাম থাকতে পারে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ জনের। ২০১৭ সালের সমীক্ষায় তাহলে ভুলভ্রান্তি ছিল? না হলে এত বেনোজল তালিকায় ঢুকে পড়েছিল কী ভাবে? একাধিক মহলের দাবি, গ্রামাঞ্চলে এই সময়ের মধ্যে অনেকেই আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়েছেন। তারা মনে করাচ্ছে, ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোট হয়েছে। ভোটের পরে অনেকে প্রধান, উপপ্রধান হয়েছেন। এঁদের কেউ কেউ রাতারাতি ফুলেফেঁপেও উঠেছেন। ‘আবাস প্লাসে’র তালিকায় নাম থাকা এক উপপ্রধানের সরল স্বীকারোক্তি, ‘‘আগে আমার মাথার উপর ছাদটুকু ছিল না। এখন পাকাবাড়ি আছে। বাড়িটা বছর দু’য়েক আগে বানিয়েছি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘ওই তালিকা থেকে আমার নাম কেটে দেওয়ার কথা আমি নিজেই প্রশাসনকে জানিয়েছি।’’

বছর পাঁচেক আগে গ্রামস্তরে ওই সমীক্ষায় নিযুক্ত করা হয়েছিল ভিআরপি-দের। এ বার সেখানে নিযুক্ত করা হয়েছে আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, ভিলেজ পুলিশ, পঞ্চায়েত কর্মীদের। এ বার যাচাইয়ে এলাকায় এলাকায় গিয়েছেন জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, বিডিওরাও প্রমুখ। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের আশ্বাস, ‘‘কোনও অনুপযুক্তের নাম তালিকায় যাতে না থাকে, সেটা নিশ্চিত করার সব রকম চেষ্টাই চলছে।’’ ৩১ ডিসেম্বরের আগেই চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হওয়ার কথা।

Pradhan Mantri Aawas Yojna West Midnapore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy